তন্ময় মোদক |
তন্ময় মোদক
প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২১
আপডেট: ২১ মার্চ ২০২১
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২১ । আপডেট: ২১ মার্চ ২০২১ । প্রিন্ট সংস্করণ
সেদিন হয়েছে বাসি! একটা সময় এমন ছিল যে, শুক্র আর শনিবার মানেই বইমেলায় শিশুদেরই রাজত্ব। এ দুটি দিনের শিশুপ্রহরে সিসিমপুরে আসত হালুমসহ নানা প্রিয় চরিত্র। ইকরিমিকরিসহ শিশুদের বইয়ের স্টলে ভিড় জমে থাকত। এ বছরও মেলা আছে, কিন্তু নেই চিরচেনা শিশুপ্রহরের কলরব। তাই ছুটির দিনেও কেমন খাঁ-খাঁ করেছে শিশুচত্বর। করোনা মহামারির কারণে এবার শিশুপ্রহর রাখা হয়নি। অভিভাবকরাও সতর্কতার কারণে বইমেলায় বাচ্চাদের নিয়ে আসতে ভরসা পাচ্ছেন না। যদিও ব্যাংক কর্মকর্তা আসিফ আহমেদের মত ভিন্ন।
গতকাল বিকেলে একমাত্র সন্তান তাসিনকে সঙ্গে করেই মেলায় এসেছিলেন আসিফ আহমেদ। তার মতে, করোনা মহামারি চলছে বছরের বেশি সময় ধরে। ঢাকায় খেলার মাঠ নেই বললেই চলে। বাচ্চারা যাবে কোথায়? তারা যদি বইমেলায় ঘুরে বই কিনতে পারে, তাহলে মানসিক দিক থেকে ভালো থাকবে। প্রকাশনা সংস্থাগুলোর কর্মীরা জানান, বাচ্চাদের জন্য ছবিওয়ালা বইগুলোই বেশি বিক্রি হচ্ছে। ইকরিমিকরির বিক্রয়কর্মী বিপ্লব জানান, মূলত তিন থেকে পাঁচ বছরের বাচ্চাদের বই প্রকাশ করছেন তারা। এবার বাচ্চারা মেলায় এলেও ভিড় ততটা নেই। বিক্রিও তেমন হচ্ছে না। তবে বিপ্লবের আশা কয়েকদিন গেলে বিক্রি বাড়বে।
শনিবার সকাল ১১টায় মেলা শুরু হলেও লোকসমাগম তেমন ছিল না। মেলার তিন দিন পার হলেও অনেক স্টল সাজানো এখনও শেষ হয়নি। এছাড়া দিনের বেলা রোদের তাপও ছিল বেশি, বেশিরভাগ স্টলেই আলাদা করে কাপড় টানাতে হয়েছে রোদের তেজ ঠেকাতে। বিকেলে অবশ্য রোদ নেমে যাওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ভিড়। সন্ধ্যায় রীতিমতো লাইন ধরে ধাক্কাধাক্কি করে ঢুকতে হয়েছে মেলায়। তবে ভিড় বাড়লেও বেশিরভাগ স্টলে বিক্রির চিত্র তেমন আশাব্যঞ্জক ছিল না। কয়েকটি স্টলের বিক্রয়কর্মীরা জানান, এদিন তাদের বিক্রি শুক্রবারের তুলনায় কম হয়েছে। অবশ্য সব স্টলের দৃশ্য এরকম ছিল না। বেশ কয়েকটি স্টলে পাঠকরা বই কিনেছেন লাইন ধরে। মূলত যে স্টলগুলোতে জনপ্রিয় লেখকরা বসে ছিলেন, সেখানে কিছু বই বাড়তি বিক্রি হয়েছে।
স্বাধীনতা স্তম্ভের পশ্চিম দিকের সারিতে গিয়ে পাওয়া গেল খ্যাতিমান গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে। স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন মিডিয়াকর্মী ও পাঠকের সঙ্গে। এবারের বইমেলায় ভাষাচিত্র এনেছে তার লেখা 'অল্প কথার গল্প গান' বইটি। তিনি গল্পের ছলেই বলেন, বইটিতে প্রায় দুই হাজার গানের সংকলন করা হয়েছে। গানগুলো সৃষ্টির পেছনের কাহিনি বলার চেষ্টা করেছেন।
মেলায় শুক্রবার নতুন বই এসেছিল ৫৫টি। গতকাল বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্র থেকে ১০৪টি নতুন বই আসার ঘোষণা দেওয়া হয়। এদের মধ্যে আগামী প্রকাশনী থেকে বেরিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার 'মাই ফাদার, মাই বাংলাদেশ', আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর 'হাসিনা ও রেহানা অ-রূপকথার দুই বোন', হাসনাত আবদুল হাইয়ের 'দিনলিপি ২০২০', বিমল গুহের 'শেখ মুজিবের তর্জনী'; কথাপ্রকাশ থেকে আহমদ রফিকের 'স্মরণীয় বরণীয় আপন বৈশিষ্ট্যে', হাসান আজিজুল হকের 'সুগন্ধি সমুদ্র পার হয়ে', আফসান চৌধুরীর '১৯৭১ :অসহযোগ আন্দোলন ও প্রতিরোধ'; সময় থেকে সেলিনা হোসেনের 'বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ সমগ্র-১', আনিসুল হকের 'চার কিশোর অভিযান'; অন্যপ্রকাশ থেকে শাইখ সিরাজের 'করোনাকালে বহতা জীবন', সাদাত হোসাইনের 'তোমার নামে সন্ধ্যা নামে', শিশুগ্রন্থ কুটির থেকে ঝর্ণাদাশ পুরকায়স্থের 'জাদুকর ও আইসক্রীমের ঘর', অনন্যা থেকে পিয়াস মজিদের 'হৃদয় গ্যালারী', তাম্রলিপি থেকে মুহম্মদ জাফর ইকবালের 'বনবালিকা', আহমদ পাবলিশিং হাউস থেকে ড. আনু মাহমুদের 'বঙ্গবন্ধু ইতিহাসের স্রষ্টা', জোনাকী প্রকাশনী থেকে অনীশ দাস অপুর অনুবাদগ্রন্থ 'প্রাইভেট লাইফ অব দ্য মুঘল অব ইন্ডিয়া', ঐতিহ্য থেকে আলতাফ পারভেজের 'ধানচাষের প্রতিবেদন' উল্লেখযোগ্য। এই তিন দিনে মেলায় মোট বই এসেছে ১৫৯টি। তবে সংখ্যাটি শুধু তথ্যকেন্দ্রে জমা পড়া বইয়ের। এর বাইরেও প্রচুর বই এসেছে মেলায়। এছাড়া 'লেখক বলছি' অনুষ্ঠানে নিজেদের বই নিয়ে আলোচনা করেন আবদুস সেলিম, শাহেদ কায়েস এবং আঁখি হক।
মূল মঞ্চের অনুষ্ঠান: বিকেলে বইমেলার মূলমঞ্চে 'স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে আবুল মোমেনের লেখা প্রবন্ধ পড়েন বাংলা একাডেমির সহপরিচালক সাহেদ মন্তাজ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আবুল কাশেম এবং ফওজুল আজিম। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক খুরশীদা বেগম।
প্রাবন্ধিক বলেন, ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭২ গণপরিষদে খসড়া শাসনতন্ত্র অনুমোদন উপলক্ষে প্রদত্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের আলোকে দেশের চারটি মৌলিক আদর্শ সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। ১২ অক্টোবর ১৯৭২ স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের অধিবেশনে তিনি এ সংবিধানকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে নির্দেশনা হিসেবে আখ্যায়িত করেন, অর্থাৎ এটির মূল ভাবধারাকে স্থায়ী হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন তিনি। ৪ নভেম্বর ১৯৭২ সংবিধান বিলের ওপর দীর্ঘ ভাষণেও তিনি এর মূল চার স্তম্ভের কথা আবেগ দিয়ে আবারও বলেছেন। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র থেকে স্বাধীনতার স্বপ্ন রূপ পেয়েছে বাস্তব স্বাধীন দেশে।
আলোচকরা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা ও ঘোষণাপত্র নিয়ে অনেক অযথা বিতর্কের জন্ম দেওয়া হয়েছে, এ সম্পর্কিত ইতিহাসকে রাষ্ট্রীয় প্রভাব খাটিয়ে বিকৃত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এ নিয়ে কোনো বিভ্রান্তির অবকাশ নেই।
আজকের অনুষ্ঠানসূচি: আজ রোববার মেলার চতুর্থ দিনে গেট খুলবে বিকেল ৩টায়। চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে হবে 'স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী :স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী। এছাড়া আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন কল্যাণী ঘোষ, বুলবুল মহলানবীশ এবং আশরাফুল আলম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন রামেন্দু মজুমদার।
মন্তব্য করুন