
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শুক্রবার বইমেলায় ছিল উপচেপড়া ভিড় - সমকাল
প্রান্তরে পড়ূয়াদের প্রাণোচ্ছল উচ্ছ্বাস। হাতে হাত রেখে পাশাপাশি অনেকেই হেঁটে চলছেন। অনেকে আবার দলবেঁধে দেখছেন নতুন বই। একুশের এই বিশেষ দিনে মায়াবী বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বইমেলা ছিল অনিন্দ্যসুন্দর। তবে পড়ন্ত বিকেলে টিএসসি-সংলগ্ন মেলার প্রবেশপথগুলোয় যেন জনপ্লাবন বইতে থাকে। সব প্রবেশপথ দিয়ে সারিবদ্ধভাবে ঢুকতে থাকেন দর্শনার্থীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হিমশিম খেতে হয় এমন অবস্থায়।
যখন সন্ধ্যা নামছিল, স্বাধীনতা স্তম্ভের পশ্চিম পাশটায় এক ইঞ্চি জায়গায়ও খালি ছিল না। প্যাভিলিয়ন থেকে প্যাভিলিয়নে যেতে কিংবা স্টলের মাঝামাঝি প্রশস্ত পথে হাঁটতেও ভিড়ের চাপে অস্থির হতে হচ্ছিল সবাইকে। তবে ভিড়ের ধাক্কা স্পর্শ করেছে গতকাল কেনাকাটাকেও। দিনভর লাখো দর্শনার্থীর ভিড়ে পাঠকও যে কম ছিলেন না, বিক্রয়কর্মীদের হাসিমুখ সে কথাই বলছিল।
গতকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে যুক্ত হয় অমর একুশের বিশেষত্ব। বইপ্রেমীদের বেশভূষায়ও ছিল ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসার প্রকাশ। সাদা-কালোর স্রোত বইছিল মেলাজুড়ে। সকাল ৮টায় খুলে যায় মেলার দুয়ার। উন্মুক্ত ছিল তা রাত সাড়ে ৮টা অবধি। দূর-দূরান্ত থেকে শহীদ মিনারমুখী স্রোতের দ্বিতীয় গন্তব্য ছিল বইমেলা প্রাঙ্গণ। মাসব্যাপী মেলায় এটিই ছিল দীর্ঘতম দিন। নতুন বই প্রকাশেও রেকর্ডগড়া দিন ছিল কাল। এসেছে ৫০৮টি নতুন বই। গতকালের সকালটা ছিল গুরুগম্ভীর পাঠকে পরিপূর্ণ। দুপুরের আগ পর্যন্ত মেলা ছিল শিশুদের। বিকেল থেকে এটি হয়ে ওঠে মধ্যবয়সীদের। আর সন্ধ্যা নামার পর তাতে বয়ে যায় তারুণ্যের ঢেউ। বয়োজ্যেষ্ঠ পাঠকেরা কিনেছেন অনুবাদগ্রন্থ, প্রবন্ধগ্রন্থ এবং মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলন বিষয়ক বই। শিশুরা কাছে টেনেছে সিসিমপুরের প্রিয় চরিত্রগুলোকে। কিনেছে পছন্দের ছড়াগ্রন্থ, কার্টুনের বই আর ভূত-কাহিনি। তরুণদের পছন্দের শীর্ষে ছিল সায়েন্স ফিকশন, রহস্যগল্প। আর হাতে হাত ধরে ঘুরে বেড়ানো জুটিদের আগ্রহ ছিল প্রেম-বিরহের গল্প-উপন্যাস।
একই বয়সী অন্য শিশুরা যখন ভূত-সমগ্র কিংবা রংচটা মলাটের শিশুতোষ গ্রন্থে মশগুল, ঋদ্ধকে তখন ব্যস্ত দেখা গেল মুহম্মদ জাফর ইকবালের নতুন সায়েন্স ফিকশনের খোঁজে। মোহাম্মদপুরের সেন্ট যোসেফ হাইস্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ঋদ্ধ তানজিম মেলায় এসেছিল মা-বাবার হাত ধরে। ফেরার পথে তার দু'হাতে বইয়ের থলেগুলো আঁটছিল না। আবার হাতছাড়াও করতে চাইছিল না সে, যদি তার পছন্দের বই নিয়ে কেটে পড়ে কেউ!
