ঢাকা মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫

সিকিভাগ উৎসব-ভাতা দেড় যুগের দুঃখ

সিকিভাগ উৎসব-ভাতা দেড় যুগের দুঃখ

সাব্বির নেওয়াজ

প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২১ | ১২:০০ | আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২১ | ১৫:১৮

ঈদ আসে, ঈদ যায়। কিন্তু সিকিভাগ উৎসব-ভাতা পাওয়ার দুঃখ কখনও যায় না বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের। অন্য পেশাজীবীরা বছরে দু'বার এক মাসের মূল বেতনের সমান উৎসব-ভাতা পান। অথচ বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা এ ভাতা পান মূল বেতনের মাত্র ২৫ ভাগ।
কর্মচারীরা পান মূল বেতনের অর্ধেক। এভাবেই চলছে টানা ১৮ বছর ধরে।
এবারের ঈদুল আজহাতেও একই ঘটনা ঘটেছে। সারাদেশের এমপিওভুক্ত বেসরকারি ২৯ হাজার স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাড়ে পাঁচ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী মূল বেতনের ২৫ ও ৫০ ভাগ উৎসব-ভাতা পেয়েছেন। গত ৫ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এই অর্থ ছাড় করা হয়। এরই মধ্যে বেসরকারি শিক্ষকরা তা হাতে পেয়েছেন।
২০০৩ সাল থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বেতনের ২৫ শতাংশ ও কর্মচারীরা ৫০ শতাংশ উৎসব-ভাতা পেয়ে আসছেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে সরকারি শিক্ষকদের মতো মূল বেতনের শতভাগ উৎসব-ভাতার পাশাপাশি চিকিৎসা-ভাতা ও বাড়িভাড়া দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক বেলাল হোসাইন সমকালকে বলেন, এটি সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। আমাদের কাছে শতভাগ বোনাস বাস্তবায়নের কোনো নির্দেশনা কখনও আসেনি। এলে অবশ্যই পদ্ধতিগতভাবে এটি কার্যকর করা হবে।
শিক্ষকরা জানান, ২০০৩ সালে উৎসব-ভাতাসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সরকার থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ৯৫ শতাংশ বেতন দেওয়া হতো। পরে ২০০৫ সালে ৫ শতাংশ বাড়িয়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল বেতনের শতভাগই সরকার থেকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু উৎসব-ভাতা আর বাড়ানো হয়নি। সেই থেকে, অর্থাৎ ১৮ বছর ধরে সারাদেশের বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা এই খণ্ডিত উৎসব-ভাতাই পেয়ে আসছেন।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা জানান, ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মূল বেতনের ৮০ ভাগ সরকার থেকে দেওয়া হতো। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তা ৯০ শতাংশে উন্নীত করা হয়। ২০০৫ সালে চারদলীয় জোট সরকার তা শতভাগে উন্নীত করার ঘোষণা দিলেও প্রথম বাজেটে তা ৯৫ শতাংশ বাস্তবায়ন করা হয়। পরবর্তী বাজেটে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তা শতভাগে নিয়ে যায়। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন স্কেল ধাপে ধাপে শতভাগে উন্নীত হলেও উৎসব-ভাতা আর বাড়েনি।
এদিকে, বরাবরের মতো এবারও ঈদুল আজহায় খণ্ডিত উৎসব-ভাতা পাচ্ছেন শিক্ষকরা। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) মো. রুহুল মমিন জানান, এবারের ঈদুল আজহায় সারাদেশের ২৬ হাজারের বেশি এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় ২২০ কোটি টাকার উৎসব-ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে শুধু স্কুল ও কলেজ ১৮ হাজার ৫৬৭টি। এগুলোতে কর্মরত তিন লাখ ৩৭ হাজার ২৫৭ শিক্ষক-কর্মচারীর জন্য ঈদ বোনাস বাবদ দেওয়া হচ্ছে ১৯১ কোটি ৭৯ লাখ ৩২ হাজার ৫৭৮ টাকা। এর সঙ্গে জুন মাসের বেতন হিসেবে তারা পাবেন আরও ৬৮৩ কোটি ৫১ লাখ চার হাজার ৭৫০ টাকা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এবারও আগের মতোই শিক্ষকদের ২৫ শতাংশ আর কর্মচারীদের ৫০ শতাংশ উৎসব-ভাতা দেওয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ২৫ শতাংশ বোনাস পেতে যাওয়া শিক্ষকদের মধ্যে বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষদের বেতন স্কেল ৫০ হাজার টাকা, উপাধ্যক্ষ ও উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের অধ্যক্ষ ৪৩ হাজার, সহকারী অধ্যাপক ৩৫ হাজার ৫০০, টাইম স্কেলপ্রাপ্ত প্রভাষক ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক ২৯ হাজার, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও নিম্ন মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক ২৩ হাজার; প্রভাষক/গ্রন্থাগারিক, সহকারী শিক্ষক (টাইম স্কেলপ্রাপ্ত) ২২ হাজার, প্রদর্শক/সহকারী গ্রন্থাগারিক/শরীরচর্চা শিক্ষক/সহকারী শিক্ষক (টাইম স্কেল ব্যতীত) ১৬ হাজার এবং সহকারী শিক্ষক (বিএড ব্যতীত) ১২ হাজার ৫০০ টাকার স্কেলে বেতন পান।
অন্যদিকে, ৫০ শতাংশ বোনাস পেতে যাওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের মধ্যে টাইম স্কেল পাওয়া তৃতীয় শ্রেণির বেতন স্কেল ৯ হাজার ৭০০ টাকা, টাইম স্কেল ছাড়া বেতন স্কেল তৃতীয় শ্রেণির ৯ হাজার ৩০০, ল্যাব সহকারীদের আট হাজার ৮০০, টাইম স্কেল পাওয়া চতুর্থ শ্রেণির বেতন স্কেল আট হাজার ৫০০, আর টাইম স্কেল ছাড়া বেতন স্কেল চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আট হাজার ৩৫০ টাকা।
এদিকে, ঈদুল আজহার আগে শতভাগ উৎসব-ভাতা না দেওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামের মুখপাত্র মো. নজরুল ইসলাম রনি বলেন, এবারের ঈদুল আজহায় ২৫ শতাংশ বোনাস নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে শিক্ষকদের। ভবিষ্যতে শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে বিদ্যমান বোনাস বৈষম্য অবশ্যই নিরসন করতে হবে। বিদ্যমান ব্যবস্থায় কর্মচারীরা ৫০ শতাংশ আর শিক্ষকরা পান ২৫ শতাংশ। এ ছাড়া সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যেসব মৌলিক বৈষম্য রয়েছে, তা নিরসনের ব্যবস্থা নিতে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আবেদন পাঠানো হয়েছে। শিক্ষায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটেছে; কিন্তু দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এখনও চরম বৈষম্যমূলক, গতানুগতিক নানা ধারায় বিভাজিত।

আরও পড়ুন

×