সড়কে এক বছরে নিহত সাড়ে ৮ হাজার, সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি মোটরসাইকেলে
যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে যাত্রী কল্যাণ সমিতির সংবাদ সম্মেলন
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ | ১২:৫৬ | আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ | ১৪:৫২
সড়কে ২০২৪ সালে সবচেয়ে প্রাণহানি হয়েছে মোটরসাইকেলে। ২ হাজার ৩২৯ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৫৭০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩ হাজার ১৫১ জন। সড়কপথে ৬ হাজার ৩৫৯ দুর্ঘটনায় মোট নিহত হয়েছেন ৮ হাজার ৫৪৩ জন। আহত হয়েছেন ১২ হাজার ৬০৮ জন। শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে যাত্রী কল্যাণ সমিতি ‘২০২৪ সালের সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদন প্রকাশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। ২০২৩ সালে ৬ হাজার ২৬১টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন ৭ হাজার ৯০২ জন। এ হিসেবে বিগত বছরে সড়কে প্রাণহানি বেড়েছে ৮ শতাংশের বেশি।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘সড়ক, রেল ও নৌ-পথে ৬ হাজার ৯৭৪ দুর্ঘটনায় ৯ হাজার ২৩৭ জন নিহত এবং ১৩ হাজার ১৯০ জন আহত হয়েছেন। ২০২৩ সালে সড়ক, রেল ও নৌপথে দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ৫০৫ জনের প্রাণ গিয়েছিল।’ প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে রেলপথে ৪৯৭ দুর্ঘটনায় ৫১২ জন নিহত এবং ৩১৫ জন আহত হয়েছে। নৌ-পথে ১১৮টি দুর্ঘটনায় ১৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত ২৬৭ জন। ১৫৫ জন নিখোঁজ রয়েছে।এতে জানানো হয়, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে সড়কে দুর্ঘটনা ১.৫৪ শতাংশ, নিহত ৭.৫০ শতাংশ এবং আহত ১৭.৭৩ শতাংশ বেড়েছে।
প্রতিবেদনে আরও তুলে ধরা হয়, এ বছর ২৩২৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২৫৭০ জন নিহত ও ৩১৫১ জন আহত হয়েছে। যা মোট দুর্ঘটনার ৩৬.৬২ শতাংশ, নিহতের ৩০.০৮ শতাংশ ও আহতের ২৪.৯৯ শতাংশ। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৬৯৭৪টি দুর্ঘটনায় ৯২৩৭ জন নিহত এবং ১৩১৯০ জন আহত হয়েছে।
প্রতিবেদনে গত বছরের সংগঠিত দুর্ঘটনায় সর্বমোট ৯৭১৭টি যানবাহনের পরিচয় তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে ১৩.৪৫ শতাংশ বাস, ২৩.৩৩ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ৬.২১ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস, ৫.৫৭ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ২৭.৪৮ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৬.৫৬ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৭.৩৭ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দুর্ঘটনা ভয়াবহ বাড়লেও এসব সংবাদ গণমাধ্যমে কম আসছে বলে প্রকৃত চিত্র তুলে আনা যাচ্ছে না।
সড়ক দুর্ঘটনার ২২ কারণ: যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে, সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ২২টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বেপরোয়া গতি, বিপদজনক অভারটেকিং, সড়কের নির্মাণ ত্রুটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, চালক, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা ও ট্রাফিক আইন সংক্রান্ত অজ্ঞতা, পরিবহন চালক ও মালিকের বেপরোয়া মনোভাব, অরক্ষিত রেলক্রসিং, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, ট্রাফিক আইন প্রয়োগে দুর্নীতি, চালকের নিয়োগ ও কর্মঘণ্টা সুনির্দিষ্ট না থাকা ইত্যাদি। এছাড়া টুকটুকি-ইজিবাইক-ব্যাটারিচালিত রিকশা, মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা নির্ভর গণপরিবহন ব্যবস্থার দিকে ধাবিত হওয়ার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ভয়াবহভাবে বাড়ছে।
পরিবহনের কাঠামোগত পরিবর্তন আসেনি: যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘সরকার বদল হলেও পরিবহনের কাঠামোগত কোনও পরিবর্তন আসেনি। চাঁদাবাজির হাতবদল হয়েছে কেবল, ফিটনেসহীন যানবাহন সড়কে চলছে, আইনের অপপ্রয়োগ চলছে, বিআরটিএ রাজস্ব আদায়ে ব্যস্ত, ট্রাফিক বিভাগ জরিমানা আদায়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, দুর্ঘটনা সংঘঠিত হওয়ার যাবতীয় উপাদান সড়কে বিছিয়ে রাখা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কেবল সভা-সমাবেশে, বক্তৃতা-বিবৃতি আর পত্রিকায় বিজ্ঞাপণ দিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় বলেও দাবি করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, সমাজ উন্নয়নকর্মী আবদুল্লাহ আল-জহির স্বপন, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি তাওহীদুল হক, যুগ্ম মহাসচিব মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল, সদস্য ও দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের মো. জিয়াউল হক চৌধুরী প্রমুখ।
- বিষয় :
- সড়ক দুর্ঘটনা
- সড়কে মৃত্যু
- প্রাণহানি