- বইমেলা
- গবেষণায় জালিয়াতি ও নৈতিক দায়বদ্ধতা
গবেষণায় জালিয়াতি ও নৈতিক দায়বদ্ধতা

সমকালে ৩১ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপককে অভিযুক্ত করে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। অথচ এই শিক্ষকেরই একটি ভালো কাজ সামাজিক মাধ্যমে দেখে তার প্রশংসা করে আমি ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলাম! যা হোক, সমকালের খবরে বলা হয়েছে, তিনি একটি জার্নালে যে প্রবন্ধ লিখেছেন, তার ৫৩ শতাংশ অন্যের লেখা থেকে চুরি করে নেওয়া। এ নিয়ে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। একই সঙ্গে জানা গেল, বিষয়টির প্রতি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে যিনি অভিযোগ করেছিলেন, তিনি অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। কিন্তু অভিযুক্ত আর অভিযোগকারী উভয় শিক্ষকই দর্শন বিভাগের; যদিও প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে জার্নাল অব সোশিওলজির একটি সংখ্যায়। এসব বিষয় কি কাকতালীয়, নাকি পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে জনস্বার্থ চিন্তা ও মহৎ উদ্দেশ্য ছাড়াই অভিযোগ আনা হয়েছে? আমরা জানি, পূর্বপরিচয় ও পূর্বশত্রুতা থাকলেই অভিযোগ দুর্বল হয়ে যায় না। অভিযোগের বিষয় যদি সত্য হয় তাহলে অভিযোগকারীর অসৎ উদ্দেশ্য থাকলেও তা ধোপে টিকবে না। অভিযুক্তকেই এখন প্রমাণ করতে হবে– তিনি অন্যের লেখা থেকে তথ্য-উপাত্ত নিয়ে স্বীকৃত পদ্ধতির ভেতরে থেকেই তাঁর লেখার কলেবর বাড়িয়েছিলেন।
অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি– কোনো একজন মানুষকে যেই একদিন সবার সামনে প্রশংসা করলাম, পরদিন দেখা গেল তিনি এমন একটা কাজ করলেন, যা দেখে লজ্জা পেতে হয়। তখন মনে হয়, প্রশংসাটি ফিরিয়ে নিই। কিন্তু কথাটা তো আর বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের রেকর্ড সিস্টেম থেকে রিওয়াইন্ড করে ডিলিট করতে পারি না! বর্তমান ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। মাঝে মাঝে এমন হয়, খুব শখ করে একটি শার্ট কিনে আনলাম, শরীরে ফিট হলো। যারা দেখল তারা বলল, দারুণ হয়েছে! হঠাৎ চোখ পড়ে গেল শার্টের এক জায়গায় স্পষ্ট একটা ছিদ্র, অন্বেষণ ছাড়াই যা দেখা যায়। এ অভিজ্ঞতা আমার জীবনে পিছু ছাড়ল না! যা-ই কিনি না কেন, একটা-না-একটা খুঁত বের হবেই। তাহলে এমনটাই কি হলো সেদিনের ভিডিও ক্লিপ থেকে পাওয়া ভালো খবরটার সঙ্গে। এক মণ দুধের মধ্যে কি একটু গো-চোনা পড়ে গেল?
মাঝে মাঝে ভাবি, ভাবনার সঙ্গে বাস্তবের এক অলৌকিক সংযোগ আছে। মনখানা যে সন্দেহ করে– মঙ্গলের ভেতরে অমঙ্গল কিছু আছে কিনা কে জানে! অমনি হাতেনাতে অমঙ্গল এসে হাজির হয়। মঙ্গল যেন শিশুর হাতের ফোলানো বেলুন। কত সাবধানে রাখে অথচ ফুস করে ফুটো হয়ে যায়! এবার তাই মনে মনে ভেবেছি, ভালো খবর হাতে পেলেই আনন্দে আটখানা হবো না; ভালো করে বাজিয়ে দেখে খুব সাবধানী প্রতিক্রিয়া দেখাব– ঠিক পৃথিবীর নানা দেশের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্রের মতো। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে তাঁদের বলা কথা চিরকালই মধুর শোনায়, কিন্তু উচ্ছ্বাস থাকে না। বলা হয়– সম্পর্ক যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো। তবে এটা রুটিন সম্পর্ক। আগেও যা ছিল, এখনও তাই। ভেবেছি, এখন কাউকে প্রশংসা করতে হলে এভাবেই সতর্ক প্রশংসা করব।
সাবেক সিভিল সার্ভেন্ট, লেখক ও প্রবন্ধকার
মন্তব্য করুন