ঢাকা শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪

মোংলায় শনাক্তের হার ৭০ শতাংশ

মোংলায় শনাক্তের হার ৭০ শতাংশ

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২১ | ১২:০০ | আপডেট: ০৫ জুন ২০২১ | ১৩:২১

সীমান্তবর্তীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুসংখ্যা বেড়ে গেলেও মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তৎপরতা আর বারবার আহ্বান জানানো হলেও মাঠে তার প্রতিফলন নেই। অলিগলি ও পাড়া-মহল্লায় লোকজনের আড্ডা চলছে। হাটবাজারে অনেকে মাস্ক ছাড়াই ঘোরাফেরা করছেন। কেউ কেউ অপ্রয়োজনে বাইরে বের হচ্ছেন; নিয়ম মেনে পরছেন না মাস্ক। ফলে নতুন করে আতঙ্ক বাড়ছে।
শনিবার বাগেরহাটের মোংলায় ৪৮ জনের মধ্যে ৩৪ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে, যা প্রায় ৭০ শতাংশ। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জীবিতেশ বিশ্বাস বলেন, এর আগে গত এক সপ্তাহে এখানে ১৪৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তার মধ্যে পজিটিভ ৯৩ জন। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত নমুনা দিয়েছেন ১৯৪ জন, শনাক্ত হয়েছেন ১২৭ জন। তবে এখনও এ এলাকায় ভারতীয় ধরন শনাক্তের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহীতে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে করোনা শনাক্তের হার ৪৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জে শনাক্তের হার ৬১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এদিন রাজশাহীর ২৬৫টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হন ১৩১ জন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১৮১টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হন ১১২ জন। থেমে নেই মৃত্যুও। গত ২৪ ঘণ্টায় রামেক হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে আরও আটজনের মৃত্যু হয়েছে। আগের দিন মৃত্যু হয় ১৬ জনের। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও সাতক্ষীরা, দিনাজপুর, নওগাঁ ও বরিশালের গৌরনদীতে মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বালাই নেই। বিস্তারিত ব্যুরো, অফিস, নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে-
খুলনা :বাগেরহাটের সিভিল সার্জন কেএম হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের বলেন, পুরো বাগেরহাটের পরিস্থিতি নাজুক না হলেও মোংলা উপজেলায় সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে। এ উপজেলায় সংক্রমণ ২৬ মে থেকে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলায় এখন রোগী চিকিৎসাধীন ২৬৪ জন। এর মধ্যে ১৬৪ জন মোংলার। তিনি বলেন, শনাক্তের হার ওঠানামা করছে। প্রথম তিন দিন ছিল ৭০ শতাংশ। গত দুই দিন ছিল ৪০ শতাংশ। আজ (শনিবার) আবার প্রায় ৭০ শতাংশ।
রাজশাহী :রাজশাহীর জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. চিন্ময় দাস জানান, এখন সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে। মৃত্যুও বাড়ছে। এ অবস্থায়
লকডাউন-লকডাউন খেলা চলতে থাকলে সারাদেশের পরিস্থিতি ভয়ানক হয়ে উঠবে। তিনি বলেন, কখনও সকালে কখনও সন্ধ্যায় লকডাউন বা কঠোর বিধিনিষেধ আসছে, যা মানুষ মানছে না। মানুষকে মানাতে প্রয়োজনে সেনাবাহিনী নামাতে হবে। প্রয়োজনে কারফিউ দিতে হবে।
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, এখন সন্ধ্যা ৭টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ শতভাগ বাস্তবায়ন হচ্ছে। তবে এটা দেখার দায়িত্ব শুধু জেলা প্রশাসকের নয়। এখনও মসজিদে মাস্ক ছাড়া মানুষ নামাজ পড়ছেন। পাড়া-মহল্লায় অবাধে আড্ডা চলছে। এভাবে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। এ জন্য পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ দরকার।
জানা যায়, দুই সপ্তাহ ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বেড়ে যায় সংক্রমণ। গত এক সপ্তাহ ধরে বাড়তে থাকে রাজশাহীতেও। গত ২৩ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জে কঠোর লকডাউন দেওয়া হয়। ওই দিন এ জেলায় সংক্রমণ হার ছিল ৫৫ শতাংশ। আর রাজশাহীতে ছিল ৪৫ শতাংশ। তবুও রাজশাহীতে লকডাউন দেওয়া হয়নি। ফলে সংক্রমণ দ্রুতগতিতে ছড়াতে থাকে। আক্রান্তদের একটি বড় অংশ প্রচ শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হতে থাকেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। রামেক হাসপাতালের করোনা পরীক্ষার তথ্যমতে, গত ২৬ মে রাজশাহীতে শনাক্তের হার ছিল ২২ শতাংশ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৬২ শতাংশ। ৩১ মে রাজশাহীর ৪৬৫টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৯৮ জন শনাক্ত হন। শনাক্তের হার ছিল ৪২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। ১ জুন শনাক্তের হার ছিল ৩৭ দশমিক ৪১ শতাংশ। ৩ জুন শনাক্তের হার ছিল ৪২ দশমিক ২৭ শতাংশ।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার শামীম ইয়াজদানী জানান, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতদের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁচজন ও রাজশাহীর তিনজন রয়েছেন। মৃতদের মধ্যে চারজন করোনা পজিটিভ এবং চারজন উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।
সাতক্ষীরা :শনিবার ভোর থেকে জেলাব্যাপী এক সপ্তাহের লকডাউন শুরু হয়েছে। জেলা শহরের অধিকাংশ দোকান বন্ধ ছিল। রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল কম লক্ষ্য করা গেছে। তবে মফস্বল এলাকায় মানুষজন সেভাবে লকডাউন মানছে না। মানছে না স্বাস্থ্যবিধি।
