ঢাকা সোমবার, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫

বিজয়ের মাস

আমরা তোমাদের ভুলব না

আমরা তোমাদের ভুলব না

প্রতীকী ছবি

অমরেশ রায়

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০০:১৫ | আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০৭:৩৯

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী,/ভয় নাই, ওরে ভয় নাই।/নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ক্ষয় নাই, তার ক্ষয় নাই...।’ ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল পরাক্রমের সামনে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি ঘাতক বাহিনী ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে মেতেছিল। বাঙালিকে মেধা-মননশূন্য করতে তারা বেছে বেছে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, দার্শনিক, চিকিৎসক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, প্রকৌশলী, আইনজীবী ও সংস্কৃতিক্ষেত্রের অগ্রগণ্য সহস্রাধিক বরেণ্যজনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। যাদের অনেকের মরদেহ পরে ঢাকার রায়েরবাজার বধ্যভূমি এবং মিরপুর বধ্যভূমিতে পাওয়া যায়।

৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের প্রাক্কালে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের এভাবে খুন করা হয়। প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে সেই সন্তানদের। এটি বাঙালির কাছে খুবই বেদনাবিধুর দিন। আগে থেকেই তৈরি তালিকায় একে একে উঠে আসে অসংখ্য বুদ্ধিদীপ্ত সাহসী মানুষের নাম। তালিকা তুলে দেওয়া হয়েছিল কুখ্যাত আলবদর ও আলশামস বাহিনীর হাতে। নেপথ্যে ছিল পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা রাও ফরমান আলী। মূলত ১০ ডিসেম্বর থেকেই রাতের আঁধারে তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের বাসা থেকে চোখ বেঁধে রায়েরবাজার এবং মিরপুর বধ্যভূমিতে নিয়ে গুলি ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা শুরু হয়।

কতজন বুদ্ধিজীবীর প্রাণ কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, এর সঠিক পরিসংখ্যান আজও নেই। বরেণ্য সেই মানুষগুলোকে হারিয়ে অনেক ক্ষতি হয়েছে জাতির। তাদের একজন অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী। বিখ্যাত ‘কবর’ নাটকের রচয়িতা মুনীর চৌধুরীকে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী আলবদর অপহরণ করে। সম্ভবত ওই দিনই তাঁকে হত্যা করে। মননশীল প্রবন্ধকার, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষক, শিক্ষাবিদ ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের শেষলগ্নে পাকিস্তান সেনাবাহিনী, রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের নীলনকশার অংশ হিসেবে তাঁকে অপহরণ ও পরে হত্যা করা হয়।

সাংবাদিক সেলিনা পারভীন তখন বাস করতেন রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে। ১৩ ডিসেম্বর স্বাধীনতার শত্রুরা সেখান থেকে তাঁকে ধরে নিয়ে হত্যা করে। অধ্যাপক গোবিন্দচন্দ্র দেব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনবিদ্যার শিক্ষক ছিলেন। পাকিস্তানি সৈন্যরা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই দার্শনিককে হত্যা করে।

জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা ছিলেন ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের খ্যাতনামা অধ্যাপক। পাকিস্তানি সৈন্যরা তাদের পরাজয়ের একেবারে চূড়ান্ত মুহূর্তে এ দেশি দোসরদের সাহায্যে তাঁকে বধ্যভূমিতে নিয়ে হত্যা করে। ১০ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী এবং আলবদর ও রাজাকার সদস্যরা সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে রাজধানীর চামেলীবাগের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। এর পর তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বাঙালি জাতির দীর্ঘ মুক্তিসংগ্রামে বুদ্ধিজীবীরা মেধা, মনন ও লেখনীর মাধ্যমে স্বাধীনতার সংগঠকদের প্রেরণা জুগিয়েছেন। দেখিয়েছেন মুক্তির পথ। গোটা জাতিকেও উদ্দীপ্ত করেছেন অধিকার আদায়ের সংগ্রামে। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, মুক্তিযুদ্ধ ও এর ইতিহাস থাকবে, ততদিন শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতি উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। আমরা তোমাদের ভুলব না।

আরও পড়ুন

×