সমকাল: বীমা খাত এগিয়ে নিতে কোন কোন দিকে নজর দেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?

জালালুল আজিম: বীমা খাত এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমাদের দুটি জিনিস নিশ্চিত করতে হবে। প্রথমটি হলো গ্রাহকের আস্থা অর্জন করা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে এ খাতে পেশাজীবী জনবল নিশ্চিত করা। গ্রাহকের আস্থা অর্জনে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি বীমা দাবি পরিশোধের ক্ষেত্রে। আমরা অত্যন্ত দ্রুত সময়ে বীমা দাবি নিষ্পত্তিতে বদ্ধপরিকর। একজন গ্রাহক যখন তাঁর বীমা দাবি যথাসময়ে পেয়ে যান, তখন স্বভাবতই তাঁর এবং তাঁর পারিপার্শ্বিক সবার মধ্যেই বীমা সম্পর্কে একটি ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়। যা এই মুহূর্তে বীমা খাতের অগ্রগতিতে বিশেষ প্রয়োজন। আর বীমা গ্রাহকদের দ্রুত ও যুগোপযোগী সেবা প্রদানের জন্য আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে সম্পূর্ণরূপে ডিজিটাল পদ্ধতি ও প্রযুক্তিনির্ভর জীবন বীমা কোম্পানি হিসেবে গড়ে তুলেছি। সেই সঙ্গে দক্ষ জনসম্পদ তৈরি করার জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। এই উপলব্ধিতে প্রগতি লাইফ ও প্রগতি ইন্স্যুরেন্সের জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যা প্রগতি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট নামে নামকরণ করা হয়েছে। আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত এ ট্রেনিং ইনস্টিটিউট প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও প্রগতি ইন্স্যুরেন্সের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাজে দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে, যা বীমা শিল্পের সার্বিক সমৃদ্ধিতে বিশেষ অবদান রাখছে। আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মাঝে বীমা সুবিধা পৌঁছে দেওয়া। এ লক্ষ্যে আমরা ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা, শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের জন্য জীবন বীমা এবং দেশের সাধারণ জনগণের জন্য পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যবীমাসহ অনেক উদ্ভাবনী ও জীবন ঘনিষ্ঠ বীমা পরিকল্পনা চালু করেছি।

সমকাল: বীমা খাতে আপনাদের কোম্পানি এমন কোনো দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যা অন্যদের জন্য অনুসরণীয় বলে আপনি মনে করেন?

জালালুল আজিম: সময়মতো গ্রাহকের দাবি পরিশোধ, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর প্রতিটি আইন ও নীতিমালা যথাযথভাবে পরিপালনসহ প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিতকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে আমরা নিঃসন্দেহে অন্যতম। সম্পূর্ণভাবে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর জীবন বীমা কোম্পানি হিসেবেও প্রগতি লাইফ অন্যতম। আমাদের কার্যক্রমের প্রতিটি স্তরে স্বচ্ছতা ও কঠোর নিয়ন্ত্রণ যে কোনো বীমা কোম্পানির জন্য দৃষ্টান্ত হতে পারে।

সমকাল: বীমা খাতের ওপর মানুষের আস্থা বাড়াতে ও জনবান্ধব করতে আপনার পরামর্শ কী?

জালালুল আজিম: বীমা খাতের ওপর মানুষের আস্থা বাড়াতে সর্বপ্রথম গ্রাহকের আমানতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। গ্রাহক যেন সময়মতো তাঁদের দাবির টাকা পেতে পারে, তার সর্বোচ্চ নিশ্চয়তা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বীমা খাতের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এসব বিষয়ে যদি যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তাহলে অনিয়ম অনেকাংশেই কমে আসবে। আর অনিয়ম বন্ধ হলেই বীমা খাতের ওপর মানুষের আস্থা বাড়বে। এ ছাড়া বীমা খাতকে জনবান্ধব করতে হলে জীবনঘনিষ্ঠ বীমা প্রকল্প চালু করতে হবে। বীমা প্রকল্প যদি বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়, তাহলে মানুষ বীমা গ্রহণে আগ্রহী হবে। সেই সঙ্গে গ্রাহক সেবায় আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

সমকাল: প্রগতি লাইফের কার্যক্রম কেমন চলছে?

জালালুল আজিম: গত বছর প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রিমিয়াম আয় হয়েছে ৪৭২ কোটি টাকা। এর আগের বছরে যা ছিল ৩৯২ কোটি টাকা। এক বছরে আমাদের ব্যবসায় ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বীমা দাবি নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে আমাদের সুনাম রয়েছে। ২০১৩-এর মাঝামাঝি আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যবসায় প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি অনুশাসন মেনে চলার দিকে নজর দিয়েছি। ফলে ২০১৬ সাল থেকে আমরা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয় নির্ধারিত সীমার চাইতে অনেক কম খরচ করেছি। এতে কোম্পানির পলিসি গ্রাহক ও শেয়ারহোল্ডারদের বেশি পরিমাণে বোনাস প্রদান করতে পারছি।