জেলা ও উপজেলায় হবে বিজয় মেলা
বিজয় দিবসের কর্মসূচি চূড়ান্ত
প্রতীকী ছবি
আবু সালেহ রনি
প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০১:০৬ | আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১১:৪৬
দেশের ৫৪তম বিজয় দিবস উদযাপনের লক্ষ্যে দেশজুড়ে ‘বিজয় মেলা’ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামী ১৬ ডিসেম্বর সব জেলা-উপজেলায় স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে এই মেলা বসবে। সেখানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি স্থানীয় জনসাধারণ অংশ নেবেন।
মেলায় চারু-কারুশিল্পের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি ও প্রদর্শনীর ব্যবস্থা থাকবে। আরও থাকছে শিশুদের জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ ছাড়া জাতীয়ভাবে প্রতিবছরে মতো এবারও জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণসহ গণমাধ্যমে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। সিনেমা হল ও জাদুঘরগুলোতেও বিনামূল্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ও স্মারক চিহ্ন প্রদর্শনীর ব্যবস্থা থাকবে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গত ২১ অক্টোবর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বিজয় দিবস উদযাপনের লক্ষ্যে বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীরপ্রতীক দেশের বিশেষ পরিস্থিতিতে কিছু আয়োজন সংক্ষিপ্ত করার পরামর্শ দেন। তবে তিনি বিজয় দিবস উদযাপনে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের জন্য এবার চারু, কারু ও স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত শিল্প পণ্যের প্রদর্শনীর লক্ষ্যে একটি বিজয় মেলা আয়োজনের বিষয়ে প্রস্তাব উত্থাপন করেন। পরে ওই সভার সিদ্ধান্তের আলোকে সম্প্রতি ৮ পৃষ্ঠার একটি কার্যবিবরণী তৈরি করা হয়েছে।
কার্যবিবরণী অনুযায়ী, দেশজুড়ে ‘বিজয় মেলা’ আয়োজনই এবারের বিজয় দিবসের উল্লেখযোগ্য সংযোজন। কার্যবিবরণীর সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, সচিবালয়, ঢাকা সেনানিবাসসহ সব জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে চট্টগ্রামে প্রথম মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্যোগে বিজয় মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এই মেলা আয়োজনের প্রথম আহ্বায়ক ছিলেন বর্তমান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম। পরে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাসীন দলগুলো মেলার আয়োজন করতে থাকে। এবার একই আদলে বিজয় মেলা উদযাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। মেলায় বাঙালি ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন পণ্যের সমারোহ থাকবে। বিদেশি কোনো পণ্য মেলায় যাতে না থাকে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীরপ্রতীক সমকালকে বলেন, বিজয় মেলা আয়োজনের দুটি বিশেষ দিক আছে। প্রথমত, দেশি পণ্যের প্রদর্শনী ও বিক্রি বাড়বে। দ্বিতীয়ত, মানুষের অংশগ্রহণ বাড়বে। বিজয় মেলার চত্বর ১১ সেক্টরে ভাগ করা থাকবে। সেখানে কোনো বিশেষ বক্তৃতা হবে না, কারও কোনো ছবি বা প্রদর্শনীও হবে না। এটি হবে অরাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে। কোনো স্মৃতিচারণ থাকবে না। কারণ, এতে নানা প্রসঙ্গ চলে আসবে। কন্ট্রোভার্সি (বিতর্ক) তৈরি হবে! উপদেষ্টা আরও বলেন, বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তেমন সন্তোষজনক নয়। এ জন্য এবারের মেলা দিনব্যাপী আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে এই মেলার পরিসর পাক্ষিক করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বিজয় দিবস আয়োজনে আরও যা থাকছে
বিজয় দিবস উপলক্ষে গণমাধ্যমে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ ও বিশেষ অনুষ্ঠান হবে। থাকছে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পাশাপাশি আলোকসজ্জাও। বিদেশি দূতাবাসগুলোতেও একইভাবে বিজয় দিবস উদযাপন করা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা এবং জেলা ও উপজেলায় ৩১ বার তোপধ্বনি করবে প্রতিরক্ষা/সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, জননিরপত্তা বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা আলাদা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। চট্টগ্রাম, খুলনা মোংলা ও পায়রা বন্দর, ঢাকার সদরঘাট, নারায়ণগঞ্জের পাগলা, বরিশালসহ বিআইডব্লিউটিসির ঘাটে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সমন্বয়ে এবং চাঁদপুর ও মুন্সীগঞ্জে কোস্টগার্ডের জাহাজে দুপুর ২টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জনসাধারণের দর্শনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও থাকবে বিশেষ ক্রীড়া অনুষ্ঠান ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নৌকাবাইচের আয়োজন। সব হাসপাতাল, কারাগার, শিশু বিকাশ ও ভবঘুরে কেন্দ্রে বিশেষ খাবার সরবরাহ এবং ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতে বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হবে। বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়কগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার জাদুঘর দর্শনার্থীর জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
- বিষয় :
- বিজয় দিবস