
পৃথিবীজুড়েই লেগেছে করোনার ঝাঁকুনি। ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি, রাজনীতি, বিজ্ঞান নেয় নতুন মোড়। সাহিত্যিকদের ভাবনার আকাশে পা ফেলে নতুন অনুষঙ্গ। তারা করোনাকালের ঘটনাপ্রবাহ এবং করোনাপরবর্তী করণীয় নিয়ে গল্প, উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, চিকিৎসাশাস্ত্র, অর্থনীতি, রাজনীতি, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে লিখেছেন বই। অমর একুশে বইমেলায় করোনাকে প্রতিপাদ্য করে প্রকাশ পেয়েছে অনেক বই। সমকাল বিভিন্ন প্যাভিলিয়ন ও স্টল থেকে করোনাপ্রবাহের বইয়ের খোঁজ করেছে। মেলার অধিকাংশ স্টল ও প্যাভিলিয়নে রয়েছে করোনাকে প্রতিপাদ্য করে বই।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান সদ্য প্রয়াত তারেক শামসুর রেহমান। তিনি তার মৃত্যুর আগে করোনাকালের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে 'করোনা পরবর্তী বিশ্বরাজনীতি' বইটি প্রকাশ করেন। বইটি প্রকাশ করেছে শোভা প্রকাশ।
অধ্যাপক ড. অরূপ রতন চৌধুরীর 'করোনাভাইরাসের সঙ্গে মাদক ও তামাকের সম্পর্ক' বইটি আগামী প্রকাশনী প্রকাশ করেছে। একই প্রকাশনী থেকে প্রকাশ হয়েছে শিতাংশু গুহের 'করোনার কথা'। প্রথমা থেকে প্রকাশ হয়েছে 'কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস :যা জানা দরকার' শীর্ষক বই। ড. মাইকেল মোসলি রচিত বইটি ভাষান্তর করেছেন আবুল বাসার। কথাপ্রকাশ থেকে প্রকাশ হয়েছে খসরু পারভেজ সম্পাদিত 'করোনাকালের কবিতা :আরও এক বিপন্ন বিস্ময়' শিরোনামে কবিতার বই। একই প্রকাশনা থেকে বের হয়েছে আবু মো. দেলোয়ার হোসন রচিত 'করোনাকালীন ভাবনায় সেকাল-একাল'। ঐতিহ্য নিয়ে এসেছে স্লাভোয় জিজেক রচিত 'প্যানডেমিক২ :ক্রনিক্লস অব অ্যা টাইম লস্ট' বই। এটি অনুবাদ করেছেন ড. মাসুদ আলম। ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্তের লেখা 'করোনা কাহিনি' বইটি এবারের বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে ভোরের কাগজ প্রকাশনের স্টলে। সময় প্রকাশনী থেকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের 'করোনাকালে' প্রকাশ পেয়েছে। অনুপম প্রকাশনা থেকে এসেছে সৌমেন সাহার 'কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোগের ইতিকথা'।
করোনাকালের হালচাল নিয়ে বিভিন্ন শিশুতোষ সাহিত্য রচনা করেছেন কবি-সাহিত্যিকরা। জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের দুটি বইয়ে এবার উঠে এসেছে করোনা ও করোনাকাল। শিশুদের জন্য তার গুড্ডুবুড়া সিরিজের 'গুড্ডুবুড়ার করোনার প্রতিরোধক আবিস্কার' প্রকাশ হয়েছে প্রথমা প্রকাশনী থেকে। পার্ল পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশ হয়েছে লেখকের 'করোনাকালের কৌতুক' শিরোনামের আরেকটি বই।
বরেন চক্রবর্তী করোনাকালের ঘটনাপ্রবাহ থেকে 'অনিন্দিতার করোনাযুদ্ধ' উপন্যাস সৃষ্টি করেছেন। নতুন এ উপন্যাসটি অবসর প্রকাশনী প্রকাশ করেছে। সিরাজ উদ্দিন সাথীর করোনা নিয়ে নতুন উপন্যাস 'করোনাকালের দিবারাত্রি' অক্ষর প্রকাশনী থেকে এসেছে। ঝুমঝুমি প্রকাশনী এনেছে ব্রত রায়ের উপন্যাস 'লেইট লতিফ'। বাংলানামা থেকে প্রকাশ হয়েছে ওয়াদুদ খানের 'করুণাহীন করোনার দিন' শিরোনামে উপন্যাস। অনন্য প্রকাশনী থেকে ফারুক হোসেনের 'করোনা কাউকে করে না করুণা' প্রকাশ হয়েছে।
করোনার ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেছেন অনেক লেখক। কবি মানস প্রকাশনী থেকে এসেছে নিত্য রঞ্জন পালের 'করোনার কাব্য'। এবং মানুষ থেকে প্রকাশ পেয়েছে ভোলা দেবনাথের 'করোনাকালীন পঙক্তিতে কবিতা' এবং আনোয়ার কামালের 'ভুল সাইরেন বেজে ওঠে'। সপ্তর্ষি প্রকাশনী থেকে বেরিয়েছে সনজয় কুমার রায়ের 'করোনা পদাবলী'।
