ঢাকা বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

এক্সপ্রেসওয়েতে পড়ে ছিল তরুণীর মরদেহ, ৮ গুলির চিহ্ন শরীরে

এক্সপ্রেসওয়েতে পড়ে ছিল তরুণীর মরদেহ, ৮ গুলির চিহ্ন শরীরে

সাহিদা আক্তার। ফাইল ছবি

বিশেষ প্রতিনিধি ও মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০৩:২৭ | আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০৬:৪৪

শরীরে আটটি গুলির দাগসহ মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের এক্সপ্রেসওয়ের সার্ভিস লেনে নিথর পড়ে থাকা তরুণীর নাম সাহিদা আক্তার। ২৪ বছর বয়সী এই তরুণীর বাড়ি ময়মনসিংহ নগরীতে। মা ও ভাইয়ের সঙ্গে রাজধানীর ওয়ারীর ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। 

পুলিশের ধারণা, নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তৌহিদ নামে এক যুবক জড়িত থাকতে পারে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তৌহিদের নামে একাধিক মামলা রয়েছে। 

শ্রীনগর থানা পুলিশ বলছে, গতকাল শনিবার সকালে লাশ উদ্ধারের প্রায় ছয় ঘণ্টা পর তরুণীর কাছে পাওয়া আইফোনের সূত্র ধরে পরিচয় শনাক্ত হয়। শুক্রবার রাতে ওয়ারীর বাসা থেকে বের হন সাহিদা। অনেক দিন ধরে ওয়ারীর একটি বাসায় শিশু দেখাশোনার কাজ করতেন। পরিবারের লোকজনকে সাহিদা বলেছিলেন, যে বাসায় কাজ করেন, শুক্রবার রাতে সেখানেই থাকবেন। 

জ্যাকেট পরিহিত ওই তরুণীর শরীরে আটটি গুলির চিহ্ন রয়েছে। শরীরের সামনের অংশে ছয়টি ও পেছনের দিকে দুটি গুলি করা হয়েছে। ভোর ৫ থেকে ৬টার দিকে তরুণীকে গুলি করা হতে পারে। তাঁর লাশের পাশে মিলেছে গুলির পাঁচটি খোসা। 

সাহিদার পরিবারের তথ্যের বরাত দিয়ে শ্রীনগর থানার ওসি কাইয়ুম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, তৌহিদের সঙ্গে সাহিদার প্রেম ছিল। মাস তিনেক আগেও তারা লঞ্চে চাঁদপুর গেছেন। সেখানে দু’জনের মধ্যে ঝামেলা হয়। সেটি শেষ পর্যন্ত থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়। পরিবারের সদস্যরা ওই যুবকের দিকে আঙুল তোলায় পুলিশ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে।  

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তরুণীর লাশ এক্সপ্রেসওয়েতে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেন স্থানীয়রা। ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছিল না। এর পর আইফোন থেকে সিম কার্ড খুলে পরিবারের সদস্যদের ফোন করলে বিষয়টি খোলাসা হয়। 

স্থানীয়রা জানান, ভোরে ওই তরুণীকে এক যুবকের সঙ্গে মহাসড়কে হাঁটতে দেখা গেছে। এর এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর তরুণীর গুলিবিদ্ধ লাশ মহাসড়কে পড়ে থাকতে দেখতে পান পথচারীরা। তরুণীর সঙ্গে থাকা ওই যুবককে স্থানীয়রা চিনতে পারেননি। তার সঙ্গে আরও কেউ ছিল কিনা, তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউ কেউ পুলিশকে জানান, এক যুবককে শ্রীনগরের সার্ভিস লেনে দৌড়াতে দেখা গেছে। তার পেছনে পেছনে এক তরুণী দৌড়াচ্ছিলেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শ্রীনগর থানার ওসি বলেন, হয়তো ওই যুবকের সঙ্গে তরুণীর কোনো বিষয়ে তর্কাতর্কি হয়। এর পর তরুণী তাকে চাপ দেন। এক পর্যায়ে দৌড়ে পালাতে চেয়েছে যুবক। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে সন্দেহাতীতভাবে কিছু বলা যাবে না।
  
মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) ফিরোজ কবীর বলেন, জড়িতকে গ্রেপ্তার ও হত্যার মোটিভ জানার চেষ্টা চলছে।  

তরুণীর ভাই মো. জসিম জানান, তারা তিন বোন ও দুই ভাই। বছর পাঁচেক আগে সাহিদার বিয়ে হয়েছিল। পরে জানা যায়, তাঁর স্বামী আগেই আরেকটি বিয়ে করেছেন। এর পর বছর না ঘুরতেই সেই বিয়ে ভেঙে যায়। 

সাহিদার মা জরিনা খাতুন বলেন, পাশেই একটি বাড়ির শিশুদের স্কুলে আনা-নেওয়ার কাজ করত সাহিদা। সেই বাড়িতেই রাত্রিযাপন করত। শুক্রবার রাতে সেখানে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়। 

তিনি বলেন, ওয়ারী এলাকার তৌহিদ নামে এক ছেলে আমার মেয়েকে বিরক্ত করত। কিছুদিন আগে সে আমার মেয়েকে চাঁদপুর নিয়ে যায়। সেখানে এলাকাবাসী তাদের আটক করে। আমরা বিয়ে দিতে চাইলেও ছেলেটির পরিবারের লোকজন রাজি হয়নি। উল্টো তৌহিদের মা তাঁর ছেলের সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ের শর্ত হিসেবে ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। এর পর আর বিয়ে এগোয়নি। তৌহিদ আমাদের বাড়িতে এসে আমাকে ও মেয়েকে মারধর করেছে। এর পরও কিছুদিন পরপর আমার মেয়ে তার সঙ্গে বের হয়ে যায়। তৌহিদ আমার মেয়েকে হত্যা করেছে। আমি তার ফাঁসি চাই।

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×