ঢাকা শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

তথ্য লুকিয়ে চাকরি নেন ঢাবি ভিসির সাবেক পিও

তথ্য লুকিয়ে চাকরি নেন ঢাবি ভিসির সাবেক পিও

আহসানুল কবির মল্লিক

মাজহারুল ইসলাম রবিন

প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২২ | ১৪:৩৮

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সাবেক প্রটোকল অফিসার (পিও) আহসানুল কবির মল্লিকের বিরুদ্ধে ভুয়া সনদ দেখিয়ে চাকরি গ্রহণসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনের এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশ করে তিনি নিয়োগ বাণিজ্যও করেন। এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততার জন্য তাকে উপাচার্যের পিও পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

অভিযোগ রয়েছে, ২০১২ সালে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) হিসেবে আহসানুল কবির মল্লিক প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরের অধীন বিদ্যুৎ বিভাগে যোগদান করেন। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, 'প্রার্থীকে সরকার অনুমোদিত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় হতে কমপক্ষে দ্বিতীয় বিভাগে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং (ইলেকট্রিক্যাল) পাস হতে হবে এবং সরকারি/আধা-সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে তিন বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতাসহ কম্পিউটারের ওপর দক্ষতা থাকতে হবে।' কিন্তু তার চার বছর মেয়াদি বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি নেই। তিনি পলিটেকনিক্যাল কলেজ থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা করেন।

এরপর তিনি তার অধ্যয়নরত কলেজ থেকে অনুমতি নিয়ে ইন্সট্রাক্টর হিসেবে কাজ করতে ওআইসি পরিচালিত ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি থেকে দুই বছর মেয়াদি বিএসসি ইন টেকনিক্যাল এডুকেশন কোর্স করেন, যা বিএডের মতো একটা কোর্স। তবে নিয়োগের সময় তিনি নিজেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে দেখান। এ ছাড়া তার অভিজ্ঞতা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। কেননা অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে সরকারি/আধা-সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে তিন বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা চাইলেও জানা গেছে, তিনি খুলনা টেকনিক্যালে ইন্সট্রাক্টর হিসেবে কাজ করেছেন। এমনকি কম্পিউটারের ওপরও তার কোনো বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই। প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ উপায়ে তিনি নিয়োগ পান বলে জানা গেছে।

আহসানুল কবির মল্লিক প্রভাব খাটিয়ে শর্ত পূরণ না করেই পদোন্নতি পান বলে জানা যায়। এ বিভাগে পদোন্নতির ক্ষেত্রে সংশোধিত নীতিমালা অনুযায়ী, সহকারী প্রকৌশলী পদে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত স্নাতক প্রকৌশলীদের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপক্ষে পাঁচ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা এবং ডিপ্লোমা পাস সহকারী প্রকৌশলীদের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট চাকরির কাল ১৫ বছর, তন্মধ্যে সাত বছর সহকারী প্রকৌশলীর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্তু তার ক্ষেত্রে সেই শর্ত পূরণ হয়নি।

রেজিস্ট্রার ভবন সূত্র জানায়, আহসানুল কবির মল্লিক যোগদানের পর থেকেই নানা ধরনের অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের এলাকায় তার বাড়ি এবং তার প্রিয়ভাজন হওয়ায় নিজেকে তিনি উপাচার্যের কাছের লোক বলে পরিচয় দিয়ে উপাচার্যের অগোচরে রেজিস্ট্রার ভবনের প্রকৌশল দপ্তরের এক কর্মকর্তার সঙ্গে মিলে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্য করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের প্রটোকল অফিসার থাকাকালীন প্রভাব খাটিয়ে তিনি এসব অনিয়ম করেন। এ কারণে তাকে পিও পদ থেকে সরিয়ে পুনরায় বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠনো হয়। নিজ বিভাগে ফিরে আসার পরও তিনি এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া তিনি প্রভাব খাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্যে নির্ধারিত বাসাও নিয়েছেন।

নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ভুক্তভোগী জানান, তার এক আত্মীয়ের চাকরির জন্য আহসানুল কবির মল্লিক তার থেকে বেশ কয়েক লাখ টাকা নিলেও তার ওই আত্মীয়ের চাকরি হয়নি। অথচ তার ওই আত্মীয় নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিল। আরেক ভুক্তভোগী জানান, তার এক আত্মীয়ের নিয়োগের জন্য টাকা নিয়েছেন আহসানুল কবির মল্লিক।

অভিযোগের বিষয়ে আহসানুল কবির মল্লিক বলেন, আমার নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি। যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন করি এবং নিয়োগ পরীক্ষায় অবতীর্ণ হই। এরপর আমার নিয়োগ হয়। এ সময় তিনি সনদের বিষয়টি এড়িয়ে যান। নিয়োগ বাণিজ্যের কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমি এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত নই। অভিজ্ঞতার বিষয়ে তিনি বলেন, আমার যথাযথ অভিজ্ঞতা রয়েছে। এর আগে আমি সংশ্নিষ্ট বিষয়ে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেছি। শিক্ষকের বাসায় থাকার বিষয়ে বলেন, আমার আগেও ওই বাসায় একজন কর্মকর্তা থাকতেন।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, আহসানুল কবির মল্লিককে তো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়োগ দিয়েছিল। তথ্য গোপন করে চাকরি নিয়েছিল কিনা তা সঠিক জানি না। বিজ্ঞপ্তিতে যা-ই থাকুক, সে যদি তার যা যোগ্যতা আছে তা দিয়ে আবেদন করে আর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়ে নেয় তাহলে তো তার কোনো দোষ নেই। আর সে যদি তথ্য গোপন করে চাকরি নিয়ে থাকে তাহলে অন্যায় করেছে। তথ্য গোপন করেছিল কিনা খোঁজ নিয়ে দেখব। নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে তার কাছে কেউ অভিযোগ করেননি বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন

×