প্রতিযোগিতামূলক চাকরি
মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতি

কৃষিবিদ এম এ মান্নান
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০
মৌখিক পরীক্ষার নির্দিষ্ট কোনো সিলেবাস নেই। তাই এ পরীক্ষায় কী ধরনের প্রশ্ন করা হবে, তা নির্দিষ্ট করে বলার সুযোগ নেই। দেশে ও দেশের বাইরের খোঁজখবর কতটুকু রাখেন, বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো অনেক ক্ষেত্রেই যাচাই করা হয়ে থাকে। যে পদের জন্য আবেদন করেছেন, সে পদসংশ্লিষ্ট প্রশ্ন হতে পারে। অনার্সে যে বিষয় পড়েছেন, সে বিষয়েও প্রশ্ন হতে পারে। বাংলাদেশের সংবিধান সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে হবে। দখলে রাখতে হবে আন্তর্জাতিক বিষয়ও। নিজ জেলার আয়তন, জনসংখ্যা, শিক্ষার হার, কীসের জন্য বিখ্যাত, বিখ্যাত ব্যক্তি ইত্যাদি বিষয়ে ধারণা রাখতে হবে।
মৌখিক পরীক্ষার জন্য যথাসম্ভব মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। তাই মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করার জন্য ভালো প্রস্তুতি একান্ত প্রয়োজন। শুধু কোনো পরীক্ষার ভাইভার জন্য নয়, যে কোনো ক্ষেত্রে সফল হতে হলে কথা বলার সময় যে তিনটি বিষয়ের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে তা হলো– স্বচ্ছতা, স্পষ্টতা এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। অন্যদিকে ভাইভা দেওয়ার সময় আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে। কোনোভাবেই নার্ভাস হওয়া যাবে না।
দৃষ্টিভঙ্গি বুদ্ধিভিত্তিক এবং প্রাণবন্ত থাকতে হবে। চাকরির মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করার জন্য কিছু বিষয়ে মনোযোগী থাকতে হয়। ভাইভা বোর্ডে কী করা যায়, আর কী করা যায় না– এ ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার। কারণ বিসিএসের মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ চাকরির মৌখিক পরীক্ষায় অনেক নম্বর বরাদ্দ থাকে।
সুতরাং শুধু উত্তর জানলেই হয় না, উত্তর দেওয়ার এবং নিজেকে তুলে ধরার কৌশল জানতে হয়। ভাইভা বোর্ডে কীভাবে নিজেকে উপস্থাপন করবেন এবং কোন পরিস্থিতিতে কী করবেন, এখানে তা নিয়ে আলোচনা করা হলো। মুক্তিযুদ্ধ বিশেষ করে বাংলাদেশের ইতিহাস (’৪৭-’৭১)। সাম্প্রতিক আলোচিত ঘটনা, দেশ ও বিদেশ, এমডিজি, এসডিজি– এগুলোয় বাংলাদেশের অর্জন, নিজ জেলার নামকরণ, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, সরকারের বিভিন্ন নীতি, স্বাস্থ্য খাতে পলিসি, তথ্যপ্রযুক্তি ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। বর্তমানে খেলাধুলা নিয়ে অনেক সময় প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। তাই এ বিষয়গুলো নিয়েও আপডেট থাকতে হবে।
নিজ সম্পর্কে জানা
নিজের নামের অর্থ, নামের সঙ্গে মিল আছে এমন বিখ্যাত ব্যক্তি এবং পরিবার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। আপনার পছন্দের কবি, সাহিত্যিক, সাহিত্য, গান, খেলাধুলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে পারে। এ ক্ষেত্রে আপনার পছন্দের বিষয়গুলো সম্পর্কে আগে থেকেই ভালোভাবে প্রস্তুতি নিলে ভালো করা সম্ভব।
নিজ জেলা ও উপজেলা
আপনার নিজ জেলায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম, মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনার জেলা কত নম্বর সেক্টরে ছিল ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে হবে। এ ছাড়া আপনার জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি সম্পর্কেও জেনে নিতে হবে। আপনার জেলা ও উপজেলার বিখ্যাত নদী, বন্দর, বিখ্যাত স্থান। আপনার জেলার যদি কোনো কবি ও সাহিত্যিক থাকেন, তাদের সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগ : আপনার বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগ সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত শিক্ষক এবং কী জন্য তা বিখ্যাত, এ সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনার বিশ্ববিদ্যালয় ও হলের যদি কোনো অবদান থাকে, সে সম্পর্কেও ধারণা নিতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ : ১৯৪৭ থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সাল পর্যন্ত আলোচিত বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে যারা অসামান্য আবদান রেখেছেন, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বই, উপন্যাস, কবিতা, যেসব বুদ্ধিজীবী, কবি ও সাহিত্যিক মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেন, তাদের এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক, উপন্যাস, গল্পগ্রন্থ এবং বিখ্যাত গান সম্পর্কেও জানা থাকা ভালো।
সংবিধান : সংবিধান প্রণয়নের সঙ্গে কারা জড়িত ছিলেন, খসড়া অবস্থা, উপস্থাপনের তারিখ, গৃহীত হওয়ার তারিখ, স্বাক্ষরকারী, অধ্যাদেশ জারি, কমিটি গঠনের প্রেক্ষাপট। এ ক্ষেত্রে আপনাকে সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো জেনে নিতে হবে। এ ছাড়া আপনার পছন্দের সঙ্গে মিল রেখেও সংবিধানের বিশেষ বিশেষ ধারা সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন।
বাংলাদেশের অর্থনীতি : দেশ পরিচালনার দায়িত্ব যেহেতু আপনাকে দেওয়া হবে, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে জানা আপনার জন্য একান্ত জরুরি। দেশের বাজেট, জিডিপি সম্পর্কে জানতে হবে। এ ক্ষেত্রে আপনাকে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধি সম্পর্কেও বিস্তারিত জানতে হবে। অন্যদিকে বর্তমান সরকার অর্থনৈতিক উন্নয়নে কী কী অবদান রাখছে, সে সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে জানতে হবে।
ভাষা হিসেবে ইংরেজি : অনেক ক্ষেত্রে ভাইভায় ইংরেজিতে প্রশ্ন করা হয়। ইংরেজিতে প্রশ্ন করা হলে আপনাকে অবশ্যই ইংরেজিতে উত্তর দিতে হবে।
জেনে রাখুন : বিখ্যাত কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরসহ প্রথিতযশা কবি-সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিতে হবে।