ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫

আগামীতে যারা ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে

‘ডাক্তার হবো এটাই আনন্দের’

এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম তানজিম মুনতাকা সর্বা

‘ডাক্তার হবো এটাই আনন্দের’

.

 শাহীনা নদী

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ২৩:২৬

‘ছোট থেকেই ডাক্তার হবো– এমন একটি বড় স্বপ্ন ছিল। স্বপ্নটা এবার পূরণ করতে পেরেছি। সামনে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। সবে তো শুরু।’ এভাবেই স্বপ্নপূরণ হওয়ার গল্প বলছিলেন তানজিম মুনতাকা সর্বা। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেছেন সর্বা। ১০০ নম্বরের ১ ঘণ্টার এমসিকিউ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সর্বোচ্চ ৯২ দশমিক ৫ নম্বর পেয়ে দেশসেরা হয়েছেন।
ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রহমান ও গৃহিণী জিনিয়া শারমিনের মেয়ে। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়। ২০২১ সালে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করেন। ২০২৩ সালে হলি ক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন। ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান পেয়ে সর্বা বলেন, ‘এ অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। সবকিছু স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। কখনও কল্পনা করিনি এমন কিছু একটা হতে পারে।’ 
তিনি বলেন, ‘মা-বাবা আমাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিয়েছেন। পরীক্ষায় কম নম্বর পেলে আমাকে কখনও বকা দেননি। সবসময় বলেছেন, এক দিন খারাপ হয়েছে– আগামীতে তুমি আরও ভালো করবে। তাদের এই ছোট ছোট কথা আমাকে সামনে এগিয়ে নিতে অনেক সহযোগিতা করেছে। আমার ব্যক্তিগত জীবনে মা-বাবা সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। এমন কোনো বিষয় নেই, যেটা নিয়ে আমি মা-বাবার সহযোগিতা পাইনি। মেডিকেলে ভর্তি প্রস্তুতি নেওয়ার সময় অনেক হতাশায় থাকতাম, কিন্তু তারা এমনভাবে পাশে থাকতেন, তখন ভুলেই যেতাম মন খারাবের কথা। মা-বাবার সহযোগিতা না পেলে কখনোই এ অবস্থায় আসা সম্ভব ছিল না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার সফলতার পেছনে শিক্ষকদের অবদানের কথাও শেষ করা যাবে না। চিকিৎসক হওয়ার জন্য শিক্ষকরাই বেশি উৎসাহ দিতেন। তাদের জন্যই আমি চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। আরেকটা বিষয় হলো, আমাদের আত্মীয়স্বজনের মধ্যে আমি প্রথম চিকিৎসক হতে চলেছি। তার আগে কেউই চিকিৎসক ছিল না। চিকিৎসক হতে চাওয়ার এটাও অন্যতম একটি কারণ।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে মুনতাকা বলেন, ‘এমবিবিএস শেষ হলে সিদ্ধান্ত নেব। কিছুদিন ধরে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হওয়ার ইচ্ছা জেগেছে। যদিও এর আগে অন্য ভাবনা ছিল। তবে সবকিছুই এমবিবিএস শেষ করার পরই চূড়ান্ত করব।’
ভবিষ্যতে যারা চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখছে তাদের সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে অনেকের মনেই চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন বাসা বাঁধে। একজন চিকিৎসকের পক্ষে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সাধ্যমতো সেবা করা যতটা সম্ভব অন্য পেশায় ততটা সম্ভব নয়। ভর্তি পরীক্ষায় সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক হচ্ছে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা। তাই  ভর্তি পরীক্ষার যেসব বিষয়ে দুর্বলতা আছে, সেগুলো বেশি সময় নিয়ে পড়তে হবে। কোয়েশ্চেন অ্যানালাইসিস করার যোগ্যতা বাড়াতে হবে। মূল বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। প্রতিটি বই খুঁটিয়ে পড়তে হবে। আরেকটা বিষয় হলো, পড়াশোনা নিয়মিত করতে হবে। আগের বছরের প্রশ্নগুলোয় যা এসেছে, সেসবের পাশাপাশি অন্য বিষয়েও গুরুত্ব দিতে হবে। একই সঙ্গে একটা সঠিক দিকনির্দেশনাও খুব জরুরি। প্রস্তুতি চলাকালীন বেশি বেশি পরীক্ষা দিতে হবে। আমি অনেক বেশি পরীক্ষা দিয়েছি, যার কারণেই আমি মনে হয় এগিয়ে আছি।’ মেডিকেল পড়াশোনার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় আমার ফেসবুক বন্ধ রেখেছিলাম। পড়ার সময় মোবাইল মায়ের কাছে রেখে আসতাম। পড়া শেষ হলে প্রয়োজন হলে আবার মোবাইল মায়ের কাছ থেকে নিয়ে আসতাম।’
মুনতাকার বাবা আব্দুর রহমান বলেন, ‘মেয়ের এমন সফলতায় আমি খুবই আনন্দিত। তার পড়াশোনা দেখে মনে হতো সে অনেক ভালো করবে। তবে দেশসেরা হয়ে যাবে এটা কল্পনাও করিনি। । ভবিষ্যতে সে যেন একজন মানবিক ডাক্তার হতে পারে।’  মা জিনিয়া শারমিন  বলেন, ‘আমার তো এখনও স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। আমার সন্তান মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে। এটা সত্যিই কল্পনার বাইরে ছিল।’ 
 

আরও পড়ুন

×