ঢাকা সোমবার, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫

হেঁটে টেকনাফ- তেঁতুলিয়া

রেখার স্বপ্নের পথরেখা

রেখার স্বপ্নের পথরেখা

জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে তাহুরা সুলতানা রেখা। শুক্রবার সকালে -সমকাল

 রমাপ্রসাদ বাবু

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০০:৩০ | আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০১:১৪

অগ্রহায়ণের শীতের সকাল। তখনও রাজধানীবাসী অনেকের হয়তো ঘুম ভাঙেনি। কুয়াশা ভেদ করে পুবাকাশে উঁকি মারছে সূর্য। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে সংসদ ভবনের সামনে দিয়ে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে হনহন করে ছুটে চলেছেন এক স্বপ্নবাজ নারী। এমন সময় তাঁর সঙ্গে হঠাৎ দেখা। তিনি তাহুরা সুলতানা রেখা। টেকনাফ থেকে হেঁটে তেঁতুলিয়ায় হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিতে ছুটছেন স্বপ্নের গন্তব্যে। দেশকে দেখা এবং মানুষকে হাঁটতে উদ্বুদ্ধ করতেই তাঁর এই বন্ধুর পথযাত্রা।

গত ২৯ নভেম্বর ভোর ৬টায় কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের জিরো পয়েন্ট থেকে যাত্রা শুরু করেন রেখা। বৃহস্পতিবার সকালে কুমিল্লার দাউদকান্দির গোমতী সেতু থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। ১৪ দিনের মাথায় রাজধানীতে পৌঁছেন। রাতে সায়েদাবাদ বাস স্টেশনের পাশে রেললাইনে এসে রাতের যাত্রাবিরতি দেন। ইস্কাটনে রাতযাপন করেন বন্ধুর বাসায়। গতকাল শুক্রবার ঢাকা থেকে রওনা হয়েছেন মানিকগঞ্জের পথে। সন্ধ্যা নামায় থামতে হয় আশুলিয়ায়। আজ ভোরে রওনা হবেন লক্ষ্যের দিকে আরও এগিয়ে যেতে।

যাত্রাপথে তাহুরা সুলতানা রেখা গতকাল সমকালকে বলেন, আমি পৃথিবীটা দেখতে চাই। তার আগে দেখতে চাই নিজের দেশটা। আমার ইচ্ছা, ২৫ দিনে হেঁটে তেঁতুলিয়ায় যাব। ছোটবেলা থেকেই ঘুরতে ভালো লাগে। যে কোনো রোমাঞ্চকর ভ্রমণ আমাকে টানে। এ কারণেই হেঁটে দেশ ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নিই। আমি এই চ্যালেঞ্জে জিততে চাই।
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারা ইউনিয়নের গন্ডামারা বড়গোনা গ্রামের রশিদ আহমেদ ও তৈয়বা খাতুন দম্পতির চার ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট। রেখা চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন।

রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে সংসদ ভবনের সামনে রেখার সঙ্গে এভারেস্ট জয়ী নিশাত মজুমদারসহ অন্যরা

পাশাপাশি অব্যাহত রেখেছেন তাঁর দেশ-বিদেশ ভ্রমণ ও পাহাড়ে আরোহণ। দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গের মধ্যে অন্যতম তাজিংডং, সাকা হাফং, কেওক্রাডংসহ অসংখ্য পাহাড়ের চূড়া দাপিয়ে বেড়িয়েছেন নানা সময়ে। গিয়েছেন ভারত ও নেপালের পাহাড়েও। এভাবে পাহাড় ট্র্যাকিং করতে গিয়ে পরিচয় ঘটে বাংলাদেশের প্রথম নারী এভারেস্ট জয়ী নিশাত মজুমদার ও অনেকের সঙ্গে। ২০২৩ সালে এই এভারেস্ট বিজয়ীর ‘ট্র্যাক উইথ নিশাত’ ইভেন্টে চ্যাম্পিয়ন হন রেখা। এর অংশ হিসেবে এক বছর নিশাতের সঙ্গে নানা রোমাঞ্চকর ভ্রমণে সঙ্গী হয়েছেন। এ ছাড়া তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন কর্মযজ্ঞে অংশ নেন।
পথে চলতে নানা প্রতিবন্ধকতার কথা জানিয়ে ২৫ বছরের এ তরুণী বলেন, হাঁটতে গিয়ে অনেকের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। অনেকে কটু কথা ও তিরস্কার করছেন। তবে বেশির ভাগ মানুষই আমার এ ইচ্ছাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা হাঁটতে হাঁটতে অনেক পথ এগিয়ে দিয়েছেন। 

‘প্রমোট পজিটিভিটি অ্যান্ড ওয়াক ফর হেলদি লাইফ’ নিজের বানানো এ স্লোগানকে সামনে রেখে রেখা বলেন, নারীসহ সাধারণ মানুষকে হাঁটতে উৎসাহিত করি। যে পথ আমরা পাঁচ মিনিটে হেঁটে যেতে পারি, কিন্তু তার জন্য ১০-২০ মিনিট গাড়ির জন্য অপেক্ষা করি। আমরা ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করলে মানসিকভাবেও ভালো থাকব।
পথের ক্লান্তি ভুলে লক্ষ্যে স্থির থাকতে চান এ স্বপ্নবাজ নারী। বলেন, দীর্ঘ পথে কখনও অসুস্থতাবোধ, পায়ে ফোসকা পড়ে ও ক্লান্তি লাগে। ফলে আগে থেকেই শারীরিক ফিটনেস বাড়াতে ভিটামিন ও কিছু ওষুধ খেতে হয়। চলার পরিকল্পনাও বদল করতে হয়। 

তিনি জানান, চট্টগ্রাম নগরীর আন্দরকিল্লায় বন্ধুদের নিয়ে একটি ক্রীড়াসামগ্রীর দোকান দিয়েছেন। রয়েছে একটি ট্রাভেল এজেন্সি। এগুলোর আয় দিয়েই ভ্রমণ করেন।
গতকাল তাঁকে উৎসাহ দিতে সংসদ ভবন এলাকায় আসে পর্বতারোহী, ট্রাভেলার, সাইক্লিস্টসহ ১০-১৫ জনের একটি দল। তাদের মধ্যে ছিলেন এভারেস্ট জয়ী নিশাত মজুমদার। রেখার এই চ্যালেঞ্জকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, একটা মেয়ে টেকনাফ থেকে একা একা হেঁটে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়া অতটা সহজ নয়। তাঁকে পথ চলতে নানা প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে হচ্ছে। ছোট থেকে বড়– সব শ্রেণির মানুষই তাঁকে অবজ্ঞা করে কথা বলেছে। নারী হিসেবে এই চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করে এগিয়ে যাওয়া মানসিকভাবে ভীষণ কঠিন। আমি বিশ্বাস করি, সে পারবে। মেয়েদের জন্য সে উদাহরণ হয়ে থাকবে।

 

আরও পড়ুন

×