
উষ্ণতা বাড়ছে প্রকৃতিতে। সঙ্গে সঙ্গে বইমেলার পর্দা নামার সময়ও ঘনিয়ে আসছে। এখন তাই পছন্দের তালিকা ধরে বই কিনছেন ক্রেতা-পাঠকরা। এই সময়ে ক্রেতারা ইতিহাস-গবেষণা, প্রবন্ধ জাতীয় বই-ই কিনছেন বেশি।
দীর্ঘদিন ধরে অনুসন্ধিৎসু পাঠকরা শুনে আসছেন ভারতবর্ষের রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে আবদুর রাজ্জাকের থিসিস করার কথা, যা শেষ পর্যন্ত জমা না দিয়েই বিদেশ থেকে ফিরে আসেন তিনি। চলতি বছর গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছে তার সে থিসিস। 'পলিটিক্যাল পার্টিজ ইন ইন্ডিয়া' নামে এই গবেষণাগ্রন্থটি প্রকাশ করেছে ইউপিএল। এটি ঘিরে ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিয়েছে পাঠকদের মধ্যে।
কথাপ্রকাশের ম্যানেজার ইউনুস আলী বললেন, কেবল গবেষণার কাজে এবং পাঠ্যপুস্তক হিসেবেই নয়; অনেক সাধারণ পাঠকও ইতিহাস-গবেষণার বই কিনছেন। কথাপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত সিরাজ সালেকীন সম্পাদিত গবেষণাগ্রন্থ 'ভিক্ষুকের গান :জীবন ও জীবিকার সুরলিপি' ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে ২৪৬৯টি বই। এর মধ্যে ইতিহাসের বই আছে ৫০টি। গবেষণার বই বের হয়েছে ৭০টি।
অনুপম প্রকাশনীর প্রকাশক মিলন কান্তি নাথ জানালেন, দেশের ও আন্তর্জাতিক ইতিহাস জানানোর জন্যই প্রতিবছর তারা গবেষণা ও ইতিহাসের বই প্রকাশ করেন। যে জাতি যত বেশি ইতিহাস চর্চা করে, গবেষণা করে; সে জাতি তত উন্নত হয়ে থাকে।
মেলায় আসা ইতিহাস ও গবেষণামূলক গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- আবুল কাসেম ফজলুল হকের 'ছয় দফা আন্দোলন ও বাংলাদেশ' (জাগৃতি), মাসুদুজ্জামানের 'বিশ্বসাহিত্যতত্ত্ব ও চর্চা' (মাওলা), রণেশ দাশগুপ্ত অনূদিত ও সম্পাদিত হেনরি এলেগের 'জিজ্ঞাসা' (টাঙন), আবুল হাসনাত সম্পাদিত 'বঙ্গবন্ধু জন্মশতবর্ষ স্মারক', বিশ্বজিৎ ঘোষ সম্পাদিত 'বিদ্যাসাগর :জন্মদ্বিশতবর্ষ স্মারক' ও মুহম্মদ তওফিকের 'রফিকুন নবী :শিল্পীর জীবন ও কর্ম' (বেঙ্গল পাবলিকেশন্স), জিএম আরিফুজ্জামানের 'জেনোসাইড অধ্যয়ন' (অন্বেষা), মামুন সিদ্দিকীর 'ঐতিহাসিক মানসজগৎ :মুনতাসীর মামুনের সাক্ষাৎকার' (জার্নিম্যান বুকস), সুনীতি ভূষণ কানুনগোর 'বাংলায় বৈষ্ণব আন্দোলন' (বাতিঘর), আহমেদ মাওলার 'সত্তর দশকের কথাসাহিত্য' (উত্তরণ), আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদের 'মক্কা, মদিনা, জেরুজালেম' (অন্যধারা), একেএম আবদুল আউয়াল মজুমদারের 'বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ইতিহাস' (শোভা প্রকাশ), রফিকুল ইসলাম রফিকের 'ঢাকা শহরে উর্দু সংস্কৃতি' (সালাউদ্দিন বইঘর), মুত্তালিব বিশ্বাসের 'সংগীত ভাবনা' (সময়), জফির সেতুর 'ঘাটুগান ঘাটুসংস্কৃতি' (নাগরী), মোস্তাক আহমাদ দীন সম্পাদিত 'বাঙ্গালা দেশের যে সকল দুর্বৃত্ত জাতি' ও কাজী একরামের 'প্রাচ্যবাদ ও কোরআন' (চৈতন্য) ইত্যাদি।
অন্বেষা প্রকাশনী থেকে 'দ্য আনটোল্ড স্টোরি' বইটি কিনেছেন মহিউদ্দিন রিফাত। তিনি বললেন, নতুন ও পুরাতনকে জানার জন্য প্রত্যেক মেলা থেকে ইতিহাস ও গবেষণার বই সংগ্রহ করি। এ বছরও মেলা থেকে পাঁচটি বই সংগ্রহ করেছি।
