নতুন কারখানায় গ্যাসের খরচ বাড়ল ৩৩%

ফাইল ছবি
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৫ | ০১:৩৬
ব্যবসায়ীদের তীব্র বিরোধিতার পরও নতুন শিল্পে গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। বর্তমানে শিল্পে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৩০ টাকা, এখন তা বেড়ে হয়েছে ৪০ টাকা। শিল্পে উৎপাদিত নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্রে (ক্যাপটিভ) ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ছিল ৩১ টাকা ৫০ পয়সা, সেটি করা হয়েছে ৪২ টাকা।
গতকাল রোববার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে গ্যাসের নতুন দাম ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। নতুন দাম গতকাল থেকেই কার্যকর হয়েছে। অর্থাৎ ১৩ এপ্রিলের পর যত গ্যাস সংযোগ অনুমোদন করা হবে, তাদের বাড়তি দাম গুনতে হবে। এর আগ পর্যন্ত যেসব সংযোগ আবেদনের চাহিদাপত্র ইস্যু করা হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশের বেশি ব্যবহারে নতুন দাম কার্যকর হবে। আর পুরোনো শিল্প গ্রাহকরা অনুমোদিত লোডের বাইরে যতটুকু ব্যবহার করবেন, ততটুকুর নতুন দাম দিতে হবে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেন, দেশের গ্যাস কমার সঙ্গে সঙ্গে এলএনজি আমদানি বাড়তে থাকে। এলএনজির বাড়তি দাম দিতে গিয়ে চাপে পড়ে পেট্রোবাংলা। তারা ১৫০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল। গণশুনানিতে বেশির ভাগ অংশগ্রহণকারী দাম বাড়ানো নিয়ে আপত্তি তোলে। তাহলে কীসের ভিত্তিতে দাম বাড়ানো হলো– এমন প্রশ্নে চেয়ারম্যান বলেন, রাজস্ব চাহিদা ধরলে দাম অনেক বেশি বাড়াতে হতো। তাই ভোক্তার জন্য সহনীয় রাখতে ৩৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভর্তুকিরও হিসাব করা হয়নি।
সাধারণত কোম্পানিগুলোর রাজস্ব চাহিদা হিসাব করে বিইআরসি। এর পর ঘাটতি পূরণে সরকার ঘোষিত ভর্তুকির ভিত্তিতে দাম সমন্বয় করা হয়। এবারের দাম বাড়ানোর পর সরকার কত টাকা বাড়তি আয় করবে, তা জানে না কমিশন। রাজস্ব চাহিদা যাচাই ছাড়া এভাবে মূল্যবৃদ্ধি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে করা হয়েছে কিনা– জানতে চাইলে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে করা হয়নি।
নতুন ও পুরোনো শিল্পে আলাদা দাম রেখে যে বৈষম্য তৈরি করা হয়েছে, এটা আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে কিনা– এমন প্রশ্নে জালাল আহমেদ বলেন, বিইআরসির আইনি আওতার মধ্যে থেকেই দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করছেন ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খুরশেদ আলম বলেন, টেক্সটাইল খাতে ২০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ রয়েছে। জ্বালানি সংকটে টেক্সটাইল খাতের সক্ষমতার ৩০ শতাংশ বসে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে এমনিতেই নতুন বিনিয়োগ থমকে আছে। এর মধ্যে আবার দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে নতুন করে কোনা উদ্যোক্তা শিল্পকারখানা খুলবে না। তিনি আরও বলেন, নতুন ও পুরোনো কারখানার মধ্যে গ্যাসের দামের পার্থক্য ৩৩ শতাংশ, এটা বৈষম্যমূলক। সরকার যেখানে নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে, সেখানে দামের এই বৈষম্য গ্রহণযোগ্য নয়। খুরশেদ আলম বলেন, দাম না বাড়িয়ে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বারবার সিস্টেমলস কমানোর কথা বলা হয়েছে, যার একটা বড় অংশই চুরি। চুরি না ঠেকিয়ে দাম বাড়িয়ে উল্টো ব্যবসায়ীদের ওপর বাড়তি বোঝা চাপানো হলো।
নতুন বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, বিনিয়োগ কমার বিষয়টি এখনই বলা যাবে না। নতুন বিনিয়োগে প্রভাব পড়বে কিনা, তা নজরে রাখা হবে। নতুন যারা আসবে, তারা যদি দেখে তাদের পোষাবে, তাহলে তারা আসবে। তারা বিকল্প জ্বালানিও ব্যবহার করতে পারে। তিনি আরও বলেন, শুনানিতে অংশগ্রহণকারীরা দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করে ‘সিস্টেমলস’ কমাতে বলেছিল। এটা দ্রুত কমানো খুব কঠিন। এ নিয়ে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে সব কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন মূল্যায়ন করা হবে। পেশাদার নিরীক্ষক নিয়োগ করে আয়-ব্যয়ের যথার্থতা যাচাই করা হবে। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এলএনজি আমদানি বাড়াতে বলা হয়েছে।
এর আগে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের কথা বলে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে শিল্পে ১৫০ থেকে ১৭৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয় গ্যাসের দাম। শিল্প ও ক্যাপটিভে প্রতি ইউনিটের দাম করা হয় ৩০ টাকা। পরে গত বছর ক্যাপটিভে দাম বাড়িয়ে করা হয় ৩১ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তারা চাহিদা অনুসারে গ্যাস পান না।
- বিষয় :
- গ্যাস