'সায়েন্স ফিকশন নিয়মিত পড়ো?'- ঋদ্ধর জবাব, 'অন্য লেখকের বইও পড়ি। তবে জাফর ইকবালের সায়েন্স ফিকশন খুবই ভালো লাগে। একবার হাতে পেলে পুরো বই শেষ না করে ছাড়ি না।' এবার মোশতাক আহমেদ এবং রকিব হাসানের সায়েন্স ফিকশনের বইও কিনেছে সে।
কথাপ্রকাশের স্বত্বাধিকারী জসিম উদ্দিন বলেন, সকালে প্রচুর অনুবাদগ্রন্থ বিক্রি হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ এবং ভাষা আন্দোলন বিষয়ক বইয়ের বিক্রিও ভালো।
বাংলা একাডেমির বইমেলা প্রাঙ্গণেও গতকাল তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। মেলার দুই প্রাঙ্গণেই কাল বিরক্তির কারণ হয়ে উঠেছিল অতিরিক্ত ধূলি। জনপল্গাবন ঠেলে মেলাপ্রাঙ্গণ থেকে বের হতে হিমশিম খেতে হয়। দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি রাজু ভাস্কর্য এবং শাহবাগ মোড় থেকে শহীদ মিনার হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত সড়কজুড়ে নেমেছিল মানুষের মিছিল।
বিকেল সাড়ে ৩টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গ্রন্থ উন্মোচন মঞ্চে পাঠ-উন্মোচন হয় উৎস প্রকাশন থেকে আসা কাব্যগ্রন্থ 'বুকের ভিতর নদী'র। সত্তর বসন্ত পেরুনো রওশন আরা সিদ্দিকীর বই বলেই কিনা দারুণ উচ্ছ্বাস দেখা যায় দর্শনার্থীদের মধ্যেও। গ্রন্থটির পাঠ-উন্মোচন করেন সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি। এ সময় তিনি প্রকাশিত গ্রন্থ থেকে একটি কবিতা আবৃত্তি করেন।
মঞ্চে রওশন আরা সিদ্দিকীকে ঘিরে তার পরিবারের সদস্য জিয়া মহিউদ্দিন সিদ্দিকী, ডা. আয়েশা সিদ্দিকা তপু, কে এ জে হাসেমী, নুরজাহান আক্তার, রাকিব হাবিবসহ স্বজন ও ভক্তানুরাগীদের উচ্ছ্বাস ছিল দেখার মতো। প্রকাশক মোস্তফা সেলিমও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
পরে রওশন আরা সিদ্দিকী বলেন, সত্তরের দশকে তিনি নিয়মিত লিখতেন। তার প্রথম লেখা ছাপা হয় ষাটের দশকে দৈনিক আজাদে। বেগম পত্রিকায়ও নিয়মিত লিখতেন। কবিতার পাশাপাশি গল্প ও সায়েন্স ফিকশনও লেখেন তিনি। দীর্ঘদিন এই সৃজনশীলতা মনের ভেতরে ধারণ করলেও তা ছড়িয়ে দেওয়ার প্রথম প্রয়াস এই 'বুকের ভিতর নদী'।
নানা আয়োজন :বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজীর নেতৃত্বে একাডেমির পক্ষ থেকে ভাষা আন্দোলনের অমর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে সকাল সাড়ে ৭টায় অনুষ্ঠিত হয় স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। এতে শতাধিক নবীন-প্রবীণ কবি কবিতা পাঠে অংশ নেন। সভাপতিত্ব করেন কবি রুবী রহমান। বিকেল ৪টায় মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় অমর একুশে বক্তৃতা। 'বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ ও সাম্প্রতিক উন্নয়ন প্রসঙ্গ' শীর্ষক একুশে বক্তৃতা দেন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন হাবীবুল্লাহ সিরাজী। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ তার সকল সমস্যা ও সংকট সত্ত্বেও উন্নয়নের ধারায় যে অনেক ধাপ এগিয়ে গেছে, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তবে উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সম্পদের ন্যায়পূর্ণ বণ্টন নিশ্চিতের মাধ্যমে বৈষম্য দূর করতে হবে এবং সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবনের সার্বক্ষণিক চিন্তা ছিল বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে। তার 'সোনার বাংলা' প্রত্যয়ে দেশ বাংলা ও বাঙালি এ দুই ধারণাই গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন, বাংলাদেশ ভৌগোলিক আয়তনে ছোট, জনসংখ্যায় বিশাল, এদেশের মানুষকে বাঁচাতে হলে খাদ্যসহ সকল ক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়াতে হবে, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর দেশ-দর্শনে সামাজিক ও শ্রেণিগত বৈষম্য আদৌ গ্রহণযোগ্য ছিল না। মহান এই নেতার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মতোই অসমসাহসী ও বিচক্ষণ।
হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, এ বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মহান পরম্পরায় ২০২২ সালে ভাষা আন্দোলনের সত্তর বছর পূর্তি হতে চলেছে। বাংলা একাডেমি জাতীয় জীবনের এই তিন মাহেন্দ্রক্ষণকে স্মরণীয় করে রাখতে এখন থেকেই নানা কর্মসূচি নিচ্ছে।
'লেখক বলছি' অনুষ্ঠানে গতকাল নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন জি এইচ হাবীব, শাহেদ কায়েস, শিল্পী রহমান ও সুহান রিজওয়ান।
কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন মিনার মনসুর, শিহাব সরকার, আনিসুল হক এবং শেখর বরণ দাশ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মো. জালাল উদ্দিন হীরা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল ফকির সিরাজের পরিচালনায় ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর পরিবেশনা।
আজকের আয়োজন :আজ মেলার দ্বার খুলবে সকাল ১১টায়। প্রথম দুই ঘণ্টা শিশুপ্রহর। শিশুদের জন্য সিসিমপুরের আয়োজন থাকছে আজও। পাশাপাশি আজ ১১টায় শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া হবে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর এমপি।
বিকেল ৪টায় হবে শামসুজ্জামান খান সম্পাদিত 'বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ :বহুমাত্রিক বিশ্নেষণ' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
যখন সন্ধ্যা নামছিল, স্বাধীনতা স্তম্ভের পশ্চিম পাশটায় এক ইঞ্চি জায়গায়ও খালি ছিল না। প্যাভিলিয়ন থেকে প্যাভিলিয়নে যেতে কিংবা স্টলের মাঝামাঝি প্রশস্ত পথে হাঁটতেও ভিড়ের চাপে অস্থির হতে হচ্ছিল সবাইকে। তবে ভিড়ের ধাক্কা স্পর্শ করেছে গতকাল কেনাকাটাকেও। দিনভর লাখো দর্শনার্থীর ভিড়ে পাঠকও যে কম ছিলেন না, বিক্রয়কর্মীদের হাসিমুখ সে কথাই বলছিল।
গতকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে যুক্ত হয় অমর একুশের বিশেষত্ব। বইপ্রেমীদের বেশভূষায়ও ছিল ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসার প্রকাশ। সাদা-কালোর স্রোত বইছিল মেলাজুড়ে। সকাল ৮টায় খুলে যায় মেলার দুয়ার। উন্মুক্ত ছিল তা রাত সাড়ে ৮টা অবধি। দূর-দূরান্ত থেকে শহীদ মিনারমুখী স্রোতের দ্বিতীয় গন্তব্য ছিল বইমেলা প্রাঙ্গণ। মাসব্যাপী মেলায় এটিই ছিল দীর্ঘতম দিন। নতুন বই প্রকাশেও রেকর্ডগড়া দিন ছিল কাল। এসেছে ৫০৮টি নতুন বই। গতকালের সকালটা ছিল গুরুগম্ভীর পাঠকে পরিপূর্ণ। দুপুরের আগ পর্যন্ত মেলা ছিল শিশুদের। বিকেল থেকে এটি হয়ে