কেউ এসেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, কেউবা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, কেউ আবার এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই। এ রকম বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন এলাকার তারুণ্যের জোয়ার বইছিল গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনের বইমেলা প্রাঙ্গণে। তাদের অনেকে এসেছিলেন যুগলবন্দি হয়ে, অনেকে এসেছিলেন দলবদ্ধ হয়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত একটা পরিচয়ই বড় হয়ে উঠেছিল- তরুণ তারা, নতুন প্রজন্মের মানুষ তারা। তাদের জোয়ারে প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠেছিল মেলা প্রাঙ্গণ।

মেলার বিভিন্ন স্টলের ব্যবস্থাপক, বিক্রয়কর্মীরাও সে রকমই বললেন। জানালেন, অন্য যে কোনো দিনের তুলনায় তরুণ পাঠকের উপস্থিতি বেশি ছুটির দিনের মেলায়। রাজধানীর আশপাশের জেলা থেকেও এসেছেন কেউ কেউ। তাদের দৃষ্টি তরুণ লেখকদের বইয়ের দিকেও। হাসান রোবায়েত, সালাহ উদ্দিন সুমন, সাদাত হোসাইন, মৌরি মরিয়ম, মালেক মোস্তাকিমসহ বিভিন্ন তরুণ লেখক রয়েছেন এই পাঠকদের আগ্রহের জায়গাতে।

অন্যধারা প্রকাশে বিক্রয়কর্মী তানিয়া হক বলেন, অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ তরুণ পাঠকের সংখ্যা বেশি। তারা বইও কিনছেন। তরুণ লেখকদের বইয়ের চাহিদাও আজ বেশি।

তাম্রলিপি প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী নকীব রহমান বলেন, সকাল থেকেই মেলায় মানুষ বেশি, বিক্রিও ভালো। সবচেয়ে বড় কথা, তরুণ লেখকদের বইয়ের বিক্রি বেড়েছে।

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফ আশরাফ বলেন, অন্যদিনগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস থাকে, মেলায় আসার সময় করে উঠতে পারি না। আজ ছুটির দিন সবাই দলবেঁধে এসেছি মেলায়।

ঘুরেছি, আড্ডা দিয়েছি, বই দেখেছি, কিনেছি। দু'জন প্রিয় তরুণ লেখকের বই কিনলাম।

মেলায় গতকাল সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ছিল 'শিশুপ্রহর'। নানা বয়সের শিশুদের পদচারণায় মুখরিত ছিল শিশু চত্বর। কথা হয় লিটল গার্লস স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মারিয়াম শান্তার সঙ্গে। সে বলছিল, আপুর সঙ্গে মেলায় এসেছি, কমিক্স কিনেছি, কালার পেন্সিল কিনেছি, অনেক ঘোরাঘুরি করেছি, অনেক মজা হয়েছে।

এমনই আনন্দমুখর ছিল মেলায় আসা প্রতিটি শিশু। শিশুদের মুখে হাসি ফোটাতে পেরে খুশি অভিভাবকরাও। ছোট ভাই আরিয়ান মুন্নাকে নিয়ে মেলায় এসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তামান্না তাসনীম। তিনি বলেন, ছোটদের মুখে হাসি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য। মেলায় এসে ছোট ভাই নতুন বই পেয়ে অনেক খুশি। তার মুখে হাসি দেখে সত্যি অনেক ভালো লাগছে।

ছোটদের মেলার প্রকাশক ফয়সাল বলেন, অন্য শুক্রবারগুলোর তুলনায় আজ সকালে পাঠক তুলনামূলক বেশি। বলতে গেলে সকাল থেকেই মেলা জমে উঠেছে।

টইটম্বুরের বিক্রয়কর্মী সাদিয়া বলেন, আজ সকাল থেকে মেলা জমে উঠেছে, বিক্রিও ভালো হয়েছে। বাংলা প্রকাশের বিক্রয়কর্মী নুরুজ্জামান বলেন, অন্য শুক্রবারগুলোতে সকালে ছোটদের বই বিক্রি বেশি হলেও আজ বড়দের বইয়ের বিক্রিও বেশ ভালো।

গতকাল শুক্রবার অমর একুশে বইমেলার ১৮তম দিনে মেলা চলে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।নতুন বই এসেছে ২২০টি।

আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান: গতকাল বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় 'স্মরণ : গাজীউল হক ও সিকান্‌দার আবু জাফর' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নাসির আহমেদ। আলোচনায় অংশ নেন আমিনুর রহমান সুলতান, আলফ্রেড খোকন এবং তারেক রেজা। সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর।

'লেখক বলছি': 'লেখক বলছি' মঞ্চে নিজেদের বই নিয়ে আলোচনা করেন আবদুস সেলিম এবং বিধান রিবেরু। 'আজকের অনুষ্ঠানে' কবিতা পাঠ করেন কবি মাসুদুজ্জামান এবং আসাদ আহমেদ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন অনন্যা সাহা এবং রত্না সিনহা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল রাখাল কিশোর ঠাকুরের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন 'ত্রিবেণী গণসাংস্কৃতিক সংস্থা' এবং রুবিনা আজাদের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন 'উদয় দিগঙ্গন'-এর পরিবেশনা।

আজকের অনুষ্ঠান: আজ শনিবার অমর একুশে বইমেলার ১৯তম দিনে মেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মেলায় থাকবে শিশুপ্রহর।

বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে রয়েছে 'স্মরণ: কাজী মনজুরে মওলা ও হাবীবুল্লাহ সিরাজী' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়। আলোচনায় অংশ নেবেন মোহাম্মদ সাদিক, আসাদ মান্নান এবং জাহিদুল হক। সভাপতিত্ব করবেন সুব্রত বড়ুয়া। সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।