যাত্রাবাড়ী-কদমতলী
তিন শতাধিক ছিনতাইয়ে জোবায়েরের দল

ইন্দ্রজিৎ সরকার
প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২২ | ২৩:৪২
রিকশা গ্যারেজের মালিক রাশেদুল ইসলাম দুলাল রাতে বাসায় ফিরছিলেন। রাজধানীর কদমতলীর মুরাদপুরে তাঁর পথরোধ করে একদল দুর্বৃত্ত। তারা স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে তিনি বাধা দেন। এ সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে চেইন ও সঙ্গে থাকা টাকা নিয়ে পালায় ছিনতাইকারীরা। সেই সময় প্রাণ সংশয়ে থাকা দুলাল দীর্ঘ চিকিৎসায় সেরে ওঠেন। তবে ছয় মাস আগের ওই ঘটনায় এখনও শরীরে পূর্ণ শক্তি পান না তিনি।
তদন্তসংশ্নিষ্টরা বলছেন, ওই ছিনতাইয়ে জড়িত ছিল জোবায়ের ওরফে রাশেদুল ও তার সহযোগীরা। দুর্ধর্ষ এই দলটি প্রায় পাঁচ বছর ধরে কদমতলী ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় একের পর এক ছিনতাই করে আসছে। এ পর্যন্ত তারা তিন শতাধিক ছিনতাই করেছে। এসব ঘটনায় অন্তত ২০০ জনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করেছে তারা। তাদের মধ্যে তিনজন পরে মারা গেছেন।
যাত্রাবাড়ী থানার পরিদর্শক (অপারেশন) জাকির হোসাইন সমকালকে বলেন, জোবায়ের এই এলাকার চিহ্নিত ছিনতাইকারী। তিনটি হত্যা ও আটটি হত্যাচেষ্টাসহ ছিনতাই-দস্যুতার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ২১টির মতো মামলা আছে। বেশিরভাগ ছিনতাইয়ের ঘটনায় সে টার্গেট ব্যক্তিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। এটা অনেকটা তার নেশার মতো। এর আগেও তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সর্বশেষ দোলাইরপাড় কবরস্থান রোডে আকাশ নামে এক তরুণকে কুপিয়ে হত্যার মামলায় গত ২৩ নভেম্বর তাকে অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেপ্তার করা হয়।
কদমতলী থানার সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা (বর্তমানে কুমিল্লা সিআইডিতে কর্মরত) পরিদর্শক ইমরুল হাসান সমকালকে বলেন, জোবায়ের দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারী। কদমতলী এলাকার বহু ছিনতাইয়ে সে জড়িত। গ্রেপ্তার এড়াতে সে পুলিশের ওপরও হামলা চালিয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, জোবায়েরের ছিনতাই চক্রে সে ছাড়াও ১১ সদস্য রয়েছে। তাদের ৯ জনের নাম জানা গেছে। তারা হলো- রানা, টিপু, সজীব, টাইগার, দানেশ, আকাশ, স্বপন, মেহেদী ও তুষার। এর মধ্যে তুষার দেশের বাইরে পালিয়েছে বলে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে ছিনতাইয়ে জড়িত দলটি কেউ কেউ বিভিন্ন ঘটনায় ধরাও পড়েছে। দলনেতা জোবায়ের গ্রেপ্তার হয়েছে অন্তত সাতবার। তবে জামিনে বেরিয়ে আবারও জড়িয়েছে একই অপরাধে। এই দলটি মূলত যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, শ্যামপুর, দোলাইরপাড়, মুরাদপুর, রসুলপুর ও ডিপটির গলি এলাকায় ছিনতাই করে।
এদিকে, এই ছিনতাইকারীদের ধারালো অস্ত্রের কোপে আহত অনেকেই সুস্থ হলেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। তাদেরই একজন চা দোকানি মো. সেলিম। বছর খানেক আগে তিনি দোকান বন্ধ করে ফেরার পথে ডিপটির গলিতে ছিনতাইয়ের শিকার হন। ওই সময় তাঁকে কুপিয়ে টাকা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় জোবায়েরের দল। সেলিম প্রাণে বেঁচে গেলেও এখনও ভারী কাজ করতে পারেন না। একই অবস্থা ইলেকট্রিক মিস্ত্রি শাহ আলমের। দোলাইরপাড় এলাকায় তিনি মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ে বাধা দিয়েছিলেন। এ কারণে তাঁকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। ভুক্তভোগীরা জানান, ধারালো অস্ত্রের পাশাপাশি এই চক্রের কাছে আগ্নেয়াস্ত্রও থাকে। প্রয়োজনে তারা গুলিও ছোড়ে।
দোলাইরপাড়ে ছুরিকাঘাতে নিহত আকাশের বাবা মো. শামসুদ্দিন জানান, তাঁর ছেলে লেগুনার হেলপার হিসেবে কাজ করত। গত ১৮ এপ্রিল ভোরে দোলাইরপাড় কবরস্থান রোডে তার রক্তাক্ত দেহ পাওয়া যায়। তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে জানা যায়, জোবায়ের ও তার সহযোগীরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
- বিষয় :
- ছিনতাই
- যাত্রাবাড়ী
- কদমতলী