ঢাকা মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রকাশকরা খুশি ক্রেতা পাঠকের উপস্থিতিতে

প্রকাশকরা খুশি ক্রেতা  পাঠকের উপস্থিতিতে

.

 সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ০০:৪৬

বইমেলায় অনুপম প্রকাশনীর ৬ নম্বর প্যাভিলিয়ন। গতকাল রোববার দুপুরে মনোযোগ দিয়ে সেখানে বই দেখছিলেন নাজমা বেগম। শেষে ‘জহির রায়হান রচনাসমগ্র’ কিনলেন তিনি। নাজমা বলেন, ‘জহির রায়হানের বই আগেও পড়েছি। তাঁর লেখা পছন্দ করবে না, এমন লোক পাওয়া যাবে না বোধ হয়। এবার তাই জহির রায়হানের রচনাসমগ্রই কিনেছি।’

প্রথমা প্রকাশনে কথা হয় সম্পর্কে মামা-ভাগনে আরিফ হাসান ও সোহরাব আসিফের সঙ্গে। দু’জনে মিলে পছন্দ করেন রকিব হাসানের ‘মহাকাশের আতঙ্ক’ বইটি। মামা আরিফ হাসান বলেন, ভাগনেকে সায়েন্স ফিকশন কিনে দেব, বলেছি। এ বিষয়ে রকিব হাসান তো ভালো লেখে। মহাকাশের আতঙ্ক বইটি ইন্টারেস্টিং লেগেছে।

ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডে (ইউপিএল) তাত্ত্বিক বইয়ের সংখ্যাই বেশি। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ নুরুল ইসলামের ‘বাংলাদেশ: জাতি গঠনকালে এক অর্থনীতিবিদের কিছু কথা’ বইয়ের ছবি ফোন থেকে দেখিয়ে কিনলেন বেসরকারি এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি জানান, বইটি কিনবেন বলে ছবি তুলে এনেছেন। আরেক দর্শনার্থী সাখাওয়াত হোসেন মেলায় এসেছিলেন স্ত্রীকে নিয়ে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মহুয়া কাব্যগ্রন্থটি নেবেন কিনা ভাবছিলেন। শেষে স্ত্রীর পছন্দে সমরেশ মজুমদারের সাতকাহন, মহুয়াসহ বেশ কয়েকটি বই তারা কেনেন।

মেরিট ফেয়ার প্রকাশন থেকে এ বছর প্রকাশ হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের ‘মনোযোগ বাজারজাতকরণ’ বইটি। নিজের বই সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটি মূলত মার্কেটিংয়ের পাঠ্যবই হলেও সাধারণ পাঠকেরও কাজে আসবে। আমরা কোনো কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারি না। কেন আমরা মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারছি না, কীভাবে মনোযোগ বৃদ্ধি করা যায়– তা এ বইটিতে লেখা হয়েছে।’

মেলার মাঠে দেখা হয় তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী আয়েশা সুলতানা ও ফাতেমা কবিরের সঙ্গে। আয়েশা জানান, তাঁর পছন্দের তালিকায় আছে গল্প আর উপন্যাসের বই। আনিসুল হকের ‘কখনও আমার মাকে’ বইটি সংগ্রহ করেছেন। এখন স্টল ঘুরে পছন্দের বইয়ের তালিকা করছেন; পরে কিনবেন। 

সাপ্তাহিক ছুটির দুই দিনের পর গতকালই ছিল সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস। এদিন আগের দু’দিনের মতো বিকিকিনি না হলেও মেলা উদ্বোধনের চার দিনে পাঠকের উপস্থিতিতে খুশি প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীরা। ইত্যাদি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী জহুরুল আবেদিন জুয়েল বলেন, গত চার দিনে মেলায় বিক্রি নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট। ছুটির দুই দিনে অনেক পাঠক বই কিনেছেন। গতকাল সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে ভিড় একটু কম থাকলেও অনেকে এসে নতুন বইয়ের খোঁজ করছেন; তালিকা সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন।

কথাপ্রকাশের বিক্রয় কর্মকর্তা জাফরুল ইসলাম জানান, তাদের প্রকাশনী থেকে এ বছর ৭০-৮০টি নতুন বই প্রকাশ হবে। এর মধ্যে মেলায় ৪১টি বই চলে এসেছে। পাঠকের উপস্থিতি ভালো। অনেকেই বই সংগ্রহ করছেন, আবার কেউ তালিকা নিয়ে যাচ্ছেন।

কবি রবীন্দ্র গোপের সঙ্গে কথা হয় বিভাসের স্টলে। এ প্রকাশনী থেকে তাঁর একটি আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘ছাগলের হাসি ও একটি পাউরুটি’ এবং কবিতার বই ‘ইলেক্ট্রার কান্না’ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘মানুষের জীবন কেমন যান্ত্রিক হয়ে গেছে। যদি আর্থিক সচ্ছলতা না থাকে, তবে জীবনযাপনের সঙ্গে জড়িত আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো হারিয়ে যায়। তেমনিভাবে এখন হারাতে বসেছে বইপড়া, লেখালেখি। মানুষের জীবন থেকে যদি বই হারিয়ে যায়, তবে মানুষ আরও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়বে।’

এদিকে গত শনিবার বাতিঘর প্রকাশনী, গাজী প্রকাশনী ও তৃপ্তি প্রকাশনীর বিরুদ্ধে বই বিক্রির নীতিমালা ভঙ্গের প্রমাণ পাওয়ার পর এ বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করছে বইমেলার টাস্কফোর্স কমিটি। কমিটির সদস্য সচিব এস এম জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘আমাদের রিপোর্ট শেষের পথে। কমিটির সভা হবে। তার পর আমরা তিনটি প্রকাশনীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। মেলার মূল পরিচালনা কমিটির কাছে আমাদের প্রতিবেদন পেশ করব।’

গতকাল চতুর্থ দিনে বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ : কাঙাল হরিনাথ মজুমদার’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তপন মজুমদার। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন জাফর ওয়াজেদ ও আমিনুর রহমান সুলতান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মুনতাসীর মামুন। আলোচনার শুরুতে কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের জীবন ও কর্মভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। এ ছাড়া ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন চলচ্চিত্রকার ও লেখক তানভীর মোকাম্মেল, শিশুসাহিত্যিক বেণীমাধব সরকার, গবেষক কাজল রশীদ শাহীন এবং কবি ফারুক আহমেদ।
গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ৬৬টি; যার মধ্যে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার ‘সংস্কৃতি ও সদাচার’ (বাংলা একাডেমি), সুজন বড়ুয়ার ‘মুক্তিযুদ্ধের কিশোর উপন্যাসসমগ্র’ (আগামী), জাহীদ রেজা নূরের ‘৬ দফা থেকে স্বাধিকার’ (কথাপ্রকাশ), সতীশ চন্দ্র রায়ের ‘একান্ত ভাবনা’ (নক্ষত্র), ড. মুহম্মদ এমদাদ হাসনায়েন ও ড. সারিয়া সুলতানার ‘কুষ্টিয়ার লোকজ সংস্কৃতি’ (কণ্ঠধ্বনি প্রকাশন) অন্যতম।

 

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×