মামলা, আসামি গ্রেপ্তার, ‘বাদী’ জানে না কিছুই
শেখ হাসিনাসহ ৬২ জনের বিরুদ্ধে মামলা
শেখ হাসিনা
ইন্দ্রজিৎ সরকার
প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২৫ | ০৭:২৮ | আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৫ | ০৭:৫৪
আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর গুলি ছুড়ে ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৬২ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। তাতে ‘অজ্ঞাতনামা’ হিসেবে আসামি করা হয়েছে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের আরও ২৫০-৩০০ নেতাকর্মীকে।
রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় করা এ মামলায় বাদী হিসেবে নাজির আহম্মেদ নামে এক যুবকের নাম থাকলেও তিনি ঘটনার ব্যাপারে কিছুই জানেন না। তিনি কোনো মামলাও করেননি।
এদিকে ভুক্তভোগীও বাদীকে চেনেন না বলে জানিয়েছেন। অথচ এ মামলার একাধিক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আবার একই ঘটনায় একই থানায় আরেকটি মামলা হয়েছে। এ বিষয়ে হাতিরঝিল থানার ওসি মোহাম্মদ রাজু সমকালকে বলেন, কীভাবে মামলাটি হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর পর এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ২৪ আগস্ট করা মামলার এজাহারে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার’ বলে সম্বোধন করলে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করে। এরই ধারাবাহিকতা ও চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে ৪ আগস্ট দেশব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি দেওয়া হয়। এর সমর্থনে আমরা বাংলামটরের কনকর্ড টাওয়ার থেকে সিঙ্গার শোরুম পর্যন্ত অবস্থান নিই। বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের লোকজন সংহতি প্রকাশ করে আমাদের কর্মসূচিতে অংশ নেয়।
সেদিন আনুমানিক দুপুর ১২টার দিকে সাবেক এমপি নিক্সন চৌধুরী, নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৈমুর রেজা খোকন, ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সৈয়দ মিজানুর রহমান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী রেজোয়ানুল হক রোমান আগ্নেয়াস্ত্রসহ ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে দিতে আমাদের ঘিরে ফেলে। তাদের সঙ্গে মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ছিল মামলার ১০ থেকে ৬২ নম্বর আসামিসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের অজ্ঞাতপরিচয় ২৫০-৩০০ নেতাকর্মী। তারা আমাদের খুন-জখম করে লাশ গুমের হুমকি দেয়।
আমরা তাতে ভয় না পেলে তারা শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে জয় বাংলা স্লোগান দেওয়া শুরু করে। এক পর্যায়ে আগ্নেয়াস্ত্রধারীরা এলোপাতাড়ি গুলি চালায় এবং অজ্ঞাতনামা আসামিরা ইটপাটকেল ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত অন্য আসামিরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আমাদের আঘাত করে। এতে অনেকে গুরুতর জখম হয়। তাদের গুলি ও মারধরে টিকতে না পেরে আমরা রাস্তা থেকে সরে যাই। চিকিৎসার জন্য স্থানীয় ওষুধের দোকান ও হাসপাতালে যাওয়ার চেষ্টা করলেও তারা বাধা দেয়। আসামিদের এলোপাতাড়ি গুলি ও মারধরে আকবর হোসেন, মনির হোসেন, রোমানসহ অনেক নিরস্ত্র ছাত্র-জনতা আহত হন।
বাদী-ভুক্তভোগী কেউ কাউকে চেনেন না
মামলার কথিত বাদী নাজির আহম্মেদ বলেন, আমি ঢাকা মহানগর উত্তরের ২৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সদস্য। ৫ আগস্টের পর থেকে আমি আত্মগোপনে রয়েছি। এই পরিস্থিতিতে আমার মামলা করতে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তা ছাড়া মামলার আসামি সবাই আওয়ামী লীগ-যুবলীগের নেতাকর্মী। আমি কেন নিজ দলের লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা করব? পরে বিভিন্ন সূত্রে এ মামলার কথা জানতে পারি। এ নিয়ে কথা বলার জন্য আমার বাবা মুনসুর আহমেদ হাতিরঝিল থানায় গিয়েছিলেন। কিন্তু ওই সময় তিনি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, ওসি বা দায়িত্বশীল কাউকে পাননি।
মামলায় বর্ণিত ঘটনার ভুক্তভোগী আলী আকবর গাজী (একটি মামলায় তাঁর নাম আকবর হোসেন লেখা হয়েছে) জানান, আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় তাঁর স্ত্রী ফাতেমা আক্তার বৃষ্টি বাদী হয়ে ৩০ আগস্ট হাতিরঝিল থানায় মামলা করেছেন। এর বাইরে আর কোনো মামলার তথ্য তাঁর জানা নেই। অপর মামলার বাদী নাজির আহম্মেদকে তিনি চেনেন না।
দুই মামলায় সময়-স্থানের গরমিল
ফাতেমা আক্তার বৃষ্টির করা মামলার বর্ণনা অনুযায়ী, তাঁর স্বামী ৪ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টার দিকে সোনারগাঁও ক্রসিং এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন। তবে ভুক্তভোগী নিজে দাবি করেন, দুপুর দেড়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আবার অপর মামলাটির (কথিত বাদী নাজির আহম্মেদ) এজাহারে একই দিনে দুপুর ১২টার দিকে বাংলামটর মোড় এলাকায় তাঁর আহত হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এদিকে ভুক্তভোগীর স্ত্রীর করা মামলায় উল্লেখ রয়েছে, ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি আনোয়ার হোসেনের গুলিতে আলী আকবর গাজী আহত হন। তবে মামলার ৩০০-৪০০ আসামির মধ্যে তিনি আলাদা করে তাকে চিনতে পেরেছিলেন কিনা? জানতে চাইলে ভুক্তভোগী বলেন, আমার স্ত্রী তো সবাইকে চেনেন না। তবে প্রশাসনের লোকজনই আসামিদের নাম দিয়েছেন।
- বিষয় :
- শেখ হাসিনা
- মামলা