গতানুগতিক শিক্ষার বাইরে পেশাগত ডিগ্রির চাহিদা ব্যাপক। নিজেকে দক্ষ ও যোগ্য হিসেবে গড়তে প্রফেশনাল ডিগ্রির চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে তেমনি এক পরিচিত প্রফেশনাল ডিগ্রি সিএমএ। যার পুরো নাম কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্স। এই ডিগ্রিটি আন্তর্জাতিক মানের হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। দি ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) থেকে এই ডিগ্রি প্রদান করা হয়। একটি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ও সার্বিক সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জন্য এই সিএমএ কোর্সের বিকল্প নেই। বিশ্ব স্বীকৃত এই পেশাগত ডিগ্রি অর্জন করে দেশ-বিদেশে খুব সহজে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করার সুযোগ থাকে।

বর্তমানে আইসিএমএবিতে ভর্তি হওয়ার জন্য তিনটি এন্ট্রি রুট রয়েছে। ইন্টারমিডিয়েট, গ্র্যাজুয়েশন ও প্রফেশনাল এন্ট্রি রুট। যে কোনো বিভাগ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পর আইসিএমএবিতে ভর্তি হতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে কমপক্ষে জিপিএ ৬.৫০ থাকতে হবে। এ ছাড়া ‘এ’  এবং ‘ও’ লেভেল পড়ে যদি কেউ ভর্তি হতে চায়, তাদেরও সুযোগ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে তাঁর ‘ও’ লেভেলে ৩০ পয়েন্ট থাকতে হবে ৫ সাবজেক্টে এবং ‘এ’ লেভেলে ১২ পয়েন্ট থাকতে হবে ৩ সাবজেক্টে। পয়েন্ট এর হিসাবটা হবে গ্রেড ‘এ’ ১০ পয়েন্ট, গ্রেড ‘ বি’ ৬ পয়েন্ট এবং গ্রেড ‘সি’ ৪ পয়েন্ট। এই রুটে ভর্তি হলে আপনাকে মোট ২০টি বিষয় অধ্যয়ন করতে হবে। গ্র্যাজুয়েশন পাস করার পর ভর্তি হতে চাইলে আপনি সরাসরি ভর্তি হতে পারবেন। সেক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক বিষয়ে গ্র্যাজুয়েটদের ৫০% ওপরে মার্ক থাকলে সর্বোচ্চ তিনটি বিষয়ে এক্সাম্পশন পাওয়ার সুযোগ থাকে। এ ক্ষেত্রে  ১৭টি বিষয় অধ্যয়ন করতে হবে। অন্য কোনো প্রফেশনাল বডির সদস্য হলে সরাসরি ভর্তি হওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে আইসিএমএবি এর শিক্ষা কমিটি প্রতিটি আবেদন আলাদা যাচাই করে এক্সাম্পশন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।

ভর্তি প্রক্রিয়া ও সময়

আইসিএমএবিতে দুটি পদ্ধতিতে ভর্তি হওয়া যায়, করেসপনডেন্স এবং কোচিং পদ্ধতি। জানুয়ারি-জুন এবং জুলাই-ডিসেম্বর এই দুই সেশনে ভর্তি হওয়া যায়। জানুয়ারি-জুন সেশনে এর ভর্তির সময় থাকে মার্চ এর শেষ পর্যন্ত (কোচিং এ জানুয়ারিতেই শেষ হয়ে যায়, করেসপনডেন্স এ সময় থাকে মার্চ এর শেষ পর্যন্ত)। অপরদিকে জুলাই-ডিসেম্বর এর ভর্তির সময় থাকে সেপ্টেম্বর মাস এর শেষ পর্যন্ত (কোচিং এর ভর্তির সময় জুলাইয়ে শেষ হয়ে যায়)। ভর্তির সময় বাড়ানো হলে তা আইসিএমএবির ওয়েবসাইটে নোটিশ করা হয়। সরাসরি আইসিএমএবি এর অফিস বা অনলাইনে আইসিএমবির ওয়েব থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ করা যায়। আবেদনপত্রের সঙ্গে ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, ২ কপি স্ট্যাম্প সাইজের ছবি, সকল একাডেমিক পরীক্ষার সার্টিফিকেট এবং মার্কশিট এর ফটোকপি লাগবে। ভর্তির সময় অবশ্যই মূল মার্কশিট ও সার্টিফিকেট উপস্থাপন করতে হবে। সিএমএ পাস করতে পাঁচটি লেভেল পাড়ি দিতে হয়।
বর্তমান সময়কে ধারণ করে  আইসিএমএবি সরাসরি ও  অনলাইনেও ক্লাসের সুযোগ করে দিয়েছে। কোচিং এবং করেসপনডেন্স উভয়ই পদ্ধতিতে ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস করার সুযোগ পাবেন। যদিও করেসপনডেন্স পদ্ধতিতে ক্লাস করার বাধ্যবাধকতা নেই। তবে কোচিং পদ্ধতিতে ক্লাসে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক আর করেসপনডেন্স অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। আইসিএমএবি বাংলাদেশের প্রফেশনাল অ্যাকাউন্টিং প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রথম ফুল টাইম শিক্ষক নিয়োগ করেছে।

ফলাফল ও মূল্যায়ন

যেহেতু প্রোফেশনাল ডিগ্রি, সেহেতু ফলাফলের নির্দিষ্ট কোনো মার্ক নেই। শিক্ষার্থীদের খাতার মূল্যয়নের পাশাপাশি, প্র্যাকটিক্যাল সে কতটা মূল্যায়িত হয়েছে তার ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়। কোর্সের মেয়াদ আড়াই বছর থাকলেও দক্ষ না হলে মূল্যায়িত হয় না। এতে দীর্ঘ সময় লাগে।  অসংখ্য শিক্ষার্থীর রেকর্ড আছে, যারা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পাস করে বের হয়েছেন এবং কর্মক্ষেত্রে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন। সুতরাং একজন দক্ষ অ্যাকাউন্ট্যান্ট ও ব্যবস্থাপক হতে, সর্ব প্রথম নিজেকে নিজেই মূল্যায়িত করতে হবে এবং সেভাবে নিজের অবস্থান তৈরি করতে হবে।

কর্মক্ষেত্র ও সামাজিক মর্যাদা

সিএমএদের জন্য দেশে বা বিদেশে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্র ছড়িয়ে আছে। সামাজিকভাবে তাঁরা ব্যাপক মর্যাদা পেয়ে থাকেন। সিএমএ পাস করে বেকার থাকার সম্ভাবনা নেই কারণ সময়ের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত প্রফেশনাল এখনও তৈরি হয়নি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বলা যায়, আমাদের সদস্যদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি, অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছলতা এবং জীবন পাল্টে দিয়েছে সিএমএ প্রফেশনাল ডিগ্রি।

পাঠাগার ও বিনোদন

আইসিএমএবির নিজস্ব পাঠাগার সপ্তাহের সাত দিন খোলা থাকে। আইসিএমএবির যে কোনো শিক্ষার্থী লাইব্রেরি কার্ড দিয়ে দেশি-বিদেশি সম্পাদিত বই এবং অন্যান্য রিসোর্স ব্যবহার করতে পারে। সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এই সুবিধা গ্রহণ করা যায়, তবে শুক্রবার খোলা থাকে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, কুমিল্লা এবং যশোরে স্টাডি সেন্টার রয়েছে।

যোগাযোগ
ঢাকা অফিস : আইসিএমএ ভবন, নীলক্ষেত,  ঢাকা।
যোগাযোগ : ০১৮৪৭৩৬০৬১৯-২৩,
www.icmab.org.bd