- বিবিধ
- খুদে শিক্ষার্থীদের উষ্ণতায় মুগ্ধ সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা
মানবিকতা
খুদে শিক্ষার্থীদের উষ্ণতায় মুগ্ধ সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের হাতে পোশাক বইখাতা কলম তুলে দেয় তাদের বয়সী শিশুরা। ফরিদপুর সদরের চরদিয়ারা এলাকা থেকে তোলা - সমকাল
পদ্মার দুর্গম চরে একঝাঁক খুদে শিক্ষার্থী ছোটাছুটি করছিল। সবার হাতে ছিল সোয়েটার, জ্যাকেটসহ শীতের নতুন পোশাক, বই, খাতা, কলম, বক্সসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ। এগুলো তারা দান করবে সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের। ঠান্ডায় উষ্ণতা ও পড়ালেখার আনন্দ অন্য খুদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে অধীর আগ্রহে তারা অপেক্ষা করছিল সেই শিশুদের জন্য। তাদের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর আনন্দ-উচ্ছ্বাস আরও বেড়ে যায়। একে-অপরের সঙ্গে কুশল বিনিময় ও সংগ্রামী জীবনের পথ চলার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে তারা।
গত রোববার এ দৃশ্য দেখা যায় ফরিদপুর জেলার সদর উপজেলার পানিবেষ্টিত চরদিয়ারা নারিকেলবাড়িয়ায়। নিজেদের টিফিনের টাকা জমিয়ে ও শিক্ষক-অভিভাবকদের থেকে সহায়তা নিয়ে এ মানবিক উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে দোহারের লিবার্টি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষার্থীরা।
এ স্কুলের আগামী বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী প্রতিভা, এশা, বুশরা ও মিরাজ জানায়, শিক্ষকরা তাদের ভালো ছাত্রের পাশাপাশি উত্তম মানুষ হওয়ার কথা প্রাত্যহিক সমাবেশে প্রতিদিন বলেন। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো ও সাহায্য করার জন্য উপদেশ দেন। তাঁদের অনুপ্রেরণায় শিশু থেকে দশম শ্রেণির সবাই মিলে মানবিক কাজের জন্য নির্দিষ্ট বাক্সে টাকা জমাতে থাকে। বছর শেষে প্রত্যন্ত এলাকায় সুবিধাবঞ্চিত মানুষের হাতে সেগুলো তুলে দেয়। এবার তাদের উষ্ণতার ছোঁয়া পেয়েছে চর নারিকেলবাড়িয়া গ্রামের নন্দলালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
লিবার্টি স্কুলের শিক্ষার্থীরা বলল, নদী পার হয়ে এমন চরে যেতে প্রথমে ভয়ই লাগছিল। পরে শিক্ষকরা যখন চরের মানুষের সংগ্রামী ও পরিশ্রমী জীবন সম্পর্কে বর্ণনা দিলেন ও ঘুরে ঘুরে দেখালেন, তখন নিজেদের অপরাধী ভাবতে শুরু করলাম- আমরা কেন আরও আগে তাদের পাশে দাঁড়াইনি, এটি ভেবে। আমরা তাদের শুধু শীতের পোশাক ও শিক্ষা উপকরণ দেইনি, বরং হৃদয়ের নিংড়ানো ভালোবাসা দিয়েছি। সমাজের বিত্তবান লোকদের উচিত, চরাঞ্চলের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো।
চরের শিশুরা জানায়, দুর্গম এই চরে তাদের দেখার জন্যও কেউ আসতে চায় না। তাই তাদের অবস্থা কেউ জানতে পারে না। স্থানীয় অধিকাংশ মানুষ নিম্নবিত্ত হওয়ায় এই শীতে গরম কাপড় ও নতুন বছরের নতুন বই পাওয়া নিয়ে তাদের শঙ্কা ছিল। লিবার্টি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মানবিক উদ্যোগে সেই শঙ্কা অনেকটাই কেটে গেছে। এভাবে অন্যরাও এগিয়ে এলে তাদের আর পিছিয়ে থাকতে হতো না।
লিবার্টি স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবুল এহসান মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, 'আমরা পরীক্ষায় সেরা ফলাফলের পাশাপাশি সত্যিকারের মানুষও বানাতে চাই। এ প্রতিষ্ঠানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ মানবিক শিক্ষা। গত বছর এ উদ্যোগের যাত্রা শুরু হয়। এ জন্য আরও বেশি সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা দরকার।
এ কার্যক্রমের পৃষ্ঠপোষক দোহারের নারিশা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মেহেদী হাসান ফারুক বলেন, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমন উদ্যোগ এ প্রথম দেখলাম। সন্তানদের এ মানবিক শিক্ষাটা দেওয়াও জরুরি।
ফরিদপুর সদরের চর দিয়ারা নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন বলেন, ইউনিয়নটি পানিবেষ্টিত হওয়ায় দাতারাও এখানে কম আসতে চান। লিবার্টি স্কুলের শিক্ষার্থীদের মতো অন্যরাও এভাবে উদ্যোগ নিলে সুবিধাবঞ্চিত এ এলাকার শিশুরাও এগিয়ে যেতে পারবে।
মন্তব্য করুন