- বিবিধ
- যেভাবে তিন হিন্দু সন্তানের মা হয়ে ওঠেন এক মুসলিম নারী
যেভাবে তিন হিন্দু সন্তানের মা হয়ে ওঠেন এক মুসলিম নারী

লীলা, শানাওয়াস, শ্রীধরন ও জাফার খান। আরও দুই ভাই-বোনসহ এরা একসঙ্গে বেড়ে উঠেছেন। ছবি- বিবিসি থেকে নেওয়া।
ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালায় এক মুসলিম নারী তিন হিন্দু ছেলে-মেয়েকে নিজের সন্তানদের সঙ্গে বড় করেছিলেন। কয়েক বছর আগে এ ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর এই কাহিনী নিয়ে এখন তৈরি হয়েছে একটি চলচ্চিত্র। বিবিসির ইমরান কোরেশি কথা বলেছেন এই ভাই-বোনদের সঙ্গে, যাদের মাকে নিয়ে এই ছবি।
জাফার খান যখন প্রথম এন্নু সোয়াথাম শ্রীধরন (আপনার একান্ত, শ্রীধরন) ছবিটি দেখেন, তিনি কেঁদে ফেলেছিলেন। কিন্তু ছবি দেখার সময় পাশে বসা তার ভাই শ্রীধরনের অবস্থা ছিল আরও খারাপ। তার কান্না থামানোই যাচ্ছিল না।
জাফার খান এবং শ্রীধরন- দুজনেরই বয়স এখন ৪৯। তাদের মধ্যে কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই। জাফার খান একজন মুসলিম, শ্রীধরন হিন্দু। কিন্তু জাফার খানকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় শ্রীধরন তার কী হয়, উত্তরে তিনি বলেন, “ও আমার ভাই। না, তার চেয়েও বেশি কিছু। ও সবসময় আমার পাশে থাকে। আমি জানি না ও কে… কিন্তু ও আমার সঙ্গী।”
যে নারী এদের এক সঙ্গে বড় করেছেন- জাফার খানের মা, তার নাম থেন্নানদান সুবাইদা। তিনি মারা যান ২০১৯ সালে। তাঁর জীবন ধর্মীয় ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে উঠে মানবিকতার জয়গান গাওয়া এক মায়ের মন ভালো করা কাহিনী। ভারতে যখন ধর্মীয় মেরুকরণ এবং সাম্প্রদায়িক বিভেদ নিয়মিত খবরে পরিণত হয়েছে, তখন এই মুসলিম নারীর জীবনের গল্প বহু মানুষকে আলোড়িত করেছে।
শ্রীধরন এবং তার দুই বড় বোন রামানি ও লীলা- এই তিনজনকেই বড় করেছেন সুবাইদা। শ্রীধরনের মা চাক্কি ১৯৭৬ সালে চতুর্থ সন্তানের জন্ম দেওয়ার সময় মারা যান। পরে সেই সন্তানও বাঁচেনি। চাক্কি সুবাইদার বাড়িতে গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করতেন। তার মৃত্যুর পর তিন সন্তানের দায়িত্ব নেন সুবাইদা। তবে তিনি আইনগতভাবে এদের দত্তক নেননি। কারণ, তখন সন্তান দত্তক নেয়ার জন্য আইন অত কড়াকড়ি করা হয়নি।
মা-হারানো তিন ভাইবোনকে আশ্রয় দেয়ার মতো কোনো আত্মীয়-স্বজন যখন পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন তাদের বাবা সুবাইদাকে অনুমতি দেন এই তিনজনের দায়িত্ব নেওয়ার। শ্রীধরন বলেন, তার বাবার সাধ্য ছিল না তাদের দেখাশোনা করার।
সুবাইদার নিজেরই তখন দুটি ছেলে সন্তান- জাফার খান এবং তার বড় শানাওয়াস। চার বছর পর জশিনা নামে একটি কন্যা সন্তানও হয়। একই পরিবারে চমৎকার সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এরা বেড়ে ওঠেন। সূত্র: বিবিসি।
মন্তব্য করুন