প্রতিক্রিয়া
কৃষিকে লাভজনক করতে পরিকল্পনা নিয়েছি

ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান, সচিব কৃষি মন্ত্রণালয়
ড. এমদাদ উল্লাহ মিয়ান
প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫ | ০১:২৪ | আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫ | ০৬:৩৯
ধান রোপণের পরই গত আগস্ট মাসে দেশের বড় অংশজুড়ে ভয়াবহ বন্যা হয়। যেসব এলাকায় আমন ধান চাষের সময় শেষ হয়ে গিয়েছিল, সেসব এলাকায় আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সবজি চাষে সহায়তা দিয়েছি। বিনামূল্যে সবজির বীজ, সারসহ নানা উপকরণ দিয়েছি। গত ডিসেম্বরে বিভিন্ন এলাকায় পেঁয়াজ বীজে চারা গজায়নি বলে আমরা খবর পেয়েছিলাম। আমরা তাৎক্ষণিক যুক্তরাষ্ট্র থেকে উন্নত বীজ এনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের হাতে দিয়েছি। কৃষক যে পেঁয়াজের বীজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তার চেয়ে অধিক উৎপাদনশীল বীজ আমরা বিনামূল্যে দিয়েছি। এতে পেঁয়াজের ফলন বেশ ভালো হয়েছে।
কিন্তু বিপুল জনগোষ্ঠীর এই দেশে উৎপাদন বাড়ানো যেমন চ্যালেঞ্জ, আবার কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করাও বড় চ্যালেঞ্জ। সাম্প্রতিক সময়ে সবজির দর পতনে কৃষকের লোকসানের বিষয়টি সামনে এসেছে। আবার মাঝেমধ্যে সবজির দাম বেড়েও যায়। আমরা দুটি বিষয় নিয়েই কাজ করছি। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো ওএমএসের আওতায় কৃষিপণ্য বিক্রি হয়েছে। বাজারে এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। কৃষকও ন্যায্য দাম পেয়েছেন।
উৎপাদন বাড়লে দাম কমে যায়। ফলে আমরা দীর্ঘমেয়াদি বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। ইতোমধ্যে আমরা কৃষকের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আলুর কোল্ডস্টোরেজের ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছি। আগামী বছর থেকে আমরা আলু রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি। আলু সরবরাহের জন্য ট্রাকের ব্যবস্থা করছি। এ ছাড়া কৃষক থেকে সরাসরি আলু কিনে তা সংরক্ষণ করে বাজারে সরকারিভাবে বিক্রি করা হবে।
দেশে সবজি সংরক্ষণে কোনো হিমাগার নেই। তাই আমরা মিনি কোল্ডস্টোরেজ নির্মাণ করছি। ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলক দুটি কোল্ডস্টোরেজ নির্মাণ হয়েছে। এ কার্যক্রম কৃষি উপদেষ্টা লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী উদ্বোধন করেছেন। খুব দ্রুত সারাদেশে ২৫০টি মিনি কোল্ডস্টোরেজ চালু হয়ে যাবে। এটা ফসল সংরক্ষণে বড় পরিবর্তন আনবে। কৃষক তাঁর উৎপাদিত সবজি সংরক্ষণ করে বেচতে পারবেন। এতে বাম্পার ফলন কৃষকের জন্য অভিশাপ নয়, আশীর্বাদ হয়ে আসবে।
পেঁয়াজ সংরক্ষণে প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক সংরক্ষণাগার গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। পেঁয়াজ সংরক্ষণে গড়ে তোলা হবে আধুনিক এয়ার-ফ্লো মেশিন (বাতাসপ্রবাহ যন্ত্র) সংযুক্ত বিশেষ সংরক্ষণাগার। প্রাথমিকভাবে পেঁয়াজ উৎপাদন এলাকায় আধুনিক পদ্ধতিতে স্বল্প খরচে এই পণ্য সংরক্ষণে এক-দেড় মাসের মধ্যে চার হাজার এয়ার-ফ্লো মেশিন স্থাপন করা হবে।
বিদেশে ফলসহ নানা কৃষিপণ্য রপ্তানির অনেক সুযোগ রয়েছে। এই বাজার নিয়ে গবেষণা করব আমরা। প্রতিযোগিতায় টিকতে আমাদের পণ্যে কী কী বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে, তা অর্জন করে রপ্তানি বাজার ধরতে হবে। সর্বোপরি কৃষিকে লাভজনক পেশায় রূপান্তরের জন্য আমরা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছি, যা দ্রুত দৃশ্যমান হবে।
সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়
- বিষয় :
- প্রতিক্রিয়া