ওঠে মধ্যবয়সীদের। আর সন্ধ্যা নামার পর তাতে বয়ে যায় তারুণ্যের ঢেউ। বয়োজ্যেষ্ঠ পাঠকেরা কিনেছেন অনুবাদগ্রন্থ, প্রবন্ধগ্রন্থ এবং মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলন বিষয়ক বই। শিশুরা কাছে টেনেছে সিসিমপুরের প্রিয় চরিত্রগুলোকে। কিনেছে পছন্দের ছড়াগ্রন্থ, কার্টুনের বই আর ভূত-কাহিনি। তরুণদের পছন্দের শীর্ষে ছিল সায়েন্স ফিকশন, রহস্যগল্প। আর হাতে হাত ধরে ঘুরে বেড়ানো জুটিদের আগ্রহ ছিল প্রেম-বিরহের গল্প-উপন্যাস।
একই বয়সী অন্য শিশুরা যখন ভূত-সমগ্র কিংবা রংচটা মলাটের শিশুতোষ গ্রন্থে মশগুল, ঋদ্ধকে তখন ব্যস্ত দেখা গেল মুহম্মদ জাফর ইকবালের নতুন সায়েন্স ফিকশনের খোঁজে। মোহাম্মদপুরের সেন্ট যোসেফ হাইস্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ঋদ্ধ তানজিম মেলায় এসেছিল মা-বাবার হাত ধরে। ফেরার পথে তার দু'হাতে বইয়ের থলেগুলো আঁটছিল না। আবার হাতছাড়াও করতে চাইছিল না সে, যদি তার পছন্দের বই নিয়ে কেটে পড়ে কেউ!
'সায়েন্স ফিকশন নিয়মিত পড়ো?'- ঋদ্ধর জবাব, 'অন্য লেখকের বইও পড়ি। তবে জাফর ইকবালের সায়েন্স ফিকশন খুবই ভালো লাগে। একবার হাতে পেলে পুরো বই শেষ না করে ছাড়ি না।' এবার মোশতাক আহমেদ এবং রকিব হাসানের সায়েন্স ফিকশনের বইও কিনেছে সে।
কথাপ্রকাশের স্বত্বাধিকারী জসিম উদ্দিন বলেন, সকালে প্রচুর অনুবাদগ্রন্থ বিক্রি হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ এবং ভাষা আন্দোলন বিষয়ক বইয়ের বিক্রিও ভালো।
বাংলা একাডেমির বইমেলা প্রাঙ্গণেও গতকাল তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। মেলার দুই প্রাঙ্গণেই কাল বিরক্তির কারণ হয়ে উঠেছিল অতিরিক্ত ধূলি। জনপল্গাবন ঠেলে মেলাপ্রাঙ্গণ থেকে বের হতে হিমশিম খেতে হয়। দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি রাজু ভাস্কর্য এবং শাহবাগ মোড় থেকে শহীদ মিনার হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত সড়কজুড়ে নেমেছিল মানুষের মিছিল।
বিকেল সাড়ে ৩টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গ্রন্থ উন্মোচন মঞ্চে পাঠ-উন্মোচন হয় উৎস প্রকাশন থেকে আসা কাব্যগ্রন্থ 'বুকের ভিতর নদী'র। সত্তর বসন্ত পেরুনো রওশন আরা সিদ্দিকীর বই বলেই কিনা দারুণ উচ্ছ্বাস দেখা যায় দর্শনার্থীদের মধ্যেও। গ্রন্থটির পাঠ-উন্মোচন করেন সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি। এ সময় তিনি প্রকাশিত গ্রন্থ থেকে একটি কবিতা আবৃত্তি করেন।
মঞ্চে রওশন আরা সিদ্দিকীকে ঘিরে তার পরিবারের সদস্য জিয়া মহিউদ্দিন সিদ্দিকী, ডা. আয়েশা সিদ্দিকা তপু, কে এ জে হাসেমী, নুরজাহান আক্তার, রাকিব হাবিবসহ স্বজন ও ভক্তানুরাগীদের উচ্ছ্বাস ছিল দেখার মতো। প্রকাশক মোস্তফা সেলিমও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
পরে রওশন আরা সিদ্দিকী বলেন, সত্তরের দশকে তিনি নিয়মিত লিখতেন। তার প্রথম লেখা ছাপা হয় ষাটের দশকে দৈনিক আজাদে। বেগম পত্রিকায়ও নিয়মিত লিখতেন। কবিতার পাশাপাশি গল্প ও সায়েন্স ফিকশনও লেখেন তিনি। দীর্ঘদিন এই সৃজনশীলতা মনের ভেতরে ধারণ করলেও তা ছড়িয়ে দেওয়ার প্রথম প্রয়াস এই 'বুকের ভিতর নদী'।
