পদ্মা সেতুর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে: প্রধানমন্ত্রী
বৃহস্পতিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাতালি শুয়ার্ড। ছবি: ফোকাস বাংলা
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২০ | ১০:১৩ | আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২০ | ১৪:৩৭
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ সম্পূর্ণ নিজের সামর্থ্যে পদ্মা সেতু তৈরি করছে। এর ফলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যে যোগাযোগ সৃষ্টি হবে, তা আমাদের জিডিপিতে অবদান রাখবে। ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুর প্রভাব দক্ষিণাঞ্চলের গ্রামগুলোতে পড়তে শুরু করেছে। যেমন সোলার প্যানেল বসানো, অবকাঠামোসহ গ্রামে গ্রামে উন্নয়ন শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাতালি শুয়ার্ড গণভবনে সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী। এ সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের (সিয়েরো) নির্বাহী পরিচালক (ইডি) পদে বাংলাদেশের প্রার্থিতার প্রতি ভারত সমর্থন ব্যক্ত করেছে। খবর বাসস ও ইউএনবির।
গণভবনে তাদের বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার সাংবাদিকদের বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ভারতীয় ভিসা পাওয়ায় ক্ষেত্রে বাংলাদেশি নাগরিকরা যে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হাইকমিশনার আলোচনা করেছেন। হাইকমিশনার প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ ভারতীয় ভিসা ইতোমধ্যে প্রদান শুরু হয়েছে, আর বাকিগুলো কভিড-১৯ পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে দেওয়া হবে।
বিক্রম কুমার সিরাম ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে বাংলাদেশকে কভিড-১৯-এর তিন কোটি ডোজ টিকা সরবরাহের চলমান প্রক্রিয়াটির কথা উল্লেখ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি কভিড টিকা কার্যকরভাবে বিতরণের জন্য বাংলাদেশের স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের সক্ষমতা বাড়াতে তার সরকারের সহায়তার ইচ্ছার কথাও জানান।
তিনি পারস্পরিক স্বার্থে দু'দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক পর্যায়ে আন্তঃসংযোগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী পুনরায় আঞ্চলিক উন্নয়ন এবং সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকার প্রণীত পররাষ্ট্রনীতি 'সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়'-এর পুনরুল্লেখ করেন। ভারতের হাইকমিশনার প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শুভেচ্ছা পৌঁছে দেন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী তাকে ধন্যবাদ জানান এবং তার মাধ্যমে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকেও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং এবং যুদ্ধ-পরবর্তী নতুন স্বাধীন দেশ পুনর্গঠনে ভারতের অবদানের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন। 'বাংলাদেশের বেলায় সকল ভারতীয়ই ঐক্যবদ্ধ' উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ভারতের সংসদে বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তির বিষয়টি (এলবিএ) সর্বসম্মতভাবে পাস হওয়ার উদাহরণ টানেন।
তিনি ভারতের নিযুক্ত হাইকমিশনারকে স্বাগত জানান এবং দায়িত্ব পালনকালে সব রকম সহযোগিতারও আশ্বাস দেন। বিক্রম কুমার কৃষি পণ্যের মূল্য সংযোজনে বাংলাদেশের খাদ্য এবং কৃষিখাতে বিনিয়োগে তার দেশের আগ্রহ ব্যক্ত করেন।
তিনি 'মুজিববর্ষ' উদযাপনের পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে গৃহীত আগামী দিনের কর্মসূচি সম্পর্কেও প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। প্রধানমন্ত্রী এসব কর্মসূচি গ্রহণে সন্তোষ প্রকাশ করে এ বিষয়ে তার সরকারের সব রকমের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
ভারতের হাইকমিশনার বলেন, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভারতীয়রা বাংলাদেশের উন্নয়নের সহযোগী হতে চায়। সেই অনুসারে, ১৯৬৫ সালের পূর্বের সংযোগ লাইন, চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রেল সংযোগ আগামী ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে আসন্ন ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনের সময় আরও কিছু প্রকল্পের সঙ্গে উদ্বোধন করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে সুইজারল্যান্ডের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান: সুইজাল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাতালি শুয়াডের মাধ্যমে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ করতে সুইজারল্যান্ডের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই মহামারিকালেও বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করেন শুয়াড। বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের একটা যুবসমাজ আছে, যারা কাজে অত্যন্ত দক্ষ। সুইজারল্যান্ড যদি এখানে আরও বেশি বিনিয়োগ করে, তবে উভয় দেশই লাভবান হবে।'
বিনিয়োগের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একমত হয়ে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত বলেন, এখানে আরও সুযোগ রয়েছে, আরও বিনিয়োগের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। মানব দক্ষতা উন্নয়নে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি। কভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সব রকম সহযোগিতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত।
বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত বলেন, সংকটময় সময়ও বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে তিনি মুগ্ধ। গ্রামীণ মানুষের উন্নয়নসহ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বাংলাদেশকে সহায়তার আগ্রহ প্রকাশ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, এই ধরনের যে কোনো কাজে সুইস সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে আগ্রহী। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সবার জন্য আবাসন, সবার জন্য খাদ্যের ব্যবস্থাসহ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বাংলাদেশের সফলতার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সরকার যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে তার প্রশংসা করেন সুইস রাষ্ট্রদূত। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত হতে যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে, তার প্রশংসাও করেন তিনি।
১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুইজারল্যান্ড সফরের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি নিজেও সেই সফরে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন। সেই সফরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও নির্যাতিত নারীদের চিকিৎসায় সুইজারল্যান্ড থেকে চিকিৎসক এবং নার্সের ব্যবস্থা করেছিলেন, সেই কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
সুইজারল্যান্ডের পররাষ্ট্রনীতি বঙ্গবন্ধুকে আকৃষ্ট করেছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সুইজারল্যান্ডের নিরপেক্ষতা এবং সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়- সুইজারল্যান্ডের এই দর্শন বঙ্গবন্ধুকে আকৃষ্ট করেছিল। তিনি বলতেন, তার লক্ষ্য বাংলাদেশকে 'সুইজারল্যান্ড অব দ্য ইস্ট' হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের ভৌগোলিক সাদৃশ্যের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভৌগোলিকভাবে সুইজারল্যান্ডের অবস্থান ইউরোপের কেন্দ্রস্থলে এবং একই রকমভাবে বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কেন্দ্রস্থলে। বিভিন্ন দিক থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে সুইজারল্যান্ডের মিল আছে।
প্রধানমন্ত্রী সুইজারল্যান্ডের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানান এবং দায়িত্ব পালনে সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দেন।