ভারত থেকে ৭৯ জেলে-নাবিককে ফেরাতে কাজ করছে সরকার
ছবি: ভারতীয় কোস্টগার্ডের এক্স পোস্ট থেকে নেওয়া
সমকাল প্রতিবেদক ও চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২২:৩২
সমুদ্রে মাছ ধরা বাংলাদেশী দুটি নৌযানকে আটক করেছে ভারতীয় কোস্টগার্ড। মাথার পিছনে হাত রেখে হাটু গেড়ে বসা জেলে-নাবিকদের ছবি ফেসবুকে বুধবার ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে ৭৯ জেলে-নাবিকসহ নৌযান দুটি উদ্ধারে উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার রাতে সমকালকে নিশ্চিত করেছে, আটক বাংলাদেশীদের ফেরত আনার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করছে।
নাবিক ও কোস্টগার্ড সূত্র জানায়, গত সোমবার মাছ ধরার দুটি ট্রলার বঙ্গোপসাগরে খুলনার হিরণ পয়েন্টে আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমার (মেরিটাইম বাউন্ডারি লাইন বা আইএমবিএল) নিকটবর্তী এলাকায় মাছ ধরছিল। তাদের আটক করে নিয়ে যায় ভারতীয় কোস্টগার্ড। এ তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ভারতের কোস্টগার্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারা মাছ ধরার দুটি ট্রলার আটক করার বিষয়টি নিশ্চিত করে। এরপর বাংলাদেশ কোস্টগার্ড মাছ ধরার ট্রলার ফেরত দেওয়ার অনুরোধ করে। জবাবে ভারতের কোস্টগার্ড জানায়, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নৌযান দুটি হলো, এফভি লায়লা-২ ও এফভি মেঘনা-৫। এফভি লায়লা-২-এর মালিক প্রতিষ্ঠান এস আর ফিশিং। এফভি মেঘনা-৫–এর মালিক প্রতিষ্ঠান সিঅ্যান্ডএ অ্যাগ্রো লিমিটেড।
এদিকে এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে সামুদ্রিক মৎস্য শিকারী জাহাজ শ্রমিক ইউনিয়ন। আটক নাবিকদের দ্রুত ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সরকারসহ মৎস্য ও শ্রম মন্ত্রণালয়কে আহ্বান জানিয়েছেন ইউনিয়নের সভাপতি মো. খোরশেদ আলম ও সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুন্নবী।
জাহাজ এফভি মেঘনা-৫ এর মালিক প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের সিঅ্যান্ডএ অ্যাগ্রোর নির্বাহী পরিচালক সুমন সেন জানান, মাছ ধরার নৌযান দুটি ভারতের উড়িষ্যা এলাকার প্যারাদ্বীপ এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বুধবার সকালে নাবিকদের সঙ্গে স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে কথা হয়েছে।
এ বিষয়ে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম বলেন, কোস্টগার্ডসহ সরকারি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ওই দেশের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করছে। আমরা এ সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় নজরে রেখেছি।
এদিকে নাবিকসহ দুটি নৌযানকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার দুইদিনের মাথায় ভারতীয় কোস্টগার্ডের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে তিনটি ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। এর একটি ছবিতে নাবিকদের একটি ট্রলারের পাটাতনে মাথার পেছনে দুহাত রেখে হাঁটু গেড়ে বসে থাকতে দেখা গেছে।
এফভি-মেঘনা ট্রলারটি গত ২৪ নভেম্বর চট্টগ্রাম থেকে মাছ আহরণের জন্য খুলনায় যায়। সেটি ১৪ ডিসেম্বর ফিরে আসার কথা ছিল। ওই ট্রলারে ৩৭ জন নাবিক আছেন। অন্যদিকে ৪২ জন নাবিক নিয়ে এফভি লায়লা-২ ট্রলারটি চট্টগ্রাম থেকে রওনা করে গত ২৭ নভেম্বর। যা ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ফিরে আসার কথা ছিল।
অন্যদিকে সমকালের কলকাতা প্রতিনিধি জানান, কয়েকদিন আগে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের ৭৯ জন মৎস্যজীবীকে আটক করে রেখেছে বাংলাদেশ। তাদের আইনি সাহায্য দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও তাদের মুক্তি দেয়নি ঢাকা। এই বক্তব্যের সপ্তাহ না পেরোতে ভারতীয় কোস্টগার্ড ৭৯ জন বাংলাদেশিসহ দুটি ট্রলার আটক করল।