
সাইদুর রহমান রিন্টু
বরিশালে ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে পুরোনো এবং সচ্ছল সংগঠন বরিশাল চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রি। ধনী ব্যবসায়ীদের এই সংগঠনটি এখন একটি রুগ্ণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এর নেই কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম। অনেক শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীই জানেন না সমিতির অফিস কোথায়। এমনকি সংগঠনের কোনো সদস্য মারা গেলে তার জন্য দোয়া অনুষ্ঠানও হয় না। ব্যবসায়ীদের কাছে এটি সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টুর পকেট সংগঠন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বরিশালের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ যেসব সংগঠন নিয়ন্ত্রণ করেছেন তার একটি এই সমিতি। তাঁর আশীর্বাদে ব্যবসায়ী রিন্টু ২০১০ সাল থেকে ১৩ বছর ধরে সংগঠটির সভাপতি পদে বহাল আছেন। রোষানলে পড়ার ভয়ে সমিতির সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে যাননি।
রিন্টু ঢাকা-বরিশাল রুটের বিলাসবহুল লঞ্চ সুন্দরবনের স্বত্বাধিকারী। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান। সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিকের আস্থাভাজনদের একজন তিনি। তার আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে বরিশাল- ৫ (মহানগর-সদর) আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠেও নেমেছিলেন তিনি।
সিটি নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত সাদিক বরিশালের রাজনীতিতে একাধিপত্য হারিয়েছেন। এর পর চেম্বার নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন সংগঠটির একাধিক সদস্য। তবে ভবিষ্যৎ ক্ষতির আশঙ্কায় কেউ নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। তাঁরা সমকালকে
বলেছেন, আগের কমিটির সহসভাপতি রিন্টু ২০১০ সালে আকস্মিকভাবে সভাপতি পদে বসেন। এর পর থেকে নিয়ম মাফিক দুই বছর পরপর ২২ সদস্যের ‘নিয়ন্ত্রিত কমিটি’ গঠন করে সভাপতি পদে বহাল
আছেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালে দুই বছর মেয়াদি কমিটি গঠন হয়। পাঁচ বছর ধরে সেই কমিটিই কাজ করছে।
একাধিক ব্যবসায়ী জানান, বরিশাল চেম্বারের সাংগঠনিক কোনো কার্যক্রম নেই। মাসিক সভাও হয় না। তিনজন কর্মচারীর মাধ্যমে সভাপতি সংগঠন পরিচালনা করেন। সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখতে বরিশালে ব্যবসা না থাকা লোকদেরও পরিচালক পদে রাখা হয়েছে। অকার্যকর সংগঠনে পরিণত হওয়ায় এফবিসিসিআইর কোনো কার্যক্রমে বরিশাল চেম্বারকে আমন্ত্রণ জানানো হয় না বলে
জানান ব্যবসায়ীরা। সদস্য সংখ্যা এক সময় ১ হাজার ৪২ জন থাকলেও এখন তা কমে ১২৯ জনে দাঁড়িয়েছে।
সর্বশেষ গঠিত কমিটিতে দেখা গেছে, ১ নম্বর পরিচালক মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। তাঁর নাম সভাপতিরও ওপরে। সাদিকের ‘ক্যাশিয়ার’খ্যাত মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল ১৬ নম্বর পরিচালক। সাদিক আধিপত্য হারানোর পর বিতর্কিত টুটুল বরিশাল থেকে লাপাত্তা।
২০০১-০৫ সাল পর্যন্ত চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ছিলেন বিএনপি নেতা এবায়েদুল হক চাঁন। তিনি সমকালকে বলেন, বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের সোনালি অতীত ছিল। মাওয়া পয়েন্টে পদ্মা সেতু নির্মাণ চেম্বারের আন্দোলনের ফসল। বিভাগের ছয় জেলায় একযোগে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল বরিশাল চেম্বার। সেটি এখন ভূতুড়ে সংগঠনে পরিণত হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন।
চাঁন বলেন, তিনি ও তাঁর পরের সভাপতি শেখ আব্দুর রহিম নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটিতে এসেছিলেন। এর পর কারা কীভাবে এসেছেন, তা জানা নেই। গত কয়েক বছরে চেম্বারের ইফতার-দোয়ার মতো কোনো দাওয়াতও তাঁর কাছে আসেনি।
নগরীর নাজিরপুল এলাকায় চেম্বার অব কমার্সের কার্যালয়ে গত বুধবার দুপুরে গিয়ে দেখা গেছে, সভাপতির কক্ষে কাগজপত্র নিয়ে দাপ্তরিক কাজ করছেন অফিস সচিব ও তাঁর সহকারী। সংগঠনের বিষয়ে তাঁদের কাছে তথ্য চাওয়া হলে সচিব দ্রুত সটকে পড়েন।
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে ঢাকায় অবস্থানরত সিনিয়র সহসভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন মানিক সমকালকে বলেন, অনুষ্ঠানের আয়োজন করলে ১০ সদস্যও পাওয়া যায় না। তিনি দাবি করেন, বৈধভাবে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কেউ নেতৃত্বে আসতে চান না, তাই রিন্টু সভাপতি হয়েছেন।
সভাপতি রিন্টু এ প্রসঙ্গে বলেন, তিনি বৈধভাবেই সভাপতি হয়েছেন। কেউ পদ চায় না, তাই নির্বাচন ছাড়া মনোনীত কমিটি গঠন হয়। তিনি বলেন, বর্তমান কমিটির মেয়াদ ২০২০ সালে শেষ হয়েছে। তবে করোনার কারণে নতুন কমিটি গঠন করা যায়নি। বিষয়টি এফবিসিসিআই নেতারাও জানেন। ডিসেম্বরে নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের জন্য জুনের পর থেকে তিনি কার্যক্রম শুরু করবেন।
মন্তব্য করুন