ঢাকা রবিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫

নতুন বছরে সরকারের তিন লক্ষ্য

গণহত্যার বিচার, নির্বাচনের রোডম্যাপ ও সংস্কারে মতৈক্য

গণহত্যার বিচার, নির্বাচনের রোডম্যাপ ও সংস্কারে মতৈক্য

প্রতীকী ছবি

 বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২৫ | ০৭:৪৫ | আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৫ | ০৯:১৭

নতুন বছরে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান তিনটি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এগুলো হলো– জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত, সংস্কার নিশ্চিতে রাজনৈতিক মতৈক্য গড়ে তোলা ও রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্বাচন করা।

গতকাল বুধবার উপদেষ্টা পরিষদের সভা শেষে সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

সভা শেষে সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, নতুন বছরে সরকার প্রধান তিনটি লক্ষ্যের কথা জানিয়েছে। এগুলো হলো– জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত, রাজনৈতিক মতৈক্য গড়ে তুলে প্রস্তাবিত সংস্কার নিশ্চিত ও রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্বাচন করা। সাধারণ কর্মকাণ্ড, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখাও সরকারের লক্ষ্য বলে জানান তিনি।

সভায় সারাদেশের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে গৃহীত পদক্ষেপ এবং করণীয় নির্ধারণে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ কারিগরি পর্যায়ে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বাস্তবায়ন বিষয়ে আলোচনা হয়। বিশেষ করে ইটভাটাকেন্দ্রিক বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অর্থ বিভাগ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণে বিশদ আলোচনা হয়। একই সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এয়ার পিউরিফায়ারের বিদ্যমান শুল্ক হ্রাস করে এটির ব্যবহার সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা হয়।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানায়, উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের আলোকে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা হয়। এতে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ সরকারি কর্মসম্পাদনে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে স্বচ্ছতা-জবাবদিহি নিশ্চিতে বিদ্যমান এপিএ কাঠামো পুনর্গঠনের উদ্দেশ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের বিস্তারিত পর্যালোচনাপূর্বক মতামতসহ প্রতিবেদন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এ ছাড়া ‘দ্য এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট সংশোধন আইন’ উত্থাপন করা হয় সভায়। কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনসহ কর-জিডিপির অনুপাত বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিমান টিকিটের আবগারি শুল্ক যৌক্তিকীকরণের উদ্দেশে লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের ভেটিং সাপেক্ষে কিছু সংশোধন সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

এর বাইরে ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধনী) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়ার নীতিগত এবং চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবে বলা হয়, অব্যাহতির সংস্কৃতি পরিহার করে ভ্যাটের আওতা বৃদ্ধি, হ্রাসকৃত হার ক্রমান্বয়ে সংকোচন করে আদর্শ হারে উন্নীত, কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনসহ কর-জিডিপির অনুপাত বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২’-এ কিছু সংশোধনী এনে ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধনী) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের ভেটিং সাপেক্ষে উপদেষ্টা পরিষদ চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়।

সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, যে কোনো অভ্যুত্থানের পর ঘোষণাপত্র স্বাভাবিক। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণাপত্র তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। ছাত্ররাও চাচ্ছে সবার ঐকমত্য। আগামী ১৪ দিনের মধ্যে এটি দেওয়া অসম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সংস্কারের বিষয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, ‘বিএনপি বলেছে সংস্কারের প্রয়োজন আছে, লিখিত মত দিচ্ছে তারা। তবে কতটা ব্যাপক হবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। কেউ বলছে মৌলিক সংস্কার আগে, কেউ বলছে নির্বাচন। কিন্তু সরকারের কাছে সবই গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি বলেন, ‘কোনো দল নির্বাচন করবে কী করবে না, তা নির্বাচন কমিশন বলতে পারে। সরকার আওয়ামী লীগ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। সরকারের অবস্থান হচ্ছে, শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বিচার করা।’

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘সচিবালয়ে বিশেষজ্ঞরা বুধবার দেখিয়েছেন কীভাবে আগুন লেগেছিল। ৭ নম্বর ভবনে আগুনের বিষয়ে সবকিছু নিশ্চিত হতে আলামত বিদেশে পাঠানো হচ্ছে।’ তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে সরকার সন্তুষ্ট জানিয়ে তিনি বলেন, ‘উদ্বেগের বিষয় ছিল, এখানে আমরাই অফিস করি। কিন্তু যেভাবে তদন্ত হয়েছে, তাতে ভরসা না করার কারণ নেই।’ এর পরও এটি যে দুর্ঘটনা, তা শতভাগ নিশ্চিত হতে কিছু নমুনা বিদেশে পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

এটি দুর্ঘটনা হলে আলামত বিদেশে পাঠানো হচ্ছে কেন– প্রশ্নে সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, ‘আপনি যে প্রশ্ন করলেন, এ প্রশ্নের সন্দেহাতীত জবাবের জন্য কিছু নমুনা বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। একটি জিনিস খেয়াল করতে হবে, যে কোনো ঘটনার পর আমরা কতগুলো দৃষ্টিবোধ, কতগুলো মতামত ও কতগুলো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। তারপর ভিন্ন কোনো কথা শুনলে ওটা আর মানতে চাই না।’

তিনি বলেন, ‘আজ যারা বিশেষজ্ঞ ছিলেন, তারা আমাদের ক্লোজআপে দেখিয়েছেন কীভাবে আগুনের সূত্রপাত এবং সচিবালয় ভবনগুলোর নির্মাণের কারণে কীভাবে এটি একটি অবস্থান থেকে আরেকটি অবস্থানে ছড়িয়েছে। যে কুকুরের কথা বলা হয়েছে, সেটি আগেও ওই ফ্লোরে গেছে। সে স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে একটি চেয়ারের ওপর কুশনে ঘুমাত।’

তিনি আরও বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আমরা বায়াসড হয়ে কমিটি করিনি। আমরা বুয়েটকে বলেছি, আপনারা তিনজন বিশেষজ্ঞ দিন। বুয়েট নিরপেক্ষভাবে দিয়েছে। এর পর আরও আটজন বিশেষজ্ঞ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাই ভরসা না করার কোনো কারণ আছে বলে আমরা মনে করি না।’

আরও পড়ুন

×