ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

থানা থেকে আসামি ছিনিয়ে নিল বিএনপি, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

টঙ্গীতে ফাঁসির আসামির মুক্তি চেয়ে সড়ক অবরোধ বিএনপির

থানা থেকে আসামি ছিনিয়ে নিল বিএনপি, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থানা থেকে ছিনিয়ে নেওয়া আসামিসহ দোষী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার দাবিতে শনিবার ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা- সমকাল

 মুন্সীগঞ্জ, সিরাজদীখান ও টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২৫ | ০১:২৩ | আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৫ | ০৬:৫৬

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থানা থেকে আসামি যুবদল নেতা তরিকুল ইসলামকে জোর করে নিয়ে যাওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। শনিবার ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ধলেশ্বরী টোল প্লাজা এলাকায় ব্লকেড দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা। ৩০ মিনিটের আন্দোলনে টোল প্লাজার উভয় প্রান্তে প্রায় ১০ কিলোমিটার যানজট দেখা দেয়। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে ব্লকেড তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।

এর আগে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে শ্রীনগর থানা থেকে উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুলকে নিয়ে যান বিএনপির দুই শতাধিক নেতাকর্মী। এ সময় পুলিশ সদস্যদের মারধর করা হয়। এ ঘটনায় গতকাল ৩১ জনের নামে ও অজ্ঞাতপরিচয়ে অন্তত ২০০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন শ্রীনগর থানার এসআই আব্দুর রাজ্জাক। দায়িত্বে অবহেলার কারণে থানার ওসি কাইয়ুম উদ্দিন চৌধুরীকে জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। জেলার পুলিশ সুপার মুহম্মদ শামসুল আলম সরকার জানান, ছিনিয়ে নেওয়া তরিকুলসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওসি কাইয়ুম উদ্দিনকে জেলা পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, তরিকুলকে গ্রেপ্তারের খবরে শুক্রবার রাত ৯টার দিকে থানায় আসেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুল ইসলাম খান। তিনি তরিকুলকে ছেড়ে দিতে ওসি কাইয়ূম উদ্দিন চৌধুরীকে চাপ দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন মৃধা জেমস, সদস্য সচিব মামুনুর রশিদ, যুবদল নেতা রবিনসহ দুই শতাধিক নেতাকর্মী এসে পুলিশকে ধাক্কা দিয়ে আসামি নিয়ে যান।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান জানান, গণ্ডগোলের মামলায় তরিকুলকে শুক্রবার সন্ধ্যায় পুলিশ গ্রেপ্তার করে। কিন্তু রাত ১০টার দিকে বিএনপির নেতাকর্মী এসে পুলিশ সদস্যদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। হট্টগোলের মধ্যে তারা তরিকুলকে নিয়ে গেলেও পুলিশ টের পায়নি।

উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুল ইসলাম খান জানান, তিনি ঢাকায় দাওয়াতে ছিলেন। তবে যুবদলের এক সদস্যকে পুলিশ ধরলে তিনি থানা থেকে পালিয়েছেন বলে শুনেছেন।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় উপজেলা যুবদল থেকে তরিকুলকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পেশিশক্তি প্রদর্শন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে তরিকুল ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাঁর কোনো অপকর্মের দায় দল নেবে না।

জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মাসুদ রানা বলেন, ছাত্র-জনতার রক্ত ও জীবনের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশে আমাদের দল কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবে না। অপকর্মে জড়িতের অভিযোগ প্রমাণিত হলেই বহিষ্কার করা হবে।

বিএনপি নেতার মুক্তি দাবিতে সড়ক অবরোধ
গাজীপুরের টঙ্গীতে বিএনপি নেতা নূরুল ইসলাম সরকারের মুক্তি দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করেছেন দলটির নেতাকর্মী। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুই ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা।

পরে সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, ‘নূরুল ইসলাম কারাগারে থাকলেও আমি মনে করি, তিনি মুক্তি পেয়ে গেছেন। কারণ, জনগণ তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছেন।’

নূরুল ইসলাম সরকার মুক্তিসংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজির আহমেদের সভাপতিত্বে এবং প্রভাষক বশির উদ্দিন ও আবদুর রহিম খান কালার সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তৃতা করেন শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কার্যকরী সভাপতি সালাহউদ্দিন সরকার, গাজীপুর মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পু, টঙ্গী পশ্চিম থানা বিএনপির আহ্বায়ক বসির উদ্দিন প্রমুখ।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ ইব্রাহিম খান জানান, কলেজগেট এলাকায় অস্থায়ী মঞ্চে সমাবেশ করে বিএনপি। এতে সড়কের উভয় পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

২০০৪ সালের ৭ মে গাজীপুরের টঙ্গীর নোয়াগাঁও এলাকায় গুলি করে হত্যা করা হয় গাজীপুর-২ আসনের সাবেক এমপি আহসান উল্লাহ মাস্টারকে। পরে নূরুল ইসলাম সরকারকে প্রধান করে টঙ্গী থানায় মামলা করেন নিহতের ভাই মতিউর রহমান। এ মামলায় আদালত নূরুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন।

আরও পড়ুন

×