সেমিনারে পররাষ্ট্র সচিব
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আত্মীকরণের ন্যূনতম সম্ভাবনাও নেই

ফাইল ছবি
কূটনৈতিক প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ আগস্ট ২০২০ | ০৮:৫০
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আত্মীকরণের ন্যূনতম সম্ভাবনাও নেই। এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা সরকারের একেবারেই নেই। তিনি আরও বলেন, বর্ষা মৌসুমের পর রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের পূর্ব পদক্ষেপ হিসেবে 'গো অ্যান্ড সি' কর্মসূচি নেওয়া হবে।
সোমবার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস স্টাডিজ (সিপিএস) আয়োজিত 'রোহিঙ্গা সমস্যা : পশ্চিমা, এশীয় ও দ্বিপক্ষীয় প্রেক্ষাপট' শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সেমিনারে তিনি এ কথা জানান।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকট বড় আকার ধারণের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে সিপিএস এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আলোচনায় অংশ নিয়ে কূটনৈতিক বিশ্নেষক ও বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মিয়ানমার রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য নিরাপদ ও আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেনি বলেই রোহিঙ্গারা এখনও নিজেদের মাতৃভূমিতে ফিরতে ভয় পাচ্ছে। আস্থার পরিবেশ মিয়ানমারকেই সৃষ্টি করতে হবে বলে তারা মত দেন।
সেমিনারে আলোচনায় অংশ নেন মালয়েশিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ হামিদ আলবার, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ফেলো মোহাম্মাদ শহীদুল হক, ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার, কানাডার হাইকমিশনার বেনোয়া প্রিফন্টেইন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর আতিকুল ইসলাম, সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড গভর্ন্যান্সের পরিচালক অধ্যাপক শেখ তৌফিক এম হক এবং সেন্টার ফর পিস স্টাডিজের সমন্বয়ক ড. এম জসিম উদ্দিন। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির থেকে কয়েকজন প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন করেন। সেমিনার সঞ্চালনা করেন সিপিএসের সহকারী অধ্যাপক ড. ইসরাত জাকিয়া সুলতানা।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য বিপুল অর্থ বিনিয়োগে বাংলাদেশ আগ্রহী নয়। কারণ এতে করে রোহিঙ্গারা দলে দলে আবার বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে উৎসাহিত হবে। তবে রাখাইনে প্রত্যাবাসনের পরে রোহিঙ্গারা যেন জীবন-জীবিকা অর্জন করতে পারে, সে জন্য ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত মিয়ানমারের কারিকুলামে শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেছে বাংলাদেশ। তিনি জানান, কক্সবাজারে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের জন্য বর্ষা মৌসুমের পর 'গো অ্যান্ড সি' কর্মসূচি নেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর আওতায় এরই মধ্যে যে স্বল্প সংখ্যক রোহিঙ্গা ভাসানচরে আছে, তাদের আত্মীয়স্বজনকে ভাসানচরের পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখতে নিয়ে যাওয়া হবে। তারা যদি মনে করে, কক্সবাজারের ক্যাম্পের চেয়ে এখানে আরও ভালোভাবে থাকার পরিবেশ রয়েছে, তাহলে তারা স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহী হবে। এ ছাড়া জাতিসংঘের একটি দল, মানবাধিকার কর্মী এবং সাংবাদিকদেরও ভাসানচর পরিদর্শন করানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
মালয়েশিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সৈয়দ হামিদ আলবার বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার প্রভাব সরাসরি বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার ওপর পড়ছে। প্রকৃতপক্ষে রোহিঙ্গা সমস্যা শুধু মানবিক সমস্যা নয়, বরং এটি বৈশ্বিক ও রাজনৈতিক সমস্যা। তিনি আরও বলেন, আসিয়ানের কয়েকটি সদস্য দেশ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনলেও ওই সংস্থার এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো নীতি নেই। মিয়ানমার আসিয়ানের সদস্য। কিন্তু রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আসিয়ান কোনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারেনি। কারণ আসিয়ানের সনদে সদস্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলানোর নীতি রয়েছে।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ফেলো মোহাম্মাদ শহীদুল হক বলেন, দায়বদ্ধতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করা সম্ভব এবং এ জন্য দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় ব্যবস্থার অধীনে 'হাইব্রিড কূটনীতি' অব্যাহত রাখতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখবে, যাতে করে সেখানে সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত না হয়। এই সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের ভূূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে আছে।
কানাডার রাষ্ট্রদূত বেনোয়া প্রিফন্টেইন দায়বদ্ধতার ওপর জোর দিয়ে বলেন, রোহিঙ্গা সংকট প্রলম্বিত হলে এর স্থায়ী সমাধান নিয়ে আরও হতাশার সৃষ্টি হবে। এ জন্য সংকটের দ্রুত স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও জোরালো ভূমিকা রাখা উচিত।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর আতিকুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু একটি জটিল সমস্যা এবং এটি সমাধানে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বক্তার অংশগ্রহণ ও বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে ভাইস চ্যান্সেলর বলেন, আমি আশা করব নীতিনির্ধারকরা এই অনুষ্ঠান থেকে ইতিবাচক কিছু উপাদান পাবেন।
- বিষয় :
- পররাষ্ট্র সচিব
- মাসুদ বিন মোমেন
- রোহিঙ্গা