বিকেলে একটু কম হলেও গতকাল সন্ধ্যা নামতেই পাঠকের আনাগোনা বাড়ে বইমেলায়। শীতের সন্ধ্যায় ভিড় বাড়লেও বিক্রি খুব একটা বাড়েনি। অমর একুশে গ্রন্থমেলার তৃতীয় দিনও দর্শনার্থীর আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল মেলা প্রাঙ্গণের স্থাপত্যশৈলী। তারা এদিক-ওদিক ঘুরে দেখছিলেন। তবে সবাই খালি হাতে ফেরেননি। কেউ কেউ ঠিকই পছন্দের বই সংগ্রহ করেছেন।

মেলার তৃতীয় দিনে নতুন বই এসেছে ৮১টি। তবে তথ্যকেন্দ্রের এ পরিসংখ্যানের বাইরেও রয়ে গেছে অনেক বই।

গতকাল বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী বই প্রকাশ করেছে ঝালকাঠি পাবলিকেশন্স। বঙ্গবন্ধুর দুর্লভ ১০০টি ছবি ও ইতিহাস নিয়ে রচিত হয়েছে 'কেন তিনি জাতির পিতা' নামের এ বই। লেখক-রাজনীতিবিদ অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম বলেন, সাদাকালো ছবিকে রঙিন করে ব্যবহার করা হয়েছে, যা দুর্লভ। সঙ্গে রয়েছে প্রামাণিক ইতিহাস।

আগামী প্রকাশনীতে কথা হয় লেখিকা শেখ মুসলিমা মুনের সঙ্গে। তার বাবা একাত্তরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুস সালাম। তার 'স্বাধীনতা শব্দটি আমার শহীদ বাবার সমার্থক' নামে কবিতার বই গতকালই প্রকাশ পেয়েছে। মোড়ক উন্মোচন করতেই কয়েকটি বই বিক্রি হয়েছে দেখে উদ্বেলিত মুন বলেন, দেশের সব শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের প্রতিনিধি হয়ে তিনি বইটি লিখেছেন। মুক্তিযুদ্ধের পাশাপাশি, ভাষা, একুশ এবং জীবনবোধের নানা চিত্র ফুটে উঠেছে তার কবিতায়।

বিকেলে 'লেখক বলছি' মঞ্চে কথা বলেন কথাশিল্পী হাবিব আনিসুর রহমান, কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, লেখক অঞ্জন আচার্য এবং শিশুসাহিত্যিক পলাশ মাহবুব। সামনে বসে তন্ময় হয়ে পুরো আলোচনা শোনেন কয়েকজন তরুণ-তরুণী- ঢাকার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থী আইনুল কবির, ফয়েজ আহমেদ, রশিদ উল্যাহ, তাসনিম তাবাচ্ছুম এবং তাহমিনা আক্তার। তারা জানান বিকেলে মেলার দুয়ার খুলতেই ঢুকেছেন। এবার মেলার স্টলবিন্যাস ও নানা কারুকার্য তাদের নজর কেড়েছে। এখানে অনেকটা সময় কাটিয়ে দিলেও খারাপ লাগবে না।

অন্যপ্রকাশে দায়িত্বরত ফজলে রাব্বী বলেন, পাঠক ও ক্রেতারা  জনপ্রিয় লেখদের বই যেমন খুঁজছেন, তেমনি নবীনদের বই নিয়েও আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তবে ক্রেতারা এখনও কেনার চেয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন বেশি।

নতুন বই : তৃতীয় দিনে ৮১টি নতুন বই প্রকাশের তথ্য রয়েছে বাংলা একাডেমিতে। এর মধ্যে হাসান আজিজুল হকের 'আমার রবীন্দ্রযাপন' (ইত্যাদি), আলম তালুকদারের 'রূপকথার আজবকথা' (পাঞ্জেরী), হারুন-অর-রশিদের 'বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব :কী ও কেন' (বাংলা একাডেমি), আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর 'গান্ধীর দর্শন ও শেখ মুজিবের রাজনীতি' (আগামী), নির্মলেন্দু গুণের 'অনুবাদিত কবিতাসমূহ' (বাতিঘর), আবু হাসান শাহরিয়ারের 'শৈশবের সিঁড়িগুলো' (ভাষাচিত্র), রফিকুল ইসলামের 'মুক্তিযুদ্ধ সমগ্র' (আগামী), পান্না কায়সারের 'একাত্তরের শহীদ শহীদুল্লা কায়সার' (আগামী), ইমতিয়ার শামীমের 'সুখেদুখে বৃষ্টিনদী' (কথা প্রকাশ), সুমন্ত আসলামের 'যদি কখনো' (অন্যপ্রকাশ), জফির সেতুর 'শ্রীভূমির রবীন্দ্রনাথ' (নাগরী), আনা ইসলামের 'প্যারিসের কররেখা' (অন্যপ্রকাশ), সাদাত হোসাইনের 'মেঘের দিন' (অন্যপ্রকাশ), শামসুর রাহমানের 'উপন্যাস সমগ্র' (অনন্যা) অন্যতম।

মেলামঞ্চে যা হলো : বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ রচিত 'বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব :কী ও কেন' শীর্ষক আলোচনা। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক গোবিন্দ চক্রবর্তী। আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক এম অহিদুজ্জামান এবং সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু। লেখকের বক্তব্য দেন অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কবি কামাল চৌধুরী।

প্রাবন্ধিক বলেন, বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের প্রধান লক্ষ্যই তৎকালীন বিদ্যমান সমাজব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন। ব্যাপক ও বিস্তৃত কর্মসূচির সার-সংক্ষেপের কারণে 'বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব :কী ও কেন' গ্রন্থটির ব্যাপক প্রচার ও পাঠ কাম্য।

সভাপতির বক্তব্যে কামাল চৌধুরী বলেন, তরুণ প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দর্শন তুলে ধরার যে দায়িত্ব রয়েছে তা শুধু আবেগ দিয়ে পালন করা সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন গবেষণা ও অনুসন্ধিৎসু মন নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সামগ্রিক জীবনের পর্যালোচনা।

এরপর কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি কাজী রোজী, কবি সানাউল হক খান, দিলারা হাফিজ ও কবি আসাদ মান্নান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী বেলায়েত হোসেন, গোলাম সারোয়ার ও ঝর্ণা সরকার। সংগীত পরিবেশন করেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, লিলি ইসলাম, সারোয়ার হোসেন বাবু ও জয়ন্ত আচার্য।

আজকের আয়োজন : আজ মেলার চতুর্থ দিন। বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে। বিকেল ৪টায় মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে অজয় দাশগুপ্ত রচিত 'বঙ্গবন্ধুর আন্দোলন কৌশল ও হরতাল' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সুভাষ সিংহ রায়। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন নূহ-উল-আলম লেনিন এবং আবু সাঈদ খান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন রামেন্দু মজুমদার। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ, আবৃত্তি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।