সেই মাহমুদুরই হারিছ চৌধুরী
মরদেহ শনাক্তেও প্রয়োজন হলো সরকার পরিবর্তন!
হারিছ চৌধুরী
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০৩:৫৭
বাবার মৃত্যু প্রশ্নবিদ্ধ করতে নাটক হয়েছে। যে মানুষটি আমার বুকে মারা গেছেন, তা নিয়ে সন্দেহ থাকবে; সন্তান হিসেবে ছিল খুব মর্মান্তিক, কষ্টদায়ক। স্বৈরাচারের পতনের কারণেই আদালতের মাধ্যমে সত্য বেরিয়ে এলো।
পরিচয় নিশ্চিত হতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ডিএনএর নমুনা পরীক্ষা নিজের সঙ্গে মেলায় সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন আবুল হারিছ চৌধুরীর মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা তানজীন।
মূলত তিন বছর আগে মাহমুদুর রহমান নামে যে ব্যক্তিকে সাভারের জামিয়া খাতামুন নাবিয়্যিন মাদ্রাসার কবরস্থানে দাফন করা হয়েছিল, তিনিই ছিলেন বিএনপি নেতা আবুল হারিছ চৌধুরী।
গত ৫ সেপ্টেম্বর ব্যারিস্টার সামিরা তানজীনের করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট হারিছ চৌধুরীর পরিচয় নির্ধারণে কবর থেকে লাশ তুলে ডিএনএ পরীক্ষা করার নির্দেশ দেন। হাইকোর্টে দাখিল করা সিআইডির ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘অজ্ঞাত মৃতদেহ, সামিরা তানজীন ওরফে সামিরা তানজীন চৌধুরীর (হারিছ চৌধুরীর) জৈবিক পিতা।’
সিআইডি প্রতিবেদন দাখিলের পর হারিছ চৌধুরীর দেহাবশেষ তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুসারে পছন্দমতো কবরস্থানে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যথাযথ সম্মান দিয়ে দাফনের অনুমতি দিয়েছেন হাইকোর্ট। গতকাল বুধবার বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ফলে পরিবারের পছন্দমতো কবরস্থানে এখন হারিছ চৌধুরীর মরদেহ দাফন করা যাবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মাহদীন চৌধুরী। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, হারিছ চৌধুরীর মেয়ের সঙ্গে ডিএনএ নমুনা মিলেছে। দেহাবশেষ এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে রয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যথাযথ সম্মান দিয়ে তাঁকে পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী দাফন করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।
হারিছের মেয়ে সামিরা তানজীন বলেছেন, আমার বুকে আমার বাবা মারা গেছেন, সে সত্যটা বেরিয়ে এলো। তিনি বলেন, সদ্য বিদায়ী স্বৈরাচারী সরকারের গোয়েন্দা বিভাগ একটা নাটক রচনা করে বাবার মৃত্যুকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। গণমাধ্যম একের পর এক রিপোর্ট করেছে, হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। এটি নিয়ে যেন কখনও প্রশ্ন না ওঠে, এ জন্য রিট করেছি।
সামিরা আরও বলেন, আমার বাবার মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ থাকবে– সন্তান হিসেবে এটি খুব মর্মান্তিক, কষ্টদায়ক। এখনও মানুষ জিজ্ঞেস করে, সত্যিই কি মারা গেছেন! আমাদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। তাই এর শেষ দেখতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। আদালত নিরাশ করেননি।
২০২১ সালে একটি জাতীয় দৈনিক খবর দেয়, ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীকে ‘মাহমুদুর রহমান’ পরিচয়ে ঢাকার সাভারের জালালাবাদ এলাকায় একটি মাদ্রাসার কবরস্থানে দাফন করা হয়। ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয় করোনায়।
- বিষয় :
- মরদেহ