ঢাকা বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫

গঠনতন্ত্র অনুমোদন

এনসিপিতে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে দুইবারের বেশি নয়

এনসিপিতে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে দুইবারের বেশি নয়

রাজধানীর বাংলামটরে এনসিপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম -সমকাল

 সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৫ | ০১:৩০ | আপডেট: ২১ জুন ২০২৫ | ০৭:২৬

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) গঠনতন্ত্র অনুমোদন হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বাংলামটরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের ষষ্ঠ সাধারণ সভায় এটি অনুমোদন করা হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সারাদেশের কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। একজন সর্বোচ্চ দু’বার সভাপতি এবং দু’বার সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। সভাপতি ও সম্পাদক দলের রাজনৈতিক পরিষদের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন।

খসড়া এই গঠনতন্ত্রে আগামী কাউন্সিলের আগে প্রয়োজন সাপেক্ষে বর্তমান প্রতিষ্ঠাকালীন আহ্বায়ক কমিটি সংশোধনী আনতে পারবে। সভায় আগামীকাল রোববার নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সভা শেষে সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এনসিপি। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সদস্য সচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন, এনসিপির একটি রাজনৈতিক পরিষদ থাকবে। এই পরিষদ ন্যাশনাল কাউন্সিলের ভোটে নির্বাচিত হবে। রাজনৈতিক পরিষদ সর্বনিম্ন ১১ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ সদস্যবিশিষ্ট হবে। ১১ জন সদস্য ন্যাশনাল কাউন্সিলের ভোটে নির্বাচিত হবেন। এর মধ্যে ন্যূনতম তিন নারী সদস্য থাকতে হবে। পদাধিকারবলে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক রাজনৈতিক পরিষদের অন্তর্ভুক্ত হবেন। এই পর্ষদের বাকি দু’জন সদস্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দ্বারা মনোনীত হবেন।

ন্যাশনাল কাউন্সিলের কাঠামো এবং কাজের বিষয়ে তিনি বলেন, এই ফোরাম ‘রাজনৈতিক পরিষদ’ নির্বাচন, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন এবং জরুরি সময়ে কিছু কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার দায়িত্ব পালন করবে। ন্যাশনাল কাউন্সিল কেন্দ্রীয় কমিটি, অঙ্গসংগঠনের নির্বাহী কমিটি, জেলা পদমর্যাদার কমিটি থেকে পাঁচজন এবং উপজেলা পদমর্যাদার কমিটি থেকে দু’জন সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত হবে। এই কাউন্সিলের সদস্য দুই থেকে আড়াই হাজারের বেশি হবে না। 

কেন্দ্রীয় কমিটির কাঠামো, মেয়াদ ও কাউন্সিল সম্পর্কে আখতার জানান, কেন্দ্রীয় কমিটিতে দলের সভাপতি, সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদকমণ্ডলী, অন্যান্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাধারণ সদস্য এবং ক্ষেত্রবিশেষ জেলা সভাপতির সমন্বয়ে গঠিত হবে। কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ হবে তিন বছর। মেয়াদ পূরণ হওয়ার শেষ তিন মাসের মধ্যে পরবর্তী কাউন্সিল আয়োজনে কেন্দ্রীয় কমিটি দায়বদ্ধ থাকবে।

দলের নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন দাখিলের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়, দলের নিবন্ধন-সংক্রান্ত ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সামগ্রিক যোগাযোগের জন্য দলের পক্ষ থেকে মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম-আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ এবং যুগ্ম-সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম মুসাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

আখতার হোসেন বলেন, মৌলিক সংস্কার প্রশ্নে এনসিপি কোনো ধরনের আপসকামী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে না। এনসিপির রাজনীতি কেবল নির্বাচনকেন্দ্রিক নয়, বরং দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের যাত্রায় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এনসিপি কাজ করবে।

এনসিপির নারী সদস্যদের নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ প্রচারণা প্রতিরোধ করা হবে বলে জানান সদস্য সচিব। তিনি বলেন, যেসব গণমাধ্যমে এনসিপির নারী সদস্যসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেত্রীদের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ দায়ের করা হবে। এ ছাড়া বিদেশে বসে কুরুচিপূর্ণ তথ্য প্রচারকারীদের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট দেশের বাংলাদেশি দূতাবাসেও অভিযোগ দেবে এনসিপি।

 এক প্রশ্নের জবাবে উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনের শর্ত পূরণ করে নিবন্ধনের আবেদন করব। এসময় উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ও আরিফুল ইসলাম আদীব, সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ, যুগ্ম সদস্য সচিব মুশফিক উস সালেহীন, সালেহ উদ্দিন সিফাত প্রমুখ।

গঠনতন্ত্রে প্রথমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সর্বোচ্চ তিনবার থাকার কথা উল্লেখ থাকলেও চূড়ান্ত গঠনতন্ত্রে তা দুইবার করা হয়। দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম তা দুইবার করার প্রস্তাব দেন। এ বিষয়ে এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য খান মুহাম্মদ মুরসালিন সমকালকে বলেন, প্রথম খসড়ায় তিনবার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হওয়ার বিষয়টি পাস হলেও আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম তা দুইবার করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সভায় অন্য সবাই এ প্রস্তাবে সম্মতি দেন। 

‘বাধ্য হয়ে রাজনৈতিক দল করেছি’
৫ আগস্টের পর সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার অলিখিত চুক্তি থাকলেও তা থেকে তারা সরে যাওয়ায় রাজনৈতিক দল গঠনে বাধ্য হয়েছেন বলে সভায় জানান দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। সভা সূত্র জানায়, নাহিদ বলেন, ‘আমরা চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী হিসেবে থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু অলিখিত চুক্তি থেকে রাজনৈতিক দল ও সেনাবাহিনী সরে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে রাজনৈতিক দল করেছি। দল যখন করেছি, নির্বাচনেও ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। নির্বাচনের ফল মুখ্য নয়; আমাদের রাজনীতি করতে হবে।’

আরও পড়ুন

×