এইডস রোগীর চিকিৎসায় নেই বিশেষায়িত হাসপাতাল
বিশ্ব এইডস দিবস আজ
প্রতীকী ছবি
তবিবুর রহমান
প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:২৮ | আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১১:৪১
দেশে এইচআইভি/এইডসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। রোগীদের মধ্যে আগের তুলনায় চিকিৎসা নেওয়ার প্রবণতাও বেড়েছে। তবে এই রোগের চিকিৎসায় বিশেষায়িত কোনো হাসপাতাল দেশে নেই। একমাত্র রাজধানীর মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে এইডস রোগী ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। নির্ধারিত ৪০ শয্যায় বছরের অধিকাংশ সময় রোগী থাকে। তাই শয্যা না পেয়ে মেঝেতেই চিকিৎসা নিতে হয় অনেককে। অন্য রোগের চিকিৎসা নিতে গিয়েও আক্রান্তরা নানা জটিলতায় পড়েন। অনেকের গুরুতর অস্ত্রোপচারের জন্য অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘদিন। তাই এই রোগের চিকিৎসায় বিশেষায়িত হাসপাতাল গড়ে তোলার পরামর্শ চিকিৎসকদের।
এ পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও আজ ১ ডিসেম্বর এইডস দিবস পালন করা হচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘অধিকার নিশ্চিত হলে, এইচআইভি/এইডস যাবে চলে’। দিবসটি উপলক্ষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, সরকারিভাবে এইডসের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। বেসরকারি পর্যায়ে এই সেবা নেওয়ার সুযোগ নেই। এইডস শনাক্ত করার জন্য সারাদেশে ২৭টি কেন্দ্র রয়েছে। আর চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয় ১২টি কেন্দ্রে। শুধু রাজধানীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এই হাসপাতালে এইডস রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত সিনিয়র কনসালট্যান্ট আরিফুল বাশার বলেন, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে জটিল রোগীদের ভর্তি রেখে সেবা দেওয়া হয়। শয্যা না থাকায় অনেককে ভর্তি নেওয়া সম্ভব হয় না। এ ছাড়া এসব রোগীর চিকিৎসায় যে ধরনের ল্যাব সুবিধা থাকা জরুরি, তা নেই। অনেক সময় এইডস আক্রান্তদের অস্ত্রোপচার ও হার্টের রিং পরানো প্রয়োজন হলেও সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলো চিকিৎসা দিতে চায় না। এ জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল গড়ে তোলা জরুরি।
তিনি আরও বলেন, এইডস রোগীর অধিকাংশ সময় অধিক জ্বর, ডায়রিয়া, মুখে ঘা দেখা দেয়। এসব রোগী পরিচয় গোপন করে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত গর্ভবতীদের অস্ত্রোপচারে প্রসবের ক্ষেত্রেও জটিলতা দেখা যায়। সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় সাধারণ রোগীর সঙ্গে রেখে তাদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না।
সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে গত এক বছরে ২ হাজার ৪৮৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৮৮ জনের এইডস শনাক্ত হয়েছে। এদের ৮৭ জনই সমকামী। গত এক বছরে এই হাসপাতালে ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এইডস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর নতুন করে রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪৩৮ জন। এর মধ্যে ৪২ শতাংশ সমকামী, ২৪ শতাংশ সাধারণ মানুষ ও ১০ শতাংশ রোহিঙ্গা। এ ছাড়া প্রবাসী শ্রমিক, যৌনকর্মী, মাদকসেবী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ রয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে
৪০৬ জন, চট্টগ্রামে ৩২৬, খুলনায় ১৫৪, রাজশাহীতে ১৪৭ এবং অন্যান্য বিভাগে ৪৪-৮৬ জন পর্যন্ত রয়েছেন। এসব রোগীর ৬৩ শতাংশই ২৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী, ২১ শতাংশের বয়স ২০ থেকে ২৪ বছর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এইডস আক্রান্তদের মধ্যে এ বছর ১৯৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ৭৭ শতাংশ, নারী ২২ শতাংশ, হিজড়া ১ শতাংশ।
গত পাঁচ বছরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এইচআইভি সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। এই সময়ে সংক্রমণের হার কমেছে যৌনকর্মী, মাদকসেবী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের মধ্যে। তবে বেড়েছে সমকামী ও প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে। সাধারণ মানুষের বেশির ভাগ আক্রান্ত হচ্ছেন বিদেশফেরত প্রবাসী শ্রমিক দ্বারা।
জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনএইডসের অনুমিত হিসাবে, দেশে এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা ১৪ হাজার। চলতি বছর ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ১২ হাজার ৪২২ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ২ হাজার ২৮১ জন।
সংক্রমিত ব্যক্তির তুলনায় শনাক্তের হার ৮৮ দশমিক ৭২ শতাংশ। সংক্রমিত ৭ হাজার ৫০০ জনকে চিকিৎসার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। এখনও প্রায় ২ হাজার ব্যক্তি চিকিৎসার বাইরে। তাদের ঝুঁকি অনেক বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এইডস/এসটিডি প্রোগ্রামের সিনিয়র ম্যানেজার (ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়) মো. আখতারুজ্জামান সমকালকে বলেন, এইচআইভি সংক্রমিত রোগীর আজীবন ওষুধ খেতে হয়। এই ওষুধ সরকার বিনামূল্য দেয়। বিশেষায়িত হাসপাতাল হলে এক ছাদের মধ্যে এসব রোগের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে।
- বিষয় :
- দিবস আজ