পুথিনিলয় পাবলিকেশন্সের বিক্রয়কর্মী পরমা সাহা বললেন, ইতিহাস ও গবেষণাধর্মী বইয়ের এক শ্রেণির পাঠক আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবীরা এ ধরনের বই বেশি কেনেন।
অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন বলেন, দেশ ও জাতির এগিয়ে যাওয়ার জন্য ইতিহাস ও গবেষণাচর্চা জরুরি। সাংস্কৃতিকভাবে উচ্চ মননশীলতার জন্য গবেষণার বিকল্প নেই।
গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল অমর একুশে বইমেলার ২৪তম দিন। মেলা চলে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। আজ নতুন বই এসেছে ৫৯টি। গত কয়েক দিনের নতুন বইয়ের মধ্যে রয়েছে- মুহম্মদ জাফর ইকবালের 'পরমানব' (সময়), মিজানুর রহমান খানের 'আইন আদালত সংবিধান' (প্রথমা), মুজতবা আহমেদ মুরশেদের 'বোধের হৃদয়ে জ্বলে ওঠা এপিটাফ' (অনন্যা), আফসানা বেগমের 'মুখোশের আড়ালে' (কথাপ্রকাশ), সুহান রিজওয়ানের 'গ্রাফিতিও প্রশ্ন করে' (বাতিঘর) ইত্যাদি।
আলোচনা ও সাংস্কৃৃতিক অনুষ্ঠান :বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় 'আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলা সাহিত্যচর্চা' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আহমাদ মাযহার। আলোচনায় অংশ নেন জসিম মল্লিক এবং শামস আল মমীন। সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলাদেশের সাহিত্য অনূদিত হয়ে আন্তর্জাতিক পরিসর পাক- সে তৃষ্ণা বাংলাদেশের সাহিত্য-সমাজ বোধ করেছে এবং এই প্রেরণা থেকেই প্রধানত ইংরেজি ভাষায় বাংলা সাহিত্যের অনুবাদ করতে চেয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের আত্মশক্তির বিকাশ হলে সাহিত্যেও তার প্রতিফলন ঘটবে এবং আন্তর্জাতিক মহলেরও বাংলা সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হবে। এ জন্য সাহিত্যে নিজস্ব জীবনবোধের সমন্বয় ঘটাতে হবে, মানসম্পন্ন অনুবাদ করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলা সাহিত্যের প্রচার ও পৃষ্ঠপোষকতা বাড়াতে হবে।
'লেখক বলছি' অনুষ্ঠানে নিজেদের বই নিয়ে আলোচনা করেন বিশ্বজিৎ ঘোষ এবং সঞ্জীব পুরোহিত।
এদিনের অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী আবু নাসের মানিক ও মাসুদ রানা। সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় ছিল 'কাশফুল সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ' এবং 'আমরা কুঁড়ি'র পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী বদিয়ার রহমান, আঁখি আলম, ওয়াদুদুর রহমান রাহুল, আবুল বাশার আব্বাসী, ডালিয়া সুলতানা, মো. আরিফুর রহমান। যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন আব্দুল আজিজ, সুমন কুমার শীল, আনোয়ার সাহদাত রবিন ও মো. হাসান আলী।
আজকের অনুষ্ঠান :আজ শুক্রবার অমর একুশে বইমেলার ২৫তম দিন। মেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত রয়েছে 'শিশুপ্রহর'। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে 'নান্দনিক সমাজ গঠনে আবৃত্তির ভূমিকা' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন নিমাই মণ্ডল। আলোচনায় অংশ নেবেন লায়লা আফরোজ এবং শাহাদাৎ হোসেন নিপু। সভাপতিত্ব করবেন জাহিদুল হক। সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃৃতিক অনুষ্ঠান।
মন্তব্য করুন