নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জসীম উদ্দীনের বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও অশোভন আচরণ, স্বেচ্ছাচারিতা, চাকরি দেওয়ার কথা বলে টাকা নেওয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও তাঁকে কৌশলে রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগের পাঁয়তারা চলছে বলে জানা গেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নোবিপ্রবির বিএনপি সমর্থিত রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) জসীম উদ্দীন চার দলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শাখা কর্মকর্তা (সেকশন অফিসার) পদে চাকরিতে যোগদান করেন। সেখানে সোয়া ছয় বছর চাকরি করে ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী রেজিস্ট্রার পদে যোগ দেন। সেখানে তিনি প্রায় দুই বছর চাকরি করেন। সে হিসাবে তাঁর চাকরির অভিজ্ঞতা আট বছর দুই মাসের। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগবিধি অনুযায়ী ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ পেতে হলে অন্তত ১০ বছর চাকরি করার অভিজ্ঞতা থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু এ নিয়ম উপেক্ষা করেই জসীমকে নোবিপ্রবির ডেপুটি রেজিস্ট্রার করা হয়। গত বছর বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক দিদারুল আলম তাঁকে রেজিস্ট্রারের (অতিরিক্ত দায়িত্ব) দায়িত্ব দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ, ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা শাখা) থাকাকালে এবং রেজিস্ট্রারের চেয়ারে বসেও জসীম নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি শুরু করেন। প্রতিনিয়ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে অশোভন ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে আসছেন তিনি। বিভিন্ন সময় অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী তাঁর দ্বারা হেনস্তার শিকার হয়েছেন। এ অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ২০১৬ সালে এক নারীসহ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। তাঁর বিরুদ্ধে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। অবশ্য সেই কমিটির তদন্ত রিপোর্ট রহস্যজনক কারণে আলোর মুখ দেখেনি। অনেকে বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী তাঁর কাছে জিম্মি।

নিয়মানুযায়ী ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদে চাকরি করতে হলে সহকারী রেজিস্ট্রার পদে অন্তত পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা থাকার কথা থাকলেও ১ বছর ১০ মাসের অভিজ্ঞতা নিয়েই তিনি তৎকালীন উপাচার্যকে ম্যানেজ করে ডেপুটি রেজিস্ট্রারের পদ বাগিয়ে নেন। পরে সরকারি নিরীক্ষা প্রতিবেদনে (অডিট আপত্তি) বিষয়টি ধরা পড়ে। ওই প্রতিবেদনে পদাবনতিসহ তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

জসীমের বিরুদ্ধে চাকরি বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। মাইজদী শহরের ব্যবসায়ী আরিফুর রহমান অভিযোগ করে জানান, তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তা পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ২০১৩ সালে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও চাকরি দেননি। তিনি আরও অভিযোগ করেন, তাঁর কাছ থেকে জসিম ২০১৫ সালে নোয়াখালী পৌরসভায় ৭০ লাখ টাকার বিনিময়ে ১৪ শতক জমি কেনার বায়না চুক্তি করেন। প্রথমে তাকে পাঁচ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। কয়েক মাস পর তিনি জমিটি কিনবেন না বলে আরিফকে জানান। এরপর বিভিন্ন প্রকার হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে তাঁর কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা আদায় করেন। জসীমও মাইজদীর সন্তান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির এক নেতা বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও তাঁর কাছে জিম্মি। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জসীম বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছি। কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে। চাকরি বাণিজ্যের বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমি তো নিয়োগ শাখায় কাজ করি না। সুতরাং, চাকরি বাণিজ্য করার প্রশ্নই উঠে না।' জমি কেনার ব্যাপারে বলেন, আরিফুর রহমান টাকা নিয়ে জমি বুঝিয়ে দেননি। পরে পুলিশের সহায়তায় এই টাকা আদায় করা হয়েছে।

উপাচার্য দিদারুল আলম বলেন, এ ব্যাপারে আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। যারা তাঁকে পছন্দ করে না তারাই এসব রটাচ্ছে।