সর্বশেষ তথ্যে জানা যায়, জেলায় সংক্রমণের হার ৫৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৮৯ জন শনাক্ত হয়েছেন। গতকাল সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে দু'জন মারা গেছেন। সেখানে ভর্তি রয়েছেন ১০৫ জন। এর মধ্যে করোনা পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ৩৩ বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. কুদরত-ই-খোদা। সীমান্তবর্তী সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া ও কালীগঞ্জে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছেন। জেলার অন্যান্য উপজেলায়ও সংক্রমণ বাড়ছে।
গোপালগঞ্জ :গোপালগঞ্জে সাতজনের শরীরে করোনার ভারতীয় ধরন (ডেলটা) শনাক্ত হয়েছে। আইইডিসিআরের বরাত দিয়ে গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ গতকাল এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এ ধরন দ্রুত ছড়ানোর কারণে বৌলতলী, সাতপাড় ইউনিয়নে গতকাল শনিবার থেকে আরও সাত দিনের কঠোর লকডাউনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ডা. সুজাত জানান, ভারতীয় ধরন সন্দেহে ২৮ মে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ১১টি নমুনা আইইডিসিআরে পাঠিয়েছিল।
দিনাজপুর :দ্রুতই দিনাজপুরে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ১৩৪-এ। গত শুক্রবার দু'জনের মৃত্যু হয়। সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১৩৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ২৩ জনের নমুনা পজিটিভ হয়েছে; শুধু দিনাজপুর সদর উপজেলাতেই ১৫ জন। এ উপজেলায় মোট ৫৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বিরলে একজন, সদরে এক ও বিরামপুরে একজন। এ অবস্থায় সদর উপজেলাকে কঠোর লকডাউনের আওতায় আনার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন সিভিল সার্জন আব্দুল কুদ্দুছ। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘোষণাপত্র জারি করার কথাও জানান তিনি। এ ছাড়া ঝুঁকিতে থাকা হাকিমপুরেও লকডাউন দেওয়া হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। সিভিল সার্জন বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। বিশেষ করে সদরে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে সংক্রমণ। সরেজমিন দেখা যায়, শহরে প্রচুর যানজট, মানুষের চলাচল। বহু মানুষের মুখে মাস্ক নেই। অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মানারও বালাই নেই।
নওগাঁ :নওগাঁ পৌরসভা ও নিয়ামতপুর উপজেলায় ৭ দিনের কঠোর লকডাউনে সংক্রমণের হার কমতে শুরু করেছে। জেলায় সংক্রমণের হার ছিল সর্বোচ্চ ৩৪ শতাংশ। সেই হার গত তিন দিনে নেমে এসেছে ১৮ শতাংশে। জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন মুনজুর এ মোর্শেদ বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় মাত্র দু'জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এদিকে লকডাউনের পাশাপাশি ১৫টি বিধিনিষেধ মেনে চলতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ্য করা গেলেও সাধারণ মানুষকে তা মানতে উদাসীন দেখা গেছে। লকডাউনের তৃতীয় দিন গতকাল সকাল থেকেই নওগাঁ পৌরসভা ও নিয়ামতপুর উপজেলার প্রতিটি সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ অবস্থান নিয়ে মানুষকে সচেতন করে। ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করা হয়।
নোয়াখালী :করোনা রোধে গতকাল ভোর ৬টা থেকে নোয়াখালী সদর উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় সপ্তাহব্যাপী লকডাউন শুরু হয়েছে। সকাল ও দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, ব্যস্ততম শহর মাইজদীতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও মানুষের চলাচল ছিল সীমিত। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় কোনো যানবাহন চলাচল করতে দেয়নি পুলিশ। তবে বাইরে চলাচলকারী অনেকের মুখেই মাস্ক দেখা যায়নি। আবার অনেকে নিয়ম মেনে মাস্ক পরেননি। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৩৯০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে সর্বোচ্চ ১২৭ জনের শরীরে করোনার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। আক্রান্তের হার ৩২ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
গৌরনদী (বরিশাল) :উজিরপুর উপজেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, সরকার দেশব্যাপী কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দিলেও উপজেলার অধিকাংশ মানুষ বিধিনিষেধ মেনে চলেনি। যে যার মতো ঘুরে বেড়িয়েছেন। বাজার-ঘাটে গেছেন। নিয়মিত আড্ডা দিয়েছেন। ফলে সংক্রমণ খুব দ্রুতগতিতে বেড়ে গেছে। সাতলা গ্রামের মৃত এলাহী বক্স হাওলাদারের ছেলে সাতলা বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম হাওলাদার (৫০) করোনা উপসর্গ নিয়ে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। করোনা পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়ায় সেখানেই তার চিকিৎসা চলছিল। গত শুক্রবার সকালে তিনি মারা যান।
হিলি (দিনাজপুর) :হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দেশে আসা ভারতে আটকেপড়া বাংলাদেশি পাসপোর্ট যাত্রীদের মধ্যে একজনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। গত ১৯ মে থেকে গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত ভারত থেকে আসা ১৯০ জনের মধ্যে চারজনের শরীরে এ ভাইরাস পাওয়া গেল। তাদের শরীরে ভারতীয় ধরন আছে কিনা তা পরীক্ষার পর জানা যাবে।
এ ছাড়া গতকাল যশোরে করোনা শনাক্ত হয় ২০ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় এ জেলায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১৮ জন। এর মধ্যে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ভারতফেরত পাসপোর্ট যাত্রী রয়েছেন দু'জন। সীমান্তবর্তী জেলা হিসেবে উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে যশোর। বাগেরহাটে করোনায় আরও দুই বৃদ্ধ মারা গেছেন। গত শুক্রবার ও গতকাল তাদের মৃত্যু হয়।
whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×