ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫

গোঁফ ছেঁটে চুলে কলপ দিয়েও শেষ রক্ষা হলো না

গোঁফ ছেঁটে চুলে কলপ দিয়েও শেষ রক্ষা হলো না

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ও সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২০ | ১২:০০

গলায় লাল-সবুজ রংয়ের গামছা। গায়ে বোরকা। বোরকার নিচে নীল শার্ট। হাতে ঘড়ি। পায়ে দামি হাওয়াই টাইপের শু। কোমরের বেল্টে ঢোকানো গুলিভর্তি অস্ত্র। তবে চিরচেনা গোঁফ নেই। ক্লিন শেভড মুখ। চুলে কালো কলপ।
গ্রেপ্তারের সময় এই হলো অভিযুক্ত মহাপ্রতারক মো. সাহেদ করিমের শরীরী ভঙ্গি। জীবনের উত্থান আর পতন দুটোতেই ছদ্মবেশ ধারণ করেছেন তিনি। এবারও ছদ্মবেশে পালাতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে শেষরক্ষা হয়নি। ভারতে পালিয়ে যাওয়ার আগেই গতকাল বুধবার ভোরে নিজ জেলা সাতক্ষীরা সীমান্ত থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।
এ নিয়ে রিজেন্ট কেলেঙ্কারিতে ১০ জন গ্রেপ্তার হলো। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে অনেক তথ্য দিয়েছেন সাহেদ। নিজের অপকর্মের দায় স্বীকারও করেছেন তিনি। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই সব প্রকাশ করতে চাচ্ছে না র‌্যাব।
সাহেদকে গ্রেপ্তারের পর একটি ছবিতে দেখা যায় তার কোমরে অস্ত্র। তার পাশে রয়েছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা। গ্রেপ্তারের পর আসামির কাছ থেকে অস্ত্র না নিয়ে সেটি তার কোমরে রাখা উপস্থিত কর্মকর্তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কিনা- এমন প্রশ্নে র‌্যাব মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, 'আমি এ বিষয়টি জানি না।'
নিজের বয়স একটু বাড়িয়ে দেখাতে সাহেদ সবসময় চুলে সাদা কলপ করতেন। গোঁফও রাখতেন। তবে গ্রেপ্তার এড়াতে গোঁফ ছেঁটে দেন তিনি।
র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারওয়ার বলেন, সাহেদ গ্রেপ্তার এড়াতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছিলেন। তিনি গোঁফ কেটে ফেলেছিলেন। সাদা চুল কালো করেছিলেন। এ ছাড়া পালানোর সময় তিনি বোরকা পরে ছিলেন। ভারতে পালানোর আগেই তাকে ধরতে আমরা সক্ষম হয়েছি। ভারতে পালিয়ে তার মাথা ন্যাড়া করার পরিকল্পনা ছিল।' তোফায়েল সারওয়ার
আরও বলেন, 'নৌকায় সাহেদ একা ভারতে পালাতে চেয়েছিলেন। তবে সাহেদকে গ্রেপ্তারের সময় নৌকার মাঝি সাঁতারে পালিয়ে যায়। সাহেদকে ভারতে পালাতে সাহায্য করছিল বাপ্পী নামে এক দালাল।'
র‌্যাব সূত্র জানায়, নিজের মোবাইল সিম অনেক আগেই ফেলে দিয়েছিলেন সাহেদ। তাই তার অবস্থান নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
সাতক্ষীরার দেবহাটার শাখরা কোমরপুর গ্রামের লুৎফর রহমান জানান, বুধবার ভোরে ফজরের নামাজ পড়ে আমরা মসজিদ থেকে বের হতেই চিৎকার শুনতে পাই। 'ধর ধর, সাহেদ সাহেদ' করে কারা যেন চিৎকার দিচ্ছে। আমরা এগিয়ে গিয়ে দেখি প্রতারক সাহেদকে লাবণ্যবতী ব্রিজের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। পাশে একটি ছোট নৌকা ছিল। পরে সেখানে এলাকার বহু মানুষ জড়ো হয়। লাবণ্যবতী ব্রিজের নিচে নাকি সাহেদ অবস্থান করছিল। সেখান থেকে নৌকায় করে নদী পার হয়ে ভারত যাওয়ার মুহূর্তে সাহেদকে আটক করা হয়েছে বলে তারা জানতে পেরেছেন। এর বাইরে এই অভিযান সম্পর্কে স্থানীয় লোকজন আর কিছু বলতে পারেননি।
সাহেদকে আটকের পর সকাল পৌনে ৮টায় তাকে সাতক্ষীরা স্টেডিয়ামে নিয়ে আসে র‌্যাব। এ সময় তাকে স্বাভাবিক দেখাচ্ছিল। তার মধ্যে কোনো উদ্বেগ লক্ষ্য করা যায়নি। পরে তাকে হেলিকপ্টারে ওঠানো হয় ঢাকায় নিয়ে আসার জন্য। সে সময়ও স্বাভাবিক ছিলেন সাহেদ।
সাহেদ সাতক্ষীরায় কোথায় ছিলেন বা কে তাকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে র‌্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, সাহেদ তার অবস্থান বারবার পরিবর্তন করছিলেন। এজন্য তার অবস্থান প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। সাতক্ষীরা সীমান্তে আসতে কারা তাকে সহযোগিতা করেছে, তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।
র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, সাহেদ চক্রে আর কারা জড়িত, তা তদন্ত করে দেখা হবে। অন্যায় যে-ই করুক কোনো ছাড় নয়। সাহেদ চক্রের আদ্যোপান্ত বের করা হবে।
র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, গতকাল ভোর ৫টা ১০ মিনিটের দিকে র‌্যাবের বিশেষ অভিযানে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত এলাকা থেকে সাহেদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর সাহেদকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে ও হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে আসে র‌্যাব।


আরও পড়ুন

×