নানা আয়োজন :বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজীর নেতৃত্বে একাডেমির পক্ষ থেকে ভাষা আন্দোলনের অমর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে সকাল সাড়ে ৭টায় অনুষ্ঠিত হয় স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। এতে শতাধিক নবীন-প্রবীণ কবি কবিতা পাঠে অংশ নেন। সভাপতিত্ব করেন কবি রুবী রহমান। বিকেল ৪টায় মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় অমর একুশে বক্তৃতা। 'বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ ও সাম্প্রতিক উন্নয়ন প্রসঙ্গ' শীর্ষক একুশে বক্তৃতা দেন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন হাবীবুল্লাহ সিরাজী। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ তার সকল সমস্যা ও সংকট সত্ত্বেও উন্নয়নের ধারায় যে অনেক ধাপ এগিয়ে গেছে, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তবে উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সম্পদের ন্যায়পূর্ণ বণ্টন নিশ্চিতের মাধ্যমে বৈষম্য দূর করতে হবে এবং সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবনের সার্বক্ষণিক চিন্তা ছিল বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে। তার 'সোনার বাংলা' প্রত্যয়ে দেশ বাংলা ও বাঙালি এ দুই ধারণাই গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন, বাংলাদেশ ভৌগোলিক আয়তনে ছোট, জনসংখ্যায় বিশাল, এদেশের মানুষকে বাঁচাতে হলে খাদ্যসহ সকল ক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়াতে হবে, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর দেশ-দর্শনে সামাজিক ও শ্রেণিগত বৈষম্য আদৌ গ্রহণযোগ্য ছিল না। মহান এই নেতার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মতোই অসমসাহসী ও বিচক্ষণ।
হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, এ বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মহান পরম্পরায় ২০২২ সালে ভাষা আন্দোলনের সত্তর বছর পূর্তি হতে চলেছে। বাংলা একাডেমি জাতীয় জীবনের এই তিন মাহেন্দ্রক্ষণকে স্মরণীয় করে রাখতে এখন থেকেই নানা কর্মসূচি নিচ্ছে।
'লেখক বলছি' অনুষ্ঠানে গতকাল নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন জি এইচ হাবীব, শাহেদ কায়েস, শিল্পী রহমান ও সুহান রিজওয়ান।
কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন মিনার মনসুর, শিহাব সরকার, আনিসুল হক এবং শেখর বরণ দাশ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মো. জালাল উদ্দিন হীরা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল ফকির সিরাজের পরিচালনায় ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর পরিবেশনা।
আজকের আয়োজন :আজ মেলার দ্বার খুলবে সকাল ১১টায়। প্রথম দুই ঘণ্টা শিশুপ্রহর। শিশুদের জন্য সিসিমপুরের আয়োজন থাকছে আজও। পাশাপাশি আজ ১১টায় শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া হবে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর এমপি।
বিকেল ৪টায় হবে শামসুজ্জামান খান সম্পাদিত 'বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ :বহুমাত্রিক বিশ্নেষণ' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, আবৃত্তি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
মন্তব্য করুন