দুর্লভ স্মারক ও অনুদান গ্রহণ করল মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ০৭:৪২ | আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ০৭:৪২
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সংগ্রহে এলো একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ ও পাকিস্তান বাহিনীর গণহত্যা নিয়ে বরেণ্য শিল্পীদের আঁকা সাতটি তৈলচিত্র এবং মুক্তিযুদ্ধের বেশ কিছু দুর্লভ স্মারক। এই স্মারকের মধ্যে রয়েছে দুই মেয়েকে উদ্দেশ্য করে প্রথিতযশা কবি সুফিয়া কামালের লেখা একটি চিঠি, শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আজাহারুল হকের ক্রয় করা ও ব্যবহৃত সিলিং ফ্যান, শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ ফজলে রাব্বীর কেনা সংগীতশিল্পী আব্দুল জব্বারের গ্রামোফোন রেকর্ড, মুক্তিযুদ্ধের সুহৃদ মেরি ফ্রান্সিস ড্যানহ্যামের সংগ্রহে থাকা মূল্যবান দলিলপত্র এবং প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সংগ্রহে থাকা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই ও প্রকাশনাসমূহ।
শনিবার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ স্মারক গ্রহণ করা হয়। অনুষ্ঠানে জাদুঘরের স্থায়ী তহবিলে বিভিন্ন জনের ব্যক্তিগত অনুদানও গ্রহণ করে জাদুঘরের ট্রাস্টিবৃন্দ। সাতটি তৈলচিত্র মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টিদের কাছে তুলে দেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। এর মধ্যে রয়েছে- প্রয়াত শিল্পী দেবদাস চক্রবর্তীর ৭২ বাই ৩৬ ইঞ্চির একটি তৈলচিত্র, যেখানে বাঙালি নারীদের প্রতি পাকিস্তান বাহিনীর পৈশাচিক নির্যাতন ফুটে উঠেছে। আরও আছে শিল্পী বিরেন সোমের ৪০ বাই ৩০ ইঞ্চির তৈলচিত্র, প্রয়াত শিল্পী নিতুন কুন্ডুর ৩৬ বাই ৩৭ ইঞ্চির তৈলচিত্র, শিল্পী মুস্তফা মনোয়ার, প্রয়াত শিল্পী প্রাণেশ মণ্ডল ও শিল্পী আবুল বারক আলভীর ৪৮ বাই ৩৬ ইঞ্চির পৃথক তৈলচিত্র, শিল্পী রনজিৎ কুমার নিয়োগীর ২০ বাই ২৫ ইঞ্চির মিশ্রমাধ্যম তৈলচিত্র। প্রতিটি তৈলচিত্র একাত্তরের প্রেক্ষাপটে আঁকা হয়েছিল, যা পরে ভারতের কলকাতা ও দিল্লি এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা.সারওয়ার আলী। আরও বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল। তিনি তার মা কবি সুফিয়া কামালের চিঠি অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করেন। পরে তিনি চিঠিটি জাদুঘরের ট্রাস্টিদের হস্তান্তর করেন। এরপর শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আজাহারুল হকের স্ত্রী সৈয়দা সালমা হক, শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ ফজলে রাব্বীর মেয়ে অধ্যাপক নাসরীন সুলতানা, প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের স্ত্রী সিদ্দিকা জামান, শিল্পী বিরেন সোমসহ অন্যান্যরা তাদের পরিবারের সংগ্রহে থাকা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক দলিলপত্র ও স্মারক জাদুঘরে তুলে দেন।
জাদুঘরের পক্ষে স্মারক ও অনুদান গ্রহণ করেন ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী, মফিদুল হক এবং ট্রাস্টি ও সদস্য সচিব সারা যাকের। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জাদুঘরের ব্যবস্থাপক (কর্মসূচি) রফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান 'মীর আখতার লি.'-এর মীর নাসির হোসেন 'সম্মানীয় পৃষ্ঠপোষক' হিসেবে জাদুঘরের স্থায়ী তহবিলে ৬০ লাখ টাকা বিশেষ অনুদান তুলে দেন। এ ছাড়াও জাদুঘরের সুহৃদ অজয় দাশগুপ্ত, ইরেশ যাকের, ড. সায়মা আলী অদিতি, শ্রিয়া সর্বজয়াসহ আরও কয়েকজন সুহৃদ জাদুঘরে অনুদান তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে ডা. সারওয়ার আলী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সর্বজনের প্রতিষ্ঠান। জণগনের সম্পৃক্ততা যত বাড়বে জাদুঘর ততই সমৃদ্ধ হবে। তারাই জাদুঘরকে এগিয়ে নেবে। তৈলচিত্র সংগ্রহের প্রেক্ষপট তুলে ধরে শাহরিয়ার কবির বলেন, মুক্তিযুদ্ধে শিল্পী-সাহিত্যিকসহ প্রচার যোদ্ধাদের অনন্য ভূমিকা ছিল। কিন্ত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তা যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়নি। এমনকি সরকারি উদ্যোগে হয়নি বঙ্গন্ধুর প্রামান্য জীবনীও। এ ব্যাপারের সরকারি উদ্যোগের প্রয়োজন। তৈলচিত্র তুলে দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এই তৈলচিত্রগুলো যাতে দেখতে পারে, এগুলো যাতে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয় সেজন্যই জাদুঘরে দেওয়া হয়েছে।
সারা যাকের বলেন, প্রতিটি স্মারক আমাদের কাছে মুল্যবান। আমরা এগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ করব, প্রদর্শন করব। এরসঙ্গে আরও একটি বিষয় গুরুত্বপুর্ণ সেটি হলো বিশেষ অনুদান। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে প্রায় দেড় বছর জাদুঘর বন্ধ ছিল। এ জন্য জাদুঘরের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনায় অনুদান প্রয়োজন। এ ব্যাপারে সর্বজনকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, জাদুঘরটি সর্বজনের প্রতিষ্ঠান। আপনারাই এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা।