ঢাকা রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

আঙুলের স্পর্শে সাহিত্যের স্বাদ

আঙুলের স্পর্শে সাহিত্যের স্বাদ

.

 যোবায়ের আহমদ

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ০০:১৯

রাজধানীর বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী দৃষ্টিজয়ী মোহিনী আক্তার প্রতিবারই অমর একুশে বইমেলায় আসেন। গতকাল শনিবার বিকেলে তাঁকে মেলায় পাওয়া গেল। একটি স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে বইয়ের পাতায় আঙুল ছুঁইয়ে বিড়বিড় করে পড়ছিলেন। কাছে গিয়ে প্রশ্ন করতেই মোহিনী বললেন, ‘কবিতার বই পড়ছি।’ কীভাবে তিনি কবিতা পড়ছেন, তা নিয়ে কৌতূহলী হয়ে উঠতে দেখা গেল সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়া কয়েকজনকে। মোহিনী যে স্টলে ছিলেন, সেটি দৃষ্টিহীনদের জন্য বিশেষভাবে ছাপানো ব্রেইল বই প্রকাশ করে। সেখানে তাদের নতুন বই পড়ার সুযোগও রয়েছে।
চোখে আলো না থাকা পাঠকদের এক যুগ ধরে বইমেলায় এই সুযোগ দিয়ে আসছে স্পর্শ ফাউন্ডেশন। বইমেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বের হওয়ার ফটকের পাশেই স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনীর স্টল। গতকাল মেলার ১৭তম দিনে ওই স্টলে দেখা যায়, বইয়ের পৃষ্ঠার ঘর আকৃতির সংকেতগুলোতে হাত দিয়ে স্পর্শ করে অনর্গল পড়ে যাচ্ছেন পাঠক। তাদের পড়ার দৃশ্য মুগ্ধ হয়ে দেখছেন দর্শনার্থীরা। দৃষ্টিজয়ী পাঠকরা জানান, বইমেলায় শুধু একটি স্টলই নয়, প্রতিটি স্টলে ব্রেইল বই থাকা উচিত। ব্রেইল বইয়ের সংখ্যাও বাড়ানো উচিত।  

সাইফুল ইসলাম নামে দৃষ্টিজয়ী এক শিক্ষার্থী বলেন, রাজনীতি ও ইতিহাসের বই পড়তে তাঁর ভালো লাগে। তবে ব্রেইলে এ ধরনের বইয়ের সংখ্যা খুবই কম। 
দৃষ্টিজয়ীদের বই পড়ার পরিসর বিস্তৃত ও সহজ করার পরিকল্পনা নিয়ে ২০০৮ সালে যাত্রা শুরু করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্পর্শ ব্রেইল ফাউন্ডেশন। ২০০৯ সালে ‘স্পর্শ ব্রেইল কর্নার’ প্রতিষ্ঠার পরের বছর বইমেলায় অংশগ্রহণের পর কিছুটা সাড়া মেলে। ওই বছর তারা প্রথম একটি ছড়ার বই ব্রেইল পদ্ধতিতে প্রকাশ করে। বাংলায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য প্রকাশিত প্রথম ব্রেইল বই ‘ছড়ার তালে মনটা দোলে’। বইটির লেখক ও প্রকাশক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্পর্শ ব্রেইল কর্নারের প্রতিষ্ঠাতা নাজিয়া জাবীন। 

স্পর্শের স্টলের তত্ত্বাবধায়ক নন্দিতা সাহা বলেন, ২০১২ সাল থেকে বইমেলায় নিয়মিত স্টল দিচ্ছেন তারা। ২০২৩ সাল পর্যন্ত মোট ব্রেইল বই এসেছে ১১৯টি। এ বছর এসেছে ২৯টি বই। দৃষ্টিজয়ীরা অনেক ধরনের বই পড়তে পছন্দ করেন। কিন্তু নানা জটিলতায় ব্রেইল আকারে সেসব বই প্রকাশ করা যায় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কপিরাইটের কারণে অনেক প্রকাশনী অনুমতি দেয় না। 
স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনার প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি নাজিয়া জাবীন বলেন, দৃষ্টিজয়ীরা শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যে আটকে থাকতে চান না। তাঁরা বিভিন্ন ধরনের বই পড়তে চান। কিন্তু দুর্ভাগ্য, তাদের মনের জানালা খুলে দেওয়ার জন্য এই চাহিদা মেটানোর ন্যূনতম উদ্যোগ নেই।
 
শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতা
গতকাল সকাল ১০টায় বইমেলার মূলমঞ্চে শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। ক-শাখায় প্রথম হয়েছে নীলান্তী নীলাম্বরী তিতির, দ্বিতীয় রোদসী আদৃতা এবং তৃতীয় নৈঋতা ভৌমিক। খ-শাখায় প্রথম হয়েছে তানজিম বিন তাজ প্রত্যয়, দ্বিতীয় সুরাইয়া আক্তার এবং তৃতীয় রোদসী নূর সিদ্দিকী। গ-শাখায় প্রথম হয়েছে কে এম মুনিফ ফারহান দীপ্ত, দ্বিতীয় নবজিৎ সাহা এবং তৃতীয় সরকার একান্ত ঐতিহ্য। 
 
মূল মঞ্চের আয়োজন 

বিকেলে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ: শহীদ সাবের’ এবং ‘স্মরণ: পান্না কায়সার’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে মনির ইউসুফ এবং মামুন সিদ্দিকী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন গিয়াস উদ্দিন, রতন সিদ্দিকী এবং শমী কায়সার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রামেন্দু মজুমদার। 
‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি শান্তা মারিয়া, কথাসাহিত্যিক এশরার লতিফ, শিশুসাহিত্যিক আহসান মালেক এবং প্রাবন্ধিক সুমন শামস। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মিনার মনসুর, হাফিজ রশিদ খান ও আয়শা ঝর্না। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী গোলাম সারোয়ার এবং রফিকুল ইসলাম। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পুঁথি পাঠ করেন কাব্য কামরুল। 
এ ছাড়া ছিল আবিদা রহমান সেতুর পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বহ্নিশিখা’ এবং মঙ্গলচন্দ্র মণ্ডলের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন বুলবুল ললিতকলা একাডেমির পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী জীবন চৌধুরী, মীম বাউল, ঝর্ণা বিশ্বাস, ফারুক হোসেন, নাফিসা ইসলাম ফাইজা, অমিয় বাউল এবং তামান্না নিগার তুলি। 

বই সংলাপ ও রিকশাচিত্র মঞ্চের উদ্বোধন
অমর একুশে বইমেলা আয়োজনের অংশ হিসেবে গতকাল প্রথমবারের মতো সংযোজিত ‘বই-সংলাপ ও রিকশাচিত্র প্রদর্শন মঞ্চ’ উদ্বোধন করা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের লেকসংলগ্ন মঞ্চে এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান মঞ্চটি উদ্বোধন করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা। আজ রোববার থেকে এই মঞ্চে প্রতিদিন রিকশাচিত্র প্রদর্শনের পাশাপাশি মেলায় প্রকাশিত মানসম্পন্ন নির্বাচিত বই নিয়ে আলোচনা হবে। অনুষ্ঠানে প্রকাশকরা বইমেলার বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে নিয়মিত আলোচনায় অংশ নেবেন। 

‘আমার ভাষায় গ্রাফিক নভেল’
দেশের শিশু-কিশোরদের মাঝে প্রথমবারের মতো স্থানীয়ভাবে গ্রাফিক নভেল নিয়ে আসে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)। সেটাও বাংলা ভাষায়। এবার ‘আমার ভাষায় গ্রাফিক নভেল’ নিয়ে বইমেলা আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি। গতকাল সিআরআইর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে অনুষ্ঠানটি লাইভ সম্প্রচার হয়। বাংলা একাডেমির ভাষাশহিদ মুক্তমঞ্চে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উন্মাদ ম্যাগাজিনের সম্পাদক আহসান হাবীব, ‘হাসিনা: এ ডটারস টেল’ ডকুড্রামার নির্মাতা পিপলু আর খান প্রমুখ।

 

আরও পড়ুন

×