ঢাকা বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

এহসানে বিনিয়োগ করতে দেশি-বিদেশি আলেমদের ব্যবহার করেন রাগীব

এহসানে বিনিয়োগ করতে দেশি-বিদেশি আলেমদের ব্যবহার করেন রাগীব

এহসান গ্রুপের চেয়ারম্যান রাগীব আহসান

সাহাদাত হোসেন পরশ

প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১১:৫২ | আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১১:৫২

পিরোজপুরকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান এহসান গ্রুপের চেয়ারম্যান রাগীব আহসান ফাঁদ পেতে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে অভিনব কৌশল নিয়েছিলেন। শরিয়তসম্মত সুদবিহীন বিনিয়োগের জন্য তার প্রতিষ্ঠানকে বেছে নিতে দেশি-বিদেশি আলেম-ওলামাদের ব্যবহার করেন তিনি। প্রায়ই তাদের মাধ্যমে ওয়াজ এবং বয়ান করিয়ে প্রতি সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিকে এহসান গ্রুপে বিনিয়োগ করতে আকৃষ্ট করেন প্রতারক রাগীব।

র‌্যাবও বলছে, অন্তত দুই দফায় বিদেশি আলেমদের দাওয়াত দিয়ে দেশে এনে এহসান গ্রুপের গুণকীর্তনে ব্যবহার করেছেন রাগীব। ওয়াজে কোনো কোনো আলেম বলেন, ‘এহসান নিয়ে কোনো প্রশ্ন করলেই আপনি মোনাফেক।’

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সমকালকে বলেন, ফাঁদে ফেলতে রাগীব আহসান সাধারণ মানুষের অনুভূতি ব্যবহার করেছেন। দেশি-বিদেশি আলেমদের ব্যবহার করে তিনি এহসান গ্রুপ সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা দিতে চেয়েছিলেন।

এহসান নিয়ে হাফিজুর রহমান ছিদ্দিকের (কুয়াকাটা) এক ওয়াজ ইউটিউব ও ফেসবুকে ভাইরাল। সেখানে তিনি বলেন, ‘ইসলামের খেদমতের একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের নাম এহসান। আমার মুরুব্বি শায়েখ শেখ জাকারিয়া রহমতুল্লাহ ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। তিনি এখানে বয়ান করলেন, আমিও করলাম। আরও বহু উলামায়ে কেরাম করলেন। গতকালও অনেকে করেছেন। এতটুকু চিন্তা যদি মাথায় নেন, তাহলে এহসান নিয়ে কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ থাকে না। এরপরও ঘাড় ত্যাড়া সোজা হবে। আরে কথা কন না কেন। আস্তে কথা কন কেন। সাহস থাকলে দাঁড়ান। এরপরও বাকা অন্তর সোজা হবে। অতএব টেনশন নিয়ে সময় নষ্ট করতে আমরা রাজি নই। দুশমন থাকবেই। এটাই বাস্তবতা। কথা বলেন না কেন। রাতের অন্ধকার না থাকলে আলোর মর্যাদা বোঝা যায় না। কাফের মোনাফেক না থাকলে হকের পরিচয় পাওয়া যায় না। এখন যারা আমাকে ভালোবাসবেন তারা এহসান নিয়ে কোনো কথা বলবেন না। বললেই আমার ভালোবাসা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। হ্যাঁ জানার জন্য কিছু থাকলে বলেন। হ্যাঁ বলেন, বুঝি না। বোঝার জন্য রাস্তা খোলা। এই জমিনে কয়েকটা গুনাহ আছে, যা চালু করলেই অটো সুইচ। এর মধ্যে একটা গুনাহ হল সুদের গুনাহ। কথা বলেন না কেন। সুদের সবচেয়ে ছোট গুনাহ মায়ের সঙ্গে জিনা করার সমতুল্য। এটা আর শুনেন নাই। কথা বলেন না কেন। তাই যারা সুদের সঙ্গে জড়িত, তাদের যদি ডাক দিয়ে কই, তুমি মায়ের সঙ্গে জিনা কর কেন। এর উত্তরে সে গরম হয়ে যাবে। কিন্তু আমলনামায় জিনার গুনাহ উঠছে তো। কথা বলেন। আল্লাহ এই গুনাহ থেকে হেফাজত করুন। এই গুনাহ থেকে হেফাজতের জন্য আমার বন্ধুবর প্রাণের মানুষ কলিজার টুকরা আপনাদের এলাকার গৌরব মুফতি রাগীব এই যে একটা সেবামূলক সংগঠন এহসান পরিবার চালু করেছেন, এটা শুধু পিরোজপুর নয়, গোটা জগতের জন্য একটা রহমত। আপনি ঠিক বললেও ঠিক, না বললেও ঠিক। আপনি ঠিক না বললেও কোনো টাইম নাই আপনাকে গণনা করার। বুঝেন নাই, আমি এহসানের একজন পরিবারের সদস্য। এবার কোনো প্রশ্ন থাকলে করেন।’

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর তোপখানা এলাকা থেকে রাগীব আহসান ও তার ভাই আবুল বাশার খানকে গ্রেপ্তার করে র্যাাব। শনিবার তাদের পিরোজপুর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় পিরোজপুর থানায় রাগীব ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে। শরিয়তসম্মত সুদবিহীন বিনিয়োগ ও প্রতি লাখে মাত্রাতিরিক্ত লাভ দেওয়ার প্রচারণা চালিয়ে তিনি ফাঁদ পাতেন। ১০ হাজার গ্রাহক নিয়ে যাত্রা শুরু করা তার এমএলএম প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকসংখ্যা এখন লক্ষাধিক।

গ্রাহকদের অভিযোগ ও গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, তিনি প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তবে র্যাঅবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ১১০ কোটি টাকা সংগ্রহের কথা স্বীকার করেছেন।

র‌্যাব জানায়, রাগীব আহসান ১৭টি প্রতিষ্ঠানের নামে প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করেন। সেগুলো হলো- এহসান গ্রুপ বাংলাদেশ, এহসান পিরোজপুর বাংলাদেশ (পাবলিক) লিমিটেড, এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেড, নূর-ই মদিনা ইন্টারন্যাশনাল ক্যাডেট একাডেমি, জামিয়া আরাবিয়া নূরজাহান মহিলা মাদরাসা, হোটেল মদিনা ইন্টারন্যাশনাল (আবাসিক), আল্লাহর দান বস্ত্রালয়, পিরোজপুর বস্ত্রালয়-১ ও ২, এহসান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড, মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডিং অ্যান্ড কোং, মেসার্স মক্কা এন্টারপ্রাইজ, এহসান মাইক অ্যান্ড সাউন্ড সিস্টেম, এহসান ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস, ইসলাম নিবাস প্রজেক্ট, এহসান পিরোজপুর হাসপাতাল, এহসান পিরোজপুর গবেষণাগার ও এহসান পিরোজপুর বৃদ্ধাশ্রম।

ভুক্তভোগীদের দাবি, এসব প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থ সংগ্রহ করে তিনি পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের নামে-বেনামে সম্পত্তি ও জমি কিনেছেন। রাগীব তার পরিবারের সদস্যদের নাম যুক্ত করে ব্যবসায়িক কাঠামো তৈরি করেন। তার শ্বশুর প্রতিষ্ঠানের সহ-সভাপতি, বাবা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা, ভগ্নিপতি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার। এছাড়া তার তিন ভাইয়ের মধ্যে আবুল বাশার প্রতিষ্ঠানের সহ-পরিচালক, বাকি দুই ভাই সদস্য।

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×