
বিশ্ববিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলামের নাম অনুসন্ধিৎসু কে না জানেন! এবারের বইমেলার একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, তার বিখ্যাত 'দি আলটিমেট ফেইট অব দ্য ইউনিভার্স' বইটির অনুবাদ নিয়ে এসেছে নাগরী প্রকাশনী। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে ১৯৮৩ সালে প্রথম প্রকাশিত হওয়ার পরপরই সারাবিশ্বের অনুসন্ধিৎসু পাঠকের মন জয় করে এ বই। দুর্ভাগ্যই বলতে হবে; বাংলায় অনুবাদ হয়ে আসতে সেটির এত দীর্ঘ সময় লেগে গেল! 'মহাবিশ্বের চূড়ান্ত পরিণতি' নামে বাংলায় বইটি অনুবাদ করেছেন অনঙ্গভূষণ দাস।
শুধু এটিই নয়; এবারের বইমেলায় বিজ্ঞানের অনেক বই বেরিয়েছে, যা অনুসন্ধিৎসু পাঠকদের মনের খোরাক হয়ে উঠেছে। মেলা ঘুরে দেখা গেল, বিজ্ঞানের বইয়ের প্রতি পাঠকদের আগ্রহ যেমন বেড়েছে, তেমনি প্রকাশনীগুলোরও এ ধরনের বই প্রকাশে উৎসাহ বেড়েছে।
ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড ও প্রকৃতি-পরিচয় এ মেলায় যৌথভাবে নিয়ে এসেছে আরাফাত রহমানের 'জেনেটিক্স :বংশগতিবিদ্যার সহজ পাঠ'। প্রকৃতি-পরিচয় আগের বইমেলাগুলোতেও সাধারণ পাঠকদের পড়ার উপযোগী বিজ্ঞানের বিষয়ভিত্তিক বই নিয়ে এসেছে। কথাপ্রকাশ থেকে এসেছে সফিক ইসলামের লেখা 'নারী ও গণিত', যেটিকে ঘিরে ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিয়েছে ক্রেতাদের মধ্যে।
বাতিঘরে গিয়ে দেখা গেল, অনেকেই কিনছেন মুহম্মদ জাফর ইকবালের 'ইলেকট্রনিকসের প্রথম পাঠ'। প্রতিষ্ঠানটির এক বিক্রয়কর্মী জানালেন, তাদের প্রকাশনীর বিজ্ঞানের বই তেমন নেই। এ বইটি ঘিরে ক্রেতাদের আগ্রহে তারা খুবই খুশি।
বিদ্যাপ্রকাশ থেকে এসেছে আবু তাহের সরফরাজের লেখা 'ছোটদের পদার্থবিজ্ঞান'। তিনি নিজে কবিতা লেখেন, থাকেন ফরিদপুরে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল বইটি লেখার নেপথ্যের মজার কাহিনী। আবু তাহের সরফরাজ তার মেয়ে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ছায়াবীথি শ্যামলিমাকে পদার্থবিদ্যা বই পড়াতে গিয়ে আবিস্কার করেন, সহজভাবে আনন্দের সঙ্গে সেটা সে পড়তে পারছে না। মেয়েকে সহজে পদার্থবিজ্ঞানের পাঠ দিতে তিনি নিজেই লিখে ফেলেন এ বই।
এবারের মেলায় এসেছে ফারসীম মান্নান মোহাম্মদীর বিজ্ঞানবিষয়ক দুটি বই- 'জানা-বোঝার ভিতর-বাহির' (বৈভব) ও 'এলিয়েনের সন্ধানে' (প্রথমা)। এ ছাড়াও এসেছে- প্রদীপ দেবের 'রোগনির্ণয় ও চিকিৎসায় পদার্থবিজ্ঞান', আবদুল গাফফারের 'বোস আইনস্টাইন কন্ডেনসেট', নিল ডিগ্র্যাস টাইসন ও গ্রেগরি মোনের 'অ্যাস্ট্রোফিজিক্স', মিচিও কাকুর 'দ্য গড ইকুয়েশন' (প্রথমা); এমরান রহমানের 'এক্সোপ্লানেটের সাতকাহন' ও সৌমিত্র চক্রবর্তীর 'জীবকোষ :তা নয় তুমি যা ভাবছ' (অনুপম); তৌহিদুর রহমান নয়নের 'জেনেটিক্সের গল্প' (তাম্রলিপি), আবদুল্লাহ ইবনে মাহমুদের 'নিকোলা টেকসা :ভুল সময়ে জন্ম নেয়া এক কিংবদন্তি উদ্ভাবক' এবং মিশাল ইসলামের 'সৃষ্টির উল্লাসে রোবটিকস' (আদর্শ প্রকাশনী); নাঈম হোসেন ফারুকীর 'চা কফি আর জেনারেল রিলেটিভিটি' (প্রান্ত); খন্দকার রেজাউল করিমের 'কাল্পনিক বিতর্ক' (সৃজন); হাসান উজ-জামান শ্যামলের 'এটাই সায়েন্স-২' (অধ্যয়ন); ইশতিয়াক হোসেন চৌধুরীর 'একটুখানি জ্যোতির্বিজ্ঞান' (অন্বেষা) ইত্যাদি গ্রন্থ।
গতকালের মেলায় দেখা মিলল ইতিহাসবিদ, লেখক মুনতাসীর মামুনের। ঘুরে ঘুরে স্টলে তিনি বই খুঁজছিলেন। তিনি বললেন, মেলায় এখনও অনেক লেখক আসছেন না। আগের মতো লেখক ও পাঠকের মেলবন্ধন সৃষ্টি হচ্ছে না।
মেলায় গতকাল ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল কম। তাই বিক্রিও ছিল তুলনামূলক কম। কথাপ্রকাশের মার্কেটিং কর্মকর্তা শেখ ইউনূস সাপ্তাহিক ছুটির দুই দিন আবারও ভিড় বাড়বে বলে আশা করছেন। আগামী প্রকাশনীর কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বললেন, এখন যারা মেলায় আসছেন, তারা বইও কিনছেন।
নতুন বই :গতকাল মঙ্গলবার অমর একুশে বইমেলার ২২তম দিনে মেলা চলে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। গতকাল নতুন বই এসেছে ৭৭টি। গতকাল এসেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা 'কারাগারের রোজনামচা' বইয়ের জার্মান অনুবাদ 'GEFANGNISTA GEBUCHER'। অনুবাদ করেছেন মিজানুর আর. খান। এ ছাড়াও এসেছে- সারোয়ার জাহানের উপন্যাস 'হৃদয়ের কম্পাঙ্ক', রামেন্দু মজুমদারের সম্পাদনায় প্রবন্ধগ্রন্থ 'বাঙালির রাষ্ট্রসাধনা ও বঙ্গবন্ধু' ইত্যাদি।
আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান :বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় 'সংগীত ও কবিতায় একুশের চেতনা' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাইম রানা। আলোচনায় অংশ নেন ফেরদৌস হোসেন ভূঁইয়া, এ এফ এম হায়াতুল্লাহ এবং মুস্তাফিজ শফি। সভাপতিত্ব করেন নিরঞ্জন অধিকারী।
'লেখক বলছি' অনুষ্ঠানে নিজেদের বই নিয়ে আলোচনা করেন নাসিমা আনিস ও জাহানারা পারভীন।
আজকের অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি শাহ কামাল সবুজ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী রোকসানা পারভীন স্মৃতি এবং ঝর্ণা আলমগীর। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয় 'সুরতাল সংগীত একাডেমি'।
আজকের অনুষ্ঠান :আজ বুধবার অমর একুশে বইমেলার ২৩তম দিনে মেলা চলবে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে 'বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সরকার আবদুল মান্নান। আলোচনায় অংশ নেবেন কেরামত মওলা, গোলাম কুদ্দুছ এবং সৌম্য সালেক। সভাপতিত্ব করবেন কবি কামাল চৌধুরী। সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
মন্তব্য করুন