ঢাকা শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫

টিআইবির পুরস্কার বিতরণ ও প্যানেল আলোচনা

নতুন বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনে পূর্বশর্ত মুক্ত গণমাধ্যম

নতুন বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনে পূর্বশর্ত মুক্ত গণমাধ্যম

ছবি: সংগৃহীত

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০৫:২১ | আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০৭:৩৯

জনস্বার্থ, জনকল্যাণকে প্রাধান্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশে সাংবাদিকতার ইতিবাচক সম্ভাবনার প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সুশাসন, ন্যায়বিচার, নির্ভীক মতপ্রকাশ, অবাধ চিন্তা ও বাকস্বাধীনতা নিশ্চিতে অপরিহার্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতা। নজিরবিহীন আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশের অভীষ্ট অর্জনে মুক্ত গণমাধ্যম অন্যতম পূর্বশর্ত।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত এক প্যানেল আলোচনায় এ আহ্বান জানান বক্তারা। অনুষ্ঠানে দুর্নীতিবিরোধী অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার ২০২৪ ঘোষণা এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা কনক্লেভ উপলক্ষে প্যানেল আলোচনা আয়োজন করা হয়। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস (৯ ডিসেম্বর) ২০২৪ উদযাপন শুরু করল টিআইবি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের সঞ্চালনায় ‘নতুন বাংলাদেশ: কেমন গণমাধ্যম চাই?’ শীর্ষক আলোচনার শুরুতে টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের ডেপুটি কোঅর্ডিনেটর মাসুম বিল্লাহ গণমাধ্যম সংস্কারের জন্য টিআইবির সুপারিশ উপস্থাপন করেন।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এটা সত্য যে, গণমাধ্যমের ওপর চাপ এখনও আছে। তবে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো যদি জনস্বার্থ, জনকল্যাণকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করতে না পারে, তাহলে এ পরিস্থিতির পরিবর্তন কখনোই হবে না।

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেন, বিগত সরকারের সময়ে আমরা বরাবর সম্পাদকীয় নীতিমালাকে উপেক্ষিত থাকতে দেখেছি। জনস্বার্থকে বাদ দিয়ে রাজনৈতিক প্রভাবের বশবর্তী যাতে সামনের দিনে গণমাধ্যম না হয়, এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।

নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর বলেন, গণমাধ্যমকে রাজনৈতিক ইতিহাস, সামাজিক ন্যায্যতার হিসেবে সমতা রাখতে হবে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করতে হবে।

প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ‘অপতথ্য-ভুলতথ্য মোকাবিলার দায়িত্ব গণমাধ্যমেরই। সঠিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের প্রবাহ নিশ্চিতের মাধ্যমে আমাদের তা করতে হবে।’

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম বলেন, বিগত সরকারের সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাধান্যের জায়গা হলো গণমাধ্যমের স্বাধীনতা। পরবর্তীতে কোনো রাজনৈতিক সরকার এসে যেন গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় ‘বাংলাদেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা’ শীর্ষক আরেক প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন সিনিয়র সাংবাদিক ও ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ মিশনের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তোজা, দৈনিক গ্রামের কাগজের সম্পাদক মবিনুল ইসলাম মবিন, অনুসন্ধানী সাংবাদিক মোহা. বদরুদ্দোজা এবং সিনিয়র সাংবাদিক কুররাতুল-আইন-তাহমিনা। আলোচকরা বলেন, কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের পরও সেলফ সেন্সরশিপের চর্চা অব্যাহত রয়েছে। তবে আলোচকরা মনে করেন, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পথ কখনোই মসৃণ নয়, প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করেই সঠিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা চালিয়ে যেতে হবে।

দুর্নীতিবিরোধী অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার প্রবর্তনের পর থেকে ২৬ বছরে পুরস্কৃত হওয়া ৮৮ জন সাংবাদিকও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্যানেল আলোচনা শেষে টিআইবির দুর্নীতিবিরোধী অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার ২০২৪ ঘোষণা করা হয়। এ বছর বিভিন্ন ক্যাটেগরিতে ৩ জন সাংবাদিক ও একটি প্রামাণ্য অনুষ্ঠানকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। আঞ্চলিক সংবাদপত্র বিভাগে বিজয়ী হয়েছেন চট্টগ্রামের একুশে পত্রিকা ডটকমের প্রধান প্রতিবেদক শরীফুল ইসলাম (শরীফুল রুকন)। জাতীয় সংবাদপত্র বিভাগে বিজয়ী হয়েছেন ডেইলি স্টারের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জায়মা ইসলাম, টেলিভিশন প্রতিবেদন বিভাগে বিজয়ী হয়েছেন যমুনা টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আল-আমিন হক অহন। টেলিভিশন (প্রামাণ্য অনুষ্ঠান) বিভাগে বিজয়ী হয়েছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের প্রামাণ্য অনুষ্ঠান ‘তালাশ’।

আরও পড়ুন

×