
ছবি: ফাইল
সাত বছরের শিশু রুবানা। ৩২ নম্বর ধানমন্ডি থেকে বইমেলায় এসেছে সে বাবা-মা আর নানা-নানুর সঙ্গে। আর আসবে না কেন? শিশু প্রহর শুরু হচ্ছে- এ খবর চাউর হয়ে গেছে বৃহস্পতিবারেই। তাই এসেছে সে খুব কাছ থেকে হালুম, টুকটুকি, শিকু আর ইকরির সঙ্গে দেখা করতে। মনের সে আশা মিটেছেও তার। কথায় কথায় জানালো রুবানা, টিভিতে প্রতিদিনই সিসিমপুর দেখি আমি। কিন্তু হালুম, টুকটুকিকে কাছ থেকে কখনও তো দেখা হয়নি। ওদের সঙ্গে দেখার জন্য আজ মেলায় এসেছি।
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় গতকাল শুক্রবারের দিনটি ছিল শুধুই শিশুদের। করোনাজনিত পরিস্থিতিতে এর আগের শুক্রবার শিশু প্রহর বন্ধ ছিল। কিন্তু সংক্রমণ পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসায় মেলায় এ কার্যক্রম ফের শুরু করেছে মেলা কর্তৃপক্ষ।
অতএব, এটা খুব স্বাভাবিক যে গতকালের মেলা জমে উঠেছিল সকাল থেকেই। সকাল সাড়ে ১১টায় শিশু প্রহরের মূল আকর্ষণ ছিল 'সিসিমপুর'-এর হালুম, টুকটুকি, শিকু আর ইকরি। সামনে থেকে নিজেদের প্রিয় চরিত্রদের দেখতে পেয়ে তাদের সঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠে শিশুরা। দুপুর ১টা পর্যন্ত চলে এই আনন্দ মেলা।
অমর একুশে গ্রন্থমেলার অন্যতম আকর্ষণ এই শিশু প্রহর। তবে করোনার কারণে গত বইমেলায় এ কার্যক্রম বন্ধ ছিল। বন্ধ ছিল এবারের আয়োজনের শুরুতেও। এ নিয়ে বেশ মন খারাপই ছিল শিশুদের। তবে গত বৃহস্পতিবার শিশু প্রহরের ঘোষণা আসার পর অভিভাবকরাও খুশি হয়েছেন। আজ শনিবারও শিশু প্রহরের এই আয়োজন থাকছে। ছুটির দিন বলে গতকাল সকাল ১১টা থেকেই মেলায় আসতে থাকেন গ্রন্থানুরাগী। পাশাপাশি এসেছিল শিশুরা তাদের বাবা-মা-অভিভাবকদের সঙ্গে। এমনকি বিকেলেও মেলা প্রাঙ্গণে দেখা গেছে অনেক শিশুকে।
অভিভাবকদের সঙ্গে মেলায় ঘুরতে এসেছিল শিশু রাফসান। সে জানাল, হালুমকে ভারি পছন্দ তার। বিশেষ করে হালুমের মজা করে মাছ খাওয়া তার খুবই পছন্দের। হালুম যখন মাছ খায়, তখন হেসে কুটিকুটি হয় সে। সারাবছর টিভির পর্দায় দেখলেও বইমেলার দিনগুলোয় হালুমকে সামনাসামনি দেখে খুব আনন্দ হয় তার।
দীর্ঘ দুই বছর ঘরবন্দি থাকার পর মুক্ত পরিবেশে শিশুদের এভাবে আনন্দে মেতে উঠতে দেখে খুশি অভিভাবকরাও। তারা জানান, অনেক দিন ধরে ঘরে থাকতে থাকতে শিশুরা খুব অন্য রকম হয়ে পড়ছিল। শিশু প্রহর তাদের জন্য আনন্দের বার্তা নিয়ে এসেছে। এ সময় তারা শিশুদের সাহিত্যের প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার জন্য বাংলা একাডেমির প্রতি আহ্বান জানান।
অভিভাবক রিফাত বৈশাখী বললেন, মেলা কর্তৃপক্ষের উচিত, শিশু প্রহরকে ঘিরে আরও কার্যক্রম হাতে নেওয়া। তার মতে, দেশি রূপকথার 'নীলকমল', 'লালকমলে'র মতো অনেক চরিত্রও শিশুদের খুব প্রিয়। শিশুরা যাতে মাটির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে, সে জন্য এসব চরিত্রকেও সৃজনশীল উপায়ে জনপ্রিয় করা প্রয়োজন।
শিশু চত্বরের মেলা প্রকাশের প্রকাশক এম এস দোহা জানান, এবারের মেলাকে ইতিবাচক করে তোলার ক্ষেত্রে শিশুদের বইয়ের প্রতি আগ্রহই বড় ভূমিকা রাখছে। তারা যে বইমুখী হচ্ছে, এটা সব দিক থেকেই আনন্দের।
এবারের শিশু প্রহর আয়োজনের ক্ষেত্রে অন্যতম উদ্বেগের বিষয় ছিল, স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করে শিশুদের নিরাপদ রাখা। অভিভাবকদের এ ব্যাপারে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন শিশু প্রহরের আয়োজকরা।
এ বিষয়ে সিসিমপুরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম জানান, স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় শিশু প্রহরে প্রচুর মাস্ক রাখা হয়েছে। যেসব বাচ্চা মাস্ক পরে আসেনি, তাদের মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া হাত স্যানিটাইজ করারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আশা করছি, শিশুরা নিরাপদে এ আয়োজন উপভোগ করতে পারবে।
মন্তব্য করুন