বড় সংগঠনের বঞ্চিতরাও পাবেন শিক্ষার্থীদের দলের মনোনয়ন

.
যোবায়ের আহমদ
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ | ০০:১৬
নতুন নামে রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের লক্ষ্যে কাজ করছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। সারাদেশে প্রতিনিধি কমিটি গঠন করছে তারা। আগামী ফেব্রুয়ারিতে বড় সমাবেশের মাধ্যমে দেওয়া হতে পারে দলের ঘোষণা। আইনজীবী, ব্যবসায়ী, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন অঙ্গনে ইউনিট থাকবে দলের।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের লক্ষ্যে ৫৬ সদস্য নিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। দুই দফায় বর্ধিত করে বর্তমানে নাগরিক কমিটির সদস্য ১৪৭ জন। দল ঘোষণার আগে আগামী জানুয়ারির মধ্যে জেলা-উপজেলা ও থানা পর্যায়ে প্রতিনিধি কমিটি গঠন করতে চান তারা। থানা পর্যায়ে কমিটি ঘোষণার পর ফেব্রুয়ারিতে আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে নতুন নামে রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের চিন্তা রয়েছে তাদের।
নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, তারা চান দল যেন বিশাল আয়োজনের মধ্য দিয়ে গঠিত হয়। দলের নাম এখনও ঠিক করা হয়নি। ফেব্রুয়ারি একটা ভালো সময়। এ সময় দল ঘোষণার লক্ষ্য তাদের আছে। ইতোমধ্যে শতাধিক কমিটি হয়েছে।
নাগরিক কমিটির সদস্যদের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ইতোপূর্বে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনে ও ছাত্র সংসদে দায়িত্ব পালনকারীরা যেমন স্থান পেয়েছেন, তেমনি তরুণ কর্মী ও লেখকরা উল্লেখযোগ্যভাবে স্থান পেয়েছেন। এর মধ্যে আগে সংগঠনে নেতৃত্ব দিয়ে আসা তরুণরা নিজ নিজ এলাকায় শহীদ পরিবার, শিক্ষার্থী ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। এরপর যাচাই-বাছাই করে প্রতিনিধি কমিটি গঠন করা হচ্ছে। জানা গেছে, বর্তমানে নাগরিক কমিটির আইনজীবী ইউনিট ও প্রকৌশলী ইউনিট রয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী, প্রবাসী, সংস্কৃতিসেবীসহ বিভিন্ন অঙ্গনে কমিটি করার কাজ চলছে।
সামান্তা শারমিনের মতে, নতুন বাংলাদেশ গড়ায় পেশাজীবীদেরও সংযুক্ত করার প্রয়োজন রয়েছে। অতীতে পেশাজীবী সংগঠনগুলোকে রাজনৈতিক দলগুলো ব্যবহার করেছে। আমরা ভিন্নভাবে চেষ্টা করছি। পেশাজীবীদের বড় অংশ অভ্যুত্থানের সময় মাঠে ছিল। দেশ নিয়ে তাদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী কাজের সুযোগ করে দেওয়া উচিত।
বড় দলগুলোর বঞ্চিত-বিদ্রোহী নেতা, বিভিন্ন কমিউনিটির নেতাদের কাছেও তারা যাচ্ছেন। নির্বাচনে স্থানীয় এমন নেতাদের মনোনয়ন তারা দেবেন। বিভিন্ন দলের বিদ্রোহী ও বঞ্চিত নেতাদের যেমন তারা তালিকায় রেখেছেন, তেমনি বড় দলগুলোর নেতাদের সন্তানদের নিজেদের দলে অন্তর্ভুক্ত করার প্রচেষ্টা তারা চালাবেন। এ ছাড়া বিভিন্ন দলের তরুণ উদীয়মান নেতাদেরও নতুন দলে নেওয়ার চেষ্টা করবেন তারা।
নির্বাচনের সময় নাগরিক কমিটি বা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে ঢালাওভাবে মনোনয়ন না দিয়ে যারা জাতীয়ভাবে পরিচিত মুখ অথবা সাংগঠনিকভাবে তৎপর– এমন নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন বলে জানা গেছে।
নাগরিক কমিটির পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সারাদেশে কমিটি করছে। প্ল্যাটফর্মটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নাগরিক কমিটি থেকে নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা আসার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নাগরিক কমিটির সঙ্গে একীভূত করার কথা ভাবা হচ্ছে। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামেই এটি থাকবে, নাকি অন্য নামে নাগরিক কমিটির সঙ্গে যুক্ত হবে– সেটি চূড়ান্ত হয়নি। আরও দীর্ঘ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম রাখার পক্ষে সবাই।
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, এটি গণঅভ্যুত্থানের একটি ঐক্যের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে থাকবে। এটি নাগরিক কমিটির সঙ্গে একীভূত হবে না। এখান থেকে কেউ বের হয়ে নাগরিক কমিটিতে যেতে পারে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে থাকায় আপাতত শিক্ষার্থীদের ইউনিট নিয়ে ভাবছে না নাগরিক কমিটি। ছাত্র সংগঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে সামান্তা শারমিন সমকালকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শিক্ষার্থীদের তাদের মতো করে সংগঠিত করছে। নাগরিক কমিটি শিক্ষার্থীদের ইউনিট নিয়ে এখনই সেভাবে ভাবছে না। লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি বা শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করার সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। ছাত্র সংগঠনের রূপরেখা কেমন হতে পারে, ছাত্র সংগঠন স্বতন্ত্র হবে কিনা তা নিয়ে আলাপ হচ্ছে।
- বিষয় :
- মনোনয়ন