করোনাকাল এবং করোনাপরবর্তী অর্থনীতির হালচাল নিয়ে অর্থনীতিবিদরা তাদের গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান লিখেছেন 'করোনাকালের অর্থনীতি'। বইটি ভোরের কাগজ প্রকাশন স্টলে পাওয়া যাচ্ছে। ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদের 'করোনাকালে বাংলাদেশের সমাজ ও অর্থনীতি' বইটি প্রকাশ করেছে আগামী প্রকাশনী। প্রথমা থেকে এসেছে রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর রচিত 'যুদ্ধোত্তর কাল থেকে করোনাকাল :বাংলাদেশের পঞ্চাশ বছরের রাজনৈতিক অর্থনীতি' বই।
করোনাকালের বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে চিকিৎসকরাও লিখেছেন বিভিন্ন গ্রন্থ ও প্রবন্ধ। ডা. কামরুল হাসান খানের 'করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ, সতর্কতা এবং ভ্যাকসিন' প্রকাশ করেছে আগামী প্রকাশনী। মাওলা ব্রাদার্স থেকে ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) তার করোনার সময়কার চিত্র নিয়ে লিখেছেন 'কোভিড-১৯'। ড. মিহির কান্তি মজুমদারের 'বিদ্যালয় স্বাস্থ্য ও পুষ্টি শিক্ষা' বইটি ঝুমঝুমি প্রকাশনী থেকে প্রকাশ হয়েছে। ডা. নজরুল ইসলামের করোনার ঘটনাবলি নিয়ে লেখা 'তিনশত পঁয়ষট্টি দিন' বইটি প্রকাশ করেছে ঝালকাঠি পাবলিকেশন্স। পুথিনিলয় প্রকাশনী প্রকাশ করেছে শিশুদের করোনা ঝুঁকি নিয়ে ড. প্রণব কুমার চৌধুরীর 'করোনা ঝুঁকি ও শিশুস্বাস্থ্য' বই।
ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) সমকালকে বলেন, 'করোনার শুরু থেকে ওমিক্রন ঢেউ পর্যন্ত হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা দিয়েছি। এ সময় রোগীদের চিকিৎসাসেবায় ওষুধের অপ্রতুলতা, ভ্যাকসিন আবিস্কার, ভ্যাকসিন আসা পর্যন্ত চিকিৎসা পদ্ধতি আমার বইয়ে বর্ণনা করেছি।'
সাংবাদিক ও লেখক আনিসুল হক বলেন, 'করোনাকালীন বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে কৌতুক ও শিশুসাহিত্য রচনা করেছি।'
নতুন বই: গতকাল শনিবার ছিল বইমেলার ১২তম দিন। মেলা চলে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মেলায় ছিল আজ শিশুপ্রহর। এদিন নতুন বই এসেছে ১১৯টি। শব্দশৈলী থেকে আহমেদ রেজার একাত্তরের স্মৃতিচারণ, ময়ূরপংখি থেকে ইউয়ান ইয়ুসওয়ানদির মেঘের পিঠে চড়ে, আর্দশ থেকে দেলাওয়ার জাহানের ক্যাঁক, সুচয়নী পাবলিশার্স থেকে খাতুনে জান্নাত কুমকুমের শীতের চুলোয় লাল আগুনের ঘ্রাণ, বাংলা একাডেমি থেকে নূহ-উল-আলম লেনিনের রাজনীতিতে হাতেখড়ি ও কলকাতায় শেখ মুজিব, বেহুলা বাংলার জীবনকৃষ্ণ বসুর কবিতালোক, কথাপ্রকাশের নিকোস কাজানজাকিসের জোরবা দ্য গ্রিক, প্রত্যয় প্রকাশনের সেলিনা হোসেনের শহীদ দিবসের শহীদ মিনার ইত্যাদি বই এসেছে।
আলোচনা ও সাংস্কৃৃতিক অনুষ্ঠান: বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় অমর একুশের সাহিত্য ও সংস্কৃতি শীর্ষক আলোচনা। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ। মফিদুল হকের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন খালেদ হোসাইন, আহমাদ মোস্তফা কামাল ও ফারহান ইশরাক।
লেখক বলছি: লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি খালেদ হোসাইন এবং কথাসাহিত্যিক পারভেজ হোসেন। অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মিনার মনসুর, স্নিগ্ধা বাউল ও রহমান শেলী। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী অঞ্চল চৌধুরী, মুজাহিদুল ইসলাম ও মাসুদুজ্জামান। সাংস্কৃৃতিক পর্বে ছিল 'কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর', 'উচ্চারক' ও 'নৃত্যাঙ্গন'-এর শিল্পীদের পরিবেশনা।
আজকের অনুষ্ঠান: আজ রোববার বইমেলা চলবে দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে 'জন্মশতবার্ষিকী শ্রদ্ধাঞ্জলি :সত্যজিৎ রায়' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মইনুদ্দীন খালেদ। আলোচনায় অংশ নেবেন বিধান রিবেরন ও মোস্তাক আহমাদ দীন। সভাপতিত্ব করবেন ম. হামিদ। সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃৃতিক অনুষ্ঠান।
মন্তব্য করুন