কমিশনের সঙ্গে নোয়াবের মতবিনিময়
অংশীজনের মত নিয়েই গণমাধ্যম সংস্কারের সুপারিশ
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সঙ্গে নোয়াবের মতবিনিময় সভা
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৩:১২ | আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০০:২৪
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেছেন, অংশীজনের সুনির্দিষ্ট মতামতের ভিত্তিতে কমিশন সুপারিশ তৈরি করবে। কোনো স্বার্থান্বেষী দ্বারা কমিশনের প্রভাবিত হওয়ার সুযোগ নেই।
সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) সভাপতি এবং সদস্যদের সঙ্গে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের মতবিনিময়ে তিনি এ কথা বলেন। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীতে এ সভা অনুষ্ঠিত হয় বলে সংস্কার কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
সভায় বিগত আন্দোলনে সংবাদমাধ্যমের ব্যর্থতা ও বিতর্কিত ভূমিকার কারণে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানানো হয়। এর পটভূমিতে সংবাদপত্র, টেলিভিশন, রেডিও ও অনলাইন নিউজপোর্টালের স্বাধীনতার বিষয়ে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে কীভাবে জনগণের স্বার্থে কাজ করা যায়– এ বিষয়ে মতামত দেওয়ার আহ্বান জানান গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান।
তিনি বলেন, কোনো স্বার্থান্বেষী দ্বারা কমিশনের প্রভাবিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অংশীজনের সুনির্দিষ্ট মতামতের ভিত্তিতে কমিশন তার সুপারিশ তৈরি করবে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার স্বায়ত্তশাসন নীতিমালা প্রণয়নেও কমিশন সব মহলের মতামত নেবে।
সভায় নোয়াবের সভাপতি এ. কে. আজাদ বলেন, প্রকাশক হিসেবে আমাদের হুমকি ও ক্ষতির শিকার হতে হয়েছে। করোনার সময় সব শিল্প প্রতিষ্ঠানকে প্রণোদনা দেওয়া হলেও সংবাদপত্রকে দেওয়া হয়নি। কমিশন সম্পাদকদের স্বাধীনতার জন্য সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।
সভায় দ্য ডেইলি স্টারের প্রকাশক মাহফুজ আনাম বলেন, গণমাধ্যমের আইনগত কাঠামো ও পরিবেশ—সবকিছু মিলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পরিবেশ আমাদের নেই।
প্রথম আলো প্রকাশক মতিউর রহমান বলেন, বিশ্বজুড়ে সংবাদপত্র এখন আর সংবাদপত্র নেই। ডিজিটাল মিডিয়ার যুগে ছাপা সংবাদপত্র এমনিতেই রুগ্ণ শিল্পে পরিণত হয়েছে। করোনা মহামারিতে ব্যাপকভাবে সার্কুলেশন ও বিজ্ঞাপন আয় কমে গেছে। বিগত ১৫ বছর ও তার আগের সরকার সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। অতীতের কোনো সরকার সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দিতে পারেনি। সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেননি। বিগত সরকার সংবাদপত্রকে শত্রু হিসেবে দেখেছে।
নিউ এজ প্রকাশক শহিদুল্লাহ খান বলেন, পত্রিকার মিডিয়া তালিকাভুক্তি পদ্ধতি রাখার প্রয়োজন আছে কিনা, সে বিষয়ে ভেবে দেখা দরকার। প্রেস কাউন্সিলকে আধুনিকায়ন করা দরকার এবং এটিকে নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে হবে।
দৈনিক বণিক বার্তার প্রকাশক হানিফ মাহমুদ বলেন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনকে যেন অন্য কোনো স্বার্থান্বেষী পক্ষ ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণে অনেক সম্পাদক এখন মামলার শিকার, পলাতক এবং তাদের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে।
দৈনিক সংবাদের প্রকাশক আলতামাস কবির বলেন, রাজনৈতিক পক্ষপাত থাকলেও স্বাধীন সাংবাদিকতা সম্ভব এবং তা নিশ্চিত করতে হবে।
দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল হেরাল্ডের প্রকাশক মাসরুর রিয়াজ বলেন, সংবাদপত্র প্রকাশ ও অনুমতি দেওয়ার ব্যবস্থাপনায় ক্ষমতার অপপ্রয়োগ হয়েছে, যা ভবিষ্যতে বন্ধ করার সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করা প্রয়োজন।
সভায় কমিশন সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সদস্য অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, শামসুল হক জাহিদ, আখতার হোসেন খান, সৈয়দ আবদাল আহমদ, ফাহিম আহমেদ, জিমি আমির, মোস্তফা সবুজ, টিটু দত্ত গুপ্ত, আব্দুল্লাহ আল মামুন ও কামরুন্নেসা হাসান।