পান্তাভাতের অসাধারণ গুণ

পহেলা বৈশাখে শহুরে নাগরিকদের মধ্যে পান্তা ভাত খাওয়া নিয়ে আলোচনা হয়। ছবি: বিবিসি
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২১ | ১২:৫৩
পান্তাভাত নিয়ে প্রতি বছর বাংলা নববর্ষে আলোচনা হলেও এই খাবারটি এবার ভিন্ন এক কারণে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি কেড়েছে। মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়া প্রতিযোগিতার ফাইনালে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিশোয়ার চৌধুরী পান্তাভাত তৈরি করে সবাইকে চমকে দিয়েছেন। কেউ ভাবতেও পারেনি যে, রান্নার এ রকম একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পান্তাভাতের মতো একটি আটপৌরে খাবার পরিবেশন করা যায়। এই পান্তাভাতের ওপরেই গবেষণা করেছেন একদল বিজ্ঞানী।
ভারতের আসাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়, যাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন কৃষি জৈব প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. মধুমিতা বড়ূয়া। এই গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল পান্তাভাতে কী আছে এবং এসব উপাদান শরীরের জন্য কতটা উপকারী বা অপকারী সেগুলো খুঁজে বের করা। এই গবেষণার ফলাফল পরে এশিয়ান জার্নাল অব কেমিস্ট্রিতে প্রকাশিত হয়েছে। খবর বিবিসির।
পান্তাভাত নিয়ে সম্ভবত এটাই একমাত্র বৈজ্ঞানিক গবেষণা। তবে মধুমিতা জানিয়েছেন, তাদের এই গবেষণা এখনও চলছে। তারা এখন জানার চেষ্টা করছেন পান্তাভাত ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য ভালো না খারাপ। গবেষণায় দেখা গেছে পান্তাভাতে নানা ধরনের মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট বা পুষ্টিকর খনিজ পদার্থ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, জিংক, ফসফরাস ও ভিটামিন বি ইত্যাদি।
মধুমিতা বলেন, তারা দেখেছেন সাধারণ ভাতের তুলনায় পান্তাভাতে এসব পুষ্টিকর পদার্থের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ১০০ মিলিগ্রাম সাধারণ ভাতে আয়রনের পরিমাণ থাকে ৩.৫ মিলিগ্রাম। কিন্তু ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে তৈরি পান্তাভাতে এর পরিমাণ বেড়ে গিয়ে হয় ৭৩.৯ মিলিগ্রাম।
একইভাবে ক্যালসিয়ামের পরিমাণও অনেক বেড়ে যায়। ১০০ মিলিগ্রাম সাধারণ ভাতে যেখানে ক্যালসিয়াম থাকে ২১ মিলিগ্রাম, সেখানে পান্তাভাতে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৫০ মিলিগ্রাম। গবেষণায় দেখা গেছে, পান্তাভাতে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও জিংকের উপস্থিতিও অনেক বেড়ে যায়।\হভাতের মধ্যে ফাইটেটের মতো যে এন্টি-নিউট্রিশনাল ফ্যাক্টর আছে সেটা আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও জিংকের মতো পুষ্টিকর পদার্থকে বেঁধে রাখে। ফলে ভাত খাওয়ার পরও মানুষের শরীর এসব গ্রহণ করতে পারে না। কিন্তু ফারমেন্টেশনের কারণে পান্তাভাতের ফাইটেট দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তখন পুষ্টিকর পদার্থগুলো উন্মুক্ত হয়ে পড়লে আমাদের শরীর সেগুলো গ্রহণ করতে পারে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পান্তাভাতে থাকা পুষ্টিকর পদার্থগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটিকে শক্তিশালী করে। মধুমিতা বলেন, দেহের রক্তে অপিজেনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে আয়রন যেটা পান্তাভাতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এ ছাড়া তারা গবেষণায় দেখেছেন যে পান্তাভাতে প্রচুর পরিমাণে বিটা-সিটোস্টেরল, কেম্পেস্টেরোলের মতো মেটাবলাইটস রয়েছে যা শরীরকে প্রদাহ বা যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করে। এসব কোলেস্টেরল কমাতেও সাহায্য করে। এ ছাড়া পান্তাভাতে রয়েছে আইসোরহ্যামনেটিন-সেভেন-গল্গুকোসাইড ফ্ল্যাভোনয়েডের মতো মেটাবলাইটস যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, পান্তাভাতে ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সাধারণত দইয়ের মধ্যে এই ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়। এ ছাড়া গরমের সময় পান্তাভাত শরীরকে ঠান্ডা রাখে।
গবেষণায় পান্তাভাতের কোনো খারাপ দিক পাওয়া যায়নি। তবে মধুমিতা বলেন, ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ভাতের ফারমেন্টেশন হলে সেখানে অ্যালকোহলের উপাদান তৈরি হয় এবং সেই পান্তাভাত খাওয়ার পর শরীর ম্যাজ ম্যাজ করে ও ঘুম পেতে পারে। এ ছাড়া পান্তাভাত যদি পরিস্কার পাত্রে বিশুদ্ধ পানি দিয়ে তৈরি করা না হয়, তাহলে সেখানে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া তৈরি হতে পারে। সেই ভাত খেলে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়বে।