ধর্ষণ প্রমাণে টু ফিঙ্গার টেস্ট এখনও বন্ধ হয়নি
সেমিনারে উপস্থিত অতিথিরা
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২২:৪৩
ধর্ষণ প্রমাণে টু ফিঙ্গার টেস্ট বা টিএফটি নিষিদ্ধ করে রায় দিয়েছেন উচ্চ আদালত। কিন্তু এখনও ধর্ষণ মামলার তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ায় এ টেস্ট ব্যবহৃত হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা, আইন ও এনজিও খাতে যারা কাজ করছেন, তাদের অনেকেই টিএফটি নিষিদ্ধ হওয়া সম্পর্কে সঠিকভাবে জানেন না।
‘ইমপ্লিমেন্টেশন অব দ্য ব্যান অন দি ইউজ অব টু ফিঙ্গার টেস্ট ইন কালেক্টং মেডিকো-লিগ্যাল এভিডেন্স অব রেপ’ শীর্ষক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘ইউনাইট টু এন্ড জেন্ডার বেজড ভায়োলেন্স’ শীর্ষক সেমিনারে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। আইসিডিডিআর,বি (আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ) এ গবেষণা চালায়।
প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআর,বির ম্যাটারনাল অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ ডিভিশনের লিঙ্গ সমতা বিশেষজ্ঞ নাহিদা আক্তার।
তিনি জানান, গবেষণার জন্য ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গত জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের তিন জেলা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। জেলাগুলো হলো– ঢাকা, রংপুর ও দিনাজপুর। ঢাকায় যারা কাজ করছেন তাদের প্রায় সবাই টিএফটি নিষিদ্ধ সম্পর্কে জানলেও প্রত্যন্ত এলাকায় এ নিয়ে ধারণা নেই। ঢাকায় স্থাস্থ্য খাতে কাজ করছেন– এমন আটজনের মধ্যে সাতজনই টিএফটি নিষিদ্ধ সম্পর্কে জানেন। অন্যদিকে রংপুরে ৯ জনের মধ্যে আটজনই এ সম্পর্কে জানেন না। দিনাজপুরে সাতজনের মধ্যে একজনও জানেন না। একইভাবে ঢাকায় আইন খাতে যারা কাজ করছেন, তারা এ সম্পর্কে জানলেও রংপুর ও দিনাজপুরের কেউই টিএফটি নিষিদ্ধ সম্পর্কে অবগত নন। এসব জায়গায় ধর্ষণের শিকার কেউ হাসপাতালে গেলে তার টিএফটি করা হচ্ছে।
বক্তারা জানান, টিএফটি অবৈজ্ঞানিক এবং নারীর মর্যাদা ও গোপনীয়তার পরিপন্থি। এ টেস্টে ভুক্তভোগীর যৌন সহবাসের অতীত অভিজ্ঞতা মূল্যায়ন করা হয়। এটি ধর্ষণের কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ দিতে পারে না। বরং এটি ভুক্তভোগীকে মানসিকভাবে আতঙ্কগ্রস্ত করে ফেলে। অনেকে আত্মহত্যাও করেন।
সিএসও ফোরামের কো-কনভেনর ব্যারিস্টার সারা হোসেনের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভিন হক। তিনি বলেন, ধর্ষণের সংজ্ঞায় সম্মতি না দেওয়ার বিষয়টি থাকতে হবে। নারীকে মানুষ হিসেবে চিনতে হবে, জানতে হবে ও সম্মান করতে হবে।
সারা হোসেন বলেন, আমি রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে দেখেছি স্বাস্থ্যসেবা প্রটোকল অনুসরণ করা হচ্ছে। তাহলে অন্যান্য জেলায় কেন এটা চলছে, তা দেখতে হবে। ধর্ষণের পরীক্ষা থেকে যে ট্রমা হয়, সেটা নিয়ে ভাবতে হবে।
সেমিনারে আরও অংশ নেন কানাডা হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি এডওয়ার্ড ক্যাব্রেরা, আইসিডিডিআর,বির ইমেরিটাস সায়েন্টিস্ট রুচিরা তাবসসুম নাভেদ প্রমুখ। বক্তারা টু ফিঙ্গার টেস্ট পুরোপুরি বন্ধে প্রশাসনকে আরও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানান।
- বিষয় :
- ধর্ষণ
- ধর্ষণ মামলা