সন্ধ্যা তখনও হয়নি। তার আগেই অমর একুশে বইমেলার বিভিন্ন স্টলে জ্বলে উঠেছে বাতি। আগামী প্রকাশনীর সামনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ভুঁইয়া ইকবালের স্মারকগ্রন্থটি দেখছিলেন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক সুনীল কুমার দে। ভুঁইয়া ইকবাল তাঁর শিক্ষক ছিলেন। গবেষণায় হাতেখড়ি তাঁর কাছ থেকেই। নিজে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সময় মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কয়েকটি বই লিখেছেন। এ বছর মেলায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক তাঁর আরেকটি বই আসছে। মুক্তিযুদ্ধকালে মুক্তাঞ্চল রৌমারী থেকে প্রকাশিত হাতে লেখা সাপ্তাহিক পত্রিকা 'অগ্রদূত'-এর সংকলন।
সুনীল কুমার বলেন, হাতে লেখা পত্রিকা 'অগ্রদূত'-এর মাধ্যমে সে সময় রণাঙ্গনে যেত গোপন বার্তা। একাত্তরে ১৫টি সংখ্যা প্রকাশ হওয়ার পর পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। রংপুরের লোক গবেষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কারও বাড়ি বা শখের জাদুঘরে ঠাঁই পেয়েছিল এই পত্রিকা। সেই পত্রিকার লেখাগুলোর সংকলন বই আকারে প্রকাশ করছেন তিনি। বইটি আনবে পাঠক সমাবেশ।

শুধু সুনীল কুমার দে নন; বইমেলা দুপুরের চেয়ে প্রতিদিনই জমে ওঠে সন্ধ্যার পর। বিকেল থেকে লোক আসা শুরু হলেও সন্ধ্যার পর লেখক, পাঠকদের ভিড় থাকে সবচেয়ে বেশি। কথাপ্রকাশের ম্যানেজার জাফিরুল হক জানান, মেলার প্রথম দিন থেকেই পাঠকের উপস্থিতি ভালো। ছুটির দুই দিনের পরে মাঝখানে দুই দিন কিছুটা ভিড় কম ছিল। তবে প্রতিদিন সন্ধ্যার পরে অনেক পাঠক আসেন। তখন বিক্রিও ভালো হয়।
অনিন্দ্য প্রকাশের প্যাভিলিয়নে কথা হয় বাংলা একাডেমি পুরস্কারজয়ী লেখক মোশতাক আহমেদের সঙ্গে। এ বছর তাঁর সায়েন্স ফিকশন 'নিতিনা', প্যারাসাইকোলজি উপন্যাস 'স্বপ্ন খুনি', ভৌতিক থ্রিলার 'ছায়া আত্মা' নামে তিনটি বই এনেছে অনিন্দ্য প্রকাশ। তিনি বলেন, মেলায় এ নিয়ে চার দিন এলাম। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, বই বিক্রি প্রথমভাগ থেকেই জমজমাট।

এদিন সন্ধ্যার পর 'যুক্ত' প্রকাশনীর সামনে 'জনগল্প একাত্তর :চতুর্থ খণ্ড' বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন একাত্তরের মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বেণু। তাঁকে ঘিরে ছিলেন তরুণ আর একাত্তরের গল্পের পাঠকরা। মাহমুদুর রহমান বেণু তাঁর জীবন থেকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনান তাঁদের।

মেলার নবম দিনে গতকাল নতুন বই এসেছে ১২৩টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- আবদুল মান্নান সৈয়দের প্রবন্ধ 'বাংলা সাহিত্যে মুসলমান' (অবসর), রফিকুর রশীদের 'শেখ মুজিব শেখ রাসেল ছেলেবেলার গল্প' (আগামী প্রকাশনী), মোনায়েম সরকার সম্পাদিত 'আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী স্মারকগ্রন্থ' (আগামী), ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেনের প্রবন্ধ 'বঙ্গবন্ধু-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও কূটনীতি' (আগামী), আনোয়ারা সৈয়দ হকের 'দেখে এলাম মিশর ও মরক্কো' (ঐতিহ্য) ইত্যাদি।
এদিন বিকেলে মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় 'জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি :কবীর চৌধুরী' এবং জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি :সাংবাদিক-সাহিত্যিক জহুর হোসেন চৌধুরী' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আবদুস সেলিম ও জাহীদ রেজা নূর। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়, খায়রুল আলম সবুজ, মনজুরুল আহসান বুলবুল ও মুস্তাফিজ শফি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শফি আহমেদ। 'লেখক বলছি' অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন মালেক মাহমুদ, সুপা সাদিয়া, খান মুহাম্মদ রুমেল, গিরীশ গৈরিক।

আজ শুক্রবার দশম দিনে মেলা শুরু হবে সকাল ১১টায়; চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। এর মধ্যে ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মেলায় শিশুপ্রহর চলবে। তবে সকাল সাড়ে ৮টায় মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা।