ঢাকা শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

২১ আগস্ট নিয়ে সমকালের অনলাইন আলোচনা

সরকার ও সন্ত্রাস সেদিন একাকার হয়ে গিয়েছিল

সরকার ও সন্ত্রাস সেদিন একাকার হয়ে গিয়েছিল

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২১ | ১২:০০ | আপডেট: ২১ আগস্ট ২০২১ | ১৪:৩৯

সরকার ও সন্ত্রাস একাকার হয়ে গিয়েছিল ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। এ কারণেই রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলো সেদিন নিষ্ফ্ক্রিয় থেকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালাতে সন্ত্রাসীদের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিল। এর লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সব স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করা। এর মাধ্যমে আসলে একাত্তরের পরাজিত শক্তি সেই পাকিস্তান ঔপনিবেশিক যুগে বাংলাদেশকে ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিল।

গতকাল শনিবার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবস উপলক্ষে সমকাল আয়োজিত অনলাইন আলোচনায় এসব কথা বলেছেন বিশিষ্টজন। তারা বলেছেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয়নি। এ কারণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সব পক্ষের সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ ও সতর্ক থাকতে হবে।

'২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা: রাজনীতিতে কীসের বার্তা' শিরোনামে আয়োজিত এ আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ, নিরাপত্তা বিশ্নেষক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনার দিনের প্রত্যক্ষদর্শী আওয়ামী লীগ কর্মী আবুল কাশেম। সঞ্চালনা করেন সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি।

আলোচনার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে সূচনা বক্তব্যে মুস্তাফিজ শফি বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা বাংলাদেশের ইতিহাসে এবং রাজনীতিতে অত্যন্ত ন্যক্কারজনক একটি ঘটনা। এই হামলার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকেই নিশ্চিহ্ন করার একটি চক্রান্ত ছিল। সেই চক্রান্ত কীভাবে হয়েছিল, সেদিন কী ঘটেছিল এবং এ ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে- সে জন্য আমাদের কীভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে, তা নিয়ে আলোচনা করা এ সভার লক্ষ্য।

জাহাঙ্গীর কবির নানক ২০০৪ সালে যুবলীগের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীকে নিয়ে সেদিন আওয়ামী লীগের ডাকা শান্তি সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে এ সমাবেশ ডাকার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সারাদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ছিল বলেই জঙ্গিবাদ অত্যন্ত ভয়ংকর চেহারা নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিল।

তিনি বলেন, ক্ষমতায় এসেই বিএনপি-জামায়াত সরকার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং নৌকায় ভোট দেওয়া মানুষের ওপর সারাদেশে হামলা ও হত্যাযজ্ঞ চালায়। মায়ের সামনে মেয়েকে, ভাইয়ের সামনে বোনকে ধর্ষণ করে। এরপর বাংলাভাইয়ের উত্থান, দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক বোমা হামলা এবং আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতাদের হত্যা করা শুরু হয়েছিল। এসব অরাজকতার বিরুদ্ধেই ২১ আগস্ট ঢাকায় শান্তি সমাবেশ ডেকেছিলেন সে সময় জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, সমাবেশটি প্রথমে মুক্তাঙ্গনে করতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সরকার সেখানে সমাবেশের অনুমতি দেয়নি। এরপর সমাবেশস্থল পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে নিয়ে যাওয়া হয়। সমাবেশের আগের রাত ১২টা ২০ মিনিটে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মুক্তাঙ্গনে সমাবেশ হলে আপত্তি নেই। এই পুরো বিষয়টি ছিল ষড়যন্ত্রের অংশ। কারণ সরকার জানত, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে বড় সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়ে এত স্বল্প সময়ে স্থান পরিবর্তন কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষেই সম্ভব নয়। আসলে বিএনপি-জামায়াত সরকার শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র আরও আগে থেকেই করছিল। এই সমাবেশটি আহ্বানের পর সরকার সেই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের সুযোগ নেয়।

তিনি বলেন, মুক্তাঙ্গনের আশপাশে বড় ভবন ছিল না, সে কারণে তারা প্রথমে মুক্তাঙ্গনে অনুমতি দেয়নি। তারা জানত মুক্তাঙ্গনে সমাবেশের অনুমতি না পেলে আওয়ামী লীগ স্বাভাবিকভাবেই বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে। পরে আবার তারা মুক্তাঙ্গনে শেষ মুহূর্তে অনুমতি দিয়েছিল। কারণ তারা যেন এই অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে ব্যবহার করতে পারবে।

নানক বলেন, অন্যান্য সময় আওয়ামী লীগ সমাবেশ করলে চারপাশে পুলিশ ঘিরে থাকত। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মানুষ দফায় দফায় এসে কত লোক হবে, সমাবেশের পর মিছিল হবে কিনা, এসব জানতে চাইত। কিন্তু ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ ঘিরে পুলিশ ছিল না, পুলিশ ছিল বঙ্গবভনের দিকে স্টেডিয়ামের কাছে।

তিনি বলেন, একটা রেওয়াজ হচ্ছে সব সময়ই সমাবেশস্থলে বিভিন্ন ভবনের ছাদে, বারান্দায়, চারপাশের রাস্তায় দলের নিজস্ব কর্মী বাহিনী অবস্থান নেয় সমাবেশস্থলে উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতাদের নিরাপত্তার জন্য। কিন্তু ২১ আগস্ট পুলিশ কোনো নেতাকর্মীকে আশপাশের কোনো ভবনে কিংবা রাস্তায় অবস্থান নিতে দেয়নি। বরং গ্রেনেড হামলার উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া দলীয় কর্মীদের লাঠিপেটা করে এবং টিয়ার গ্যাসের শেল ছোড়ে। পরদিন সকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে গিয়ে দেখা যায়, ফায়ার সার্ভিস এবং সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের দিয়ে গ্রেনেড হামলা চালানো পুরো এলাকা পরিস্কার করে ফেলা হয়েছে। কারণ বিএনপি-জামায়াত সরকার হামলায় জড়িত ছিল বলেই তারা ধুয়ে-মুছে সব আলামত নষ্ট করতে চেয়েছিল। নিজেরা এ ঘটনা ঘটিয়েছিল বলেই জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে তদন্তের নামে প্রসহন করেছিল।

তিনি আরও বলেন, ২১ আগস্টে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সমরাস্ত্র আর্জেস গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়েছিল। অর্থাৎ, এই হামলায় পাকিস্তান এবং তাদের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই জড়িত ছিল। তারা ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে প্রথমবার মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীন বাংলাদেশকে হত্যা করতে চেয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব এবং ১৯৯৬ সালে জনরায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়।

নানক বলেন, এই ষড়যন্ত্রের লক্ষ্য ছিল শেখ হাসিনাকে হত্যা করা এবং বাংলাদেশকে পাকিস্তানে পরিণত করা। এই ষড়যন্ত্র এখনও বন্ধ হয়নি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে ক্ষমতায় আসার পরও বিডিআর বিদ্রোহ ঘটিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। এ কারণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সবাইকে ঐক্যবদ্ধ এবং সজাগ থাকতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে।

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, জঙ্গিবাদ এমন একটি বিষয় যেটি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া কখনোই বেড়ে উঠতে পারে না। কোনো দেশেই না। যেখানেই জঙ্গিবাদ বড় আকার ধারণ করে তার পেছনে কোনো রাষ্ট্র কিংবা রাষ্ট্রের গোষ্ঠীর সমর্থন থাকে। জঙ্গিরা নিজেদের ক্ষমতায় হয়তো ছোটখাটো কোনো ঘটনা ঘাতে পারে। কিন্তু ২১ আগস্টের মতো এত ভয়ংকর ঘটনা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া ঘটানো সম্ভব না, এটা পরিস্কার।

তিনি বলেন, এ কারণেই একটা গবেষণা হওয়া দরকার। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় রাষ্ট্রীয় কাঠামোর অবস্থান, এর আর্থসামাজিক প্রভাব, দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক প্রভাব এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে কী ধরনের পরিবর্তন আনা দরকার, তা গবেষণার মাধ্যমে স্থির করে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হচ্ছে। এর ফলে ২১ আগস্ট যারা ঘটিয়েছিল, বাংলাদেশের সে ধরনের শত্রু বাড়বে। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশকে পিছিয়ে দেওয়ার জন্য, থামিয়ে দেওয়ার জন্য এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হতে পারে। অতএব, ভবিষ্যতে এ ধররেন ঘটনায় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের সহযোগী ঘাতক চক্র এবং পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বলে প্রচার করতে শুরু করেছিল। মুক্তিযুদ্ধ এবং ৩০ লাখ শহীদের রক্তদানের ইতিহাস মুছে ফেলাটাই ছিল এই প্রপাগান্ডার উদ্দেশ্য। তারা চাচ্ছিল, দেশের মানুষের মন থেকে মুক্তিযুদ্ধ মুছে যাক, এরপর তারা বাংলাদেশকে পুনরায় পাকিস্তানের সঙ্গে সংযুক্ত করবে।

তিনি বলেন, এই চক্রান্তে পুরোপুরি যুক্ত ছিল পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা। ওই হামলায় ব্যবহূত গ্রেনেডও ছিল পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে আসা। এটা পরবর্তী সময়ে প্রমাণিত হয়েছে। পাকিস্তানের দুই জঙ্গি গ্রেপ্তার হয়েছে, তাদের বিচার হয়েছে। তাদের কাছ থেকে জানা গেছে কীভাবে পাকিস্তান থেকে গ্রেনেড আনা হয়েছিল, কারা কীভাবে এই হামলায় পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিল।

সেনাবাহিনীর সাবেক এই কর্মকর্তা নিজের পেশাগত অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বলেন, এই আর্জেস গ্রেনেড অত্যন্ত বিপজ্জনক। সামরিক বাহিনীর একজন প্রশিক্ষিত ব্যক্তিকে এটি ৩০ থেকে ৪০ গজের মধ্যে টার্গেট করে ছুড়তে হয়। চল্লিশ গজের মধ্যে যে মানুষ থাকবে, এ ধরনের গ্রেনেড বিস্ম্ফোরিত হলে তারা সবাই নিহত হবে।

তিনি বলেন, এখন প্রশ্ন উঠছে- এই গ্রেনেড নিক্ষেপকারীরা এত পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা এড়িয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশস্থলে ৪০ গজের মধ্যে গেল কীভাবে? এর উত্তর একটাই, সেদিন গ্রেনেড নিক্ষেপকারীরা নিশ্চিত ছিল যে তারা সমাবেশস্থলে গেলে এবং হামলা চালালে তাদের কেউ ধরবে না বা গ্রেপ্তার করবে না। আর এটি প্রমাণ করে সরকার ২১ আগস্টে আওয়ামী লীগের সমাবেশে হামলার সঙ্গে তখনকার সরকার জড়িত ছিল। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা এই হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

সাবেক আইজিপি শহীদুল হক বলেন, ২১ আগস্টের হামলার ঘটনার পর তখনকার সরকার এ ঘটনার তদন্ত চায়নি। তারা জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে ছিল। নিরীহ এক জজ মিয়াকে হাজির করে তার ওপর দোষ চাপিয়ে তৎকালীন সরকারের এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা আড়াল করতে চেয়েছিল। এমনকি ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারও এ ঘটনার যথাযথ তদন্ত করতে দেয়নি। সে সময়ও তদন্তকাজে প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণে প্রভাবশালী কর্মকর্তারা বাধা দেন। এরপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ ঘটনার তদন্ত শুরু হয়।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ঘটনার তদন্তে কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তার করেননি। বিচারের জন্য পৃথক ট্রাইব্যুনালও করেননি। আইনের নিজস্ব গতিতে তদন্ত এবং বিচার হয়েছে। একটি মামলায় মৃত্যুদণ্ড হওয়ার পর জঙ্গি মুফতি হান্নান ২১ আগস্টের হামলা পরিকল্পনা এবং এর সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে জড়িতদের আদ্যোপান্ত জানিয়ে দেন। তাকে কোনো চাপও দিতে হয়নি। সম্ভবত মুফতি হান্নানের এমন মনে হয়েছিল- একবার যখন ফাঁসির রায় হয়েছে, তখন আর সত্য চেপে রেখে কী হবে।

তিনি বলেন, ২১ আগস্ট পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থার যে ভূমিকা ছিল, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এটি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। উদ্ধারকারীদের ওপর লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাসের শেল ছোড়ার মতো কাজ মানবতাবিরোধী, বিবেকহীনতার পরিচয়। পুলিশ মানেই একজন দায়িত্বশীল পেশার মানুষ। রাজনৈতিক কারণে অনেক ক্ষেত্রে উনিশ-বিশ হলেও পুলিশ কখনও এভাবে দায়িত্বজ্ঞানহীন হতে পারে না, এটি সব সময় পুলিশের প্রত্যেক সদস্যকে মনে রাখতে হবে।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালে তদন্ত শুরু হওয়ার পর তাকে সে সময়ের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, ২১ আগস্টের আগের দিন পুলিশ এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, এই সমাবেশে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ এবং বোমাবাজি হতে পারে। এ কারণে ঘটনাস্থল থেকে তারা যেন নিরাপদ দূরত্বে থাকে। এ ধরনের বার্তাই প্রমাণ করে- ওই হামলা পুরোপুরি তখনকার সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় হয়েছিল।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আওয়ামী লীগ কর্মী আবুল কাশেম ওই হামলায় গুরুতর আহত আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানকে উদ্ধার করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে না ফেরার দেশে চলে যান বাংলাদেশের রাজনীতির অত্যন্ত পরিচিত প্রিয় মুখ আইভি রহমান। সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আবুল কাশেম বলেন, তিনি অন্যান্য কর্মীর মতো সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন। সমাবেশের ভেতরে যখন বিকট শব্দ হয়, তখন প্রথমে কিছুই বুঝতে পারেননি। কিছুক্ষণ পর তিনি টের পান তার শরীর ভিজে গেছে, চারপাশে রক্তস্রোত, রক্তাক্ত মানুষ।

আবুল কাশেম জানান, একসঙ্গে এত আর্তনাদ, মানুষের এত আহাজারি আগে কখনও দেখেননি তিনি। এরপর তারা যখন উদ্ধার কাজ চালাতে যান, তখন পুলিশ এসে লাঠিচার্জ করে এবং টিয়ার গ্যাসের শেল ছোড়ে। পুলিশের এ ধরনের অমানবিক ভূমিকায় আরও করুণ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ হামলার ঘটনা থেকে তার বেঁচে যাওয়া এখনও তার কাছে বড় বিস্ময়।

আরও পড়ুন

×