হরমোনজনিত রোগ রোধে চাই নিয়ন্ত্রিত জীবন
সমকাল-এসেডবি গোলটেবিল বৈঠক

বিশ্ব হরমোন দিবস উপলক্ষে শনিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সমকাল সভাকক্ষে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে অতিথিরা। সমকাল ও অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট অ্যান্ড ডায়াবেটোলজিস্ট অব বাংলাদেশ (এসেডবি) যৌথভাবে এর আয়োজন করে- সমকাল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫ | ০১:১০ | আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৫ | ০৮:১২
দেশে ডায়াবেটিস, থাইরয়েডসহ অন্যান্য হরমোনজনিত রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। জনসংখ্যার ৫০ শতাংশের বেশি কারও না কারও হরমোনজনিত সমস্যা আছে। সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করলে ডায়াবেটিসসহ হরমোনজনিত রোগ প্রতিরোধ সম্ভব।
বিশ্ব হরমোন দিবস উপলক্ষে গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সমকাল সভাকক্ষে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে হরমোন বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। সমকাল ও অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট অ্যান্ড ডায়াবেটোলজিস্ট অব বাংলাদেশ (এসেডবি) যৌথভাবে এর আয়োজন করে। সার্বিক সহযোগিতায় ছিল রেনাটা লিমিটেড।
এসেডবির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. ফরিদ উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন এসেডবির সহসভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. রুহুল আমীন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. ইন্দ্রজিৎ প্রসাদ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এ কে এম আমিনুল ইসলাম, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নুসরাত সুলতানা, সহকারী অধ্যাপক ডা. মাশফিকুল হাসান ও কনসালট্যান্ট ডা. হুরজাহান বানু, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এন্ডোক্রাইলোজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জোবায়দা নাজনীন ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট ডা. মো. সোহেল রানা ভূঁইয়া, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেসের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, ইবনে সিনা হাসপাতালের দয়াগঞ্জ শাখার কনসালট্যান্ট ডা. মোবারক হোসেন, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ইয়াসমিন আক্তার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট ডা. মো. মাহমুদ হাসান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন বলেন, আক্রান্ত বেশির ভাগ লোক জানেন না, তাদের হরমোনের সমস্যা আছে। এর চিকিৎসা তেমন জটিল নয়। ডায়াবেটিস ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ প্রতিরোধযোগ্য। কেবল সঠিক জীবনযাপনের মাধ্যমে এ ধরনের রোগকে প্রতিরোধ করা সম্ভব।
অধ্যাপক রুহুল আমীন বলেন, মিডিয়ায় ওষুধের বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষকে প্রলোভন দেখানো হয়। এই অপপ্রচারের আড়ালে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করা হয়। এগুলোকে সুচিকিৎসা বলা যাবে না। আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি অপচিকিৎসা হয় যৌন ও প্রজনন ক্ষেত্রে। হাট-বাজার থেকে শুরু করে ইউটিউব-ফেসবুকে মহাচিকিৎসকদের দেখা মেলে। অপপ্রচারে মানুষ প্রকৃত চিকিৎসা নিতে দেরি করে। রোগটা জটিল হয়ে ওঠে।
অধ্যাপক ইন্দ্রজিৎ প্রসাদ বলেন, ওজন কিংবা শারীরিক সৌন্দর্য বাড়াতে অনেকে স্টেরয়েড গ্রহণ করেন। অনেক সময় ওজন বাড়ানোর সম্পূরক খাদ্যে স্টেরয়েড মেশানো থাকে। এর ব্যবহার বিপজ্জনক হতে পারে। সতর্ক না থাকলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
আমিনুল ইসলাম বলেন, সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে হরমোন চিকিৎসা চালু আছে। সবার চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারলে হরমোনজনিত রোগীর সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব।
ডা. আতিকুর রহমান বলেন, আমোদের মন-মেজাজ ঠিক রাখার জন্য থাইরয়েড হরমোন ঠিক রাখা দরকার। এটি মানসিক ভারসাম্যহীনতা, অবসাদগ্রস্ততা, হতাশার সৃষ্টি করে। ফলে এর একটা সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব রয়ে যায়। তাই থাইরয়েডের রোগ সম্পর্কে সচেতনতা দরকার।
জোবায়দা নাজনীন বলেন, গত দশ বছরে শিশু-কিশোরদের মধ্যে প্রায় ৭ শতাংশ হারে ডায়াবেটিস বেড়েছে। স্কুল, কলেজ এবং হাসপাতালে হরমোনজনিত রোগ ও প্রতিকারবিষয়ক সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। যেভাবে মহামারি আকার ধারণ করছে, মানুষ সচেতন হলে সেটি প্রতিরোধ করতে সক্ষম হব।
মাহমুদ হাসান বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে অর্ধেকের বেশি শিশু ডায়াবেটিস আক্রান্ত কিনা– তা জানে না। ৯০ শতাংশ বাচ্চা স্কুলে ডায়াবেটিস সম্পর্কে শিক্ষা পায়নি। এ অবস্থা থেকে উন্নতির জন্য কারিকুলামে স্বাস্থ্যশিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা, শিক্ষক ও অভিভাবকদের প্রশিক্ষণ, স্কুলে নিয়মিত স্বাস্থ্যবিষয়ক সেমিনার ও কর্মশালা আয়োজন, নিয়মিত ঝুঁকিতে থাকা বাচ্চাদের ডায়াবেটিস স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করা উচিত।
সোহেল রানা ভূঁইয়া বলেন, ডায়াবেটিস এবং স্থূলতার মতো হরমোনজনিত রোগে যে হৃদরোগের ঝুঁকি তৈরি হয়, তা প্রতিরোধযোগ্য। সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুললে, নিয়মিত ব্যায়াম করলে, রক্তে চিনির মাত্রা ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখলে এবং হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিলে এসব রোগ থেকে বাঁচা সম্ভব।
খায়রুল ইসলাম বলেন, ২০০৫-০৬ সালের দিকে এ দেশে থাইরয়েড হরমোনের অভাব দেখা দিয়েছিল। তখন এর ওষুধ বাংলাদেশে সহজলভ্য ছিল না। এজন্য অনেক মানুষ কষ্ট পেয়েছে। তখন প্লান্ট তৈরি করে রেনাটা লিমিটেড। ২০০৬ সাল থেকে আমরা হরমোনের বিভিন্ন প্রোডাক্ট বাজারজাত করছি। এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ‘থাইরক্স’ পাওয